নয়াদিল্লি: বৈজ্ঞানিকদের একটি আন্তর্জাতিক দল বলেছেন যে ৫৫০ মিলিয়ন বছরের পুরনো জীবাশ্মে (fossil) বিশ্বের প্রাচীনতম 'খাবার'-এর (world’s oldest meal) সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন। কীভাবে খুব প্রাচীন প্রাণীরা বেঁচে ছিল সেই বিষয়ে তাঁদের কাছে নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
সন্ধান মিলেছে পৃথিবীর 'প্রাচীনতম খাবার'-এর
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (Australian National University - ANU) গবেষকরা সম্প্রতি এডিয়াকারান পর্বের (Ediacaran period) একটি জীবাশ্ম পরীক্ষা করেছেন যা ২০১৮ সালে রাশিয়ায় পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রাচীনতম কিছু প্রাণকে 'এডিয়াকারান বায়োটা' বলা হয়। এই গোষ্ঠীটি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা জটিল, বহুকোষী জীবের প্রমাণ প্রদান করে।
স্লাগ-সদৃশ কিম্বারেলার (slug-like Kimberella) একটি জীবাশ্ম নমুনাতে, বিজ্ঞানীরা প্রাণীর অন্ত্রে সংরক্ষিত ফাইটোস্টেরলের (phytosterol) অণু সনাক্ত করেছেন। এই রাসায়নিক পদার্থটি, যা উদ্ভিদে পাওয়া যায়, প্রমাণ করে যে ওই প্রাণী সমুদ্রের তলদেশ থেকে শ্যাওলা এবং ব্যাকটেরিয়া খেত। ANU-এর এক অধ্যাপকের কথায়, পুষ্টি সমৃদ্ধ এই শ্যাওলাগুলি কিম্বারেলার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকতে পারে। বিবৃতিতে ওই অধ্যাপক বলেছেন, 'এই শক্তি-সমৃদ্ধ খাদ্য ব্যাখ্যা করতে পারে কেন এডিয়াকারা বায়োটার অঙ্গ এত বড় ছিল। এডিয়াকারান বায়োটার আগে আসা প্রায় সব জীবাশ্ম ছিল এককোষী এবং আকারে আণুবীক্ষণিক।'
ওই জীবাশ্মবিদের বক্তব্য, কিম্বারেলা সম্ভবত এডিয়াকারান যুগের সবচেয়ে উন্নত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম যার একটি মুখ, একটি অন্ত্র এবং আধুনিক প্রাণীদের মতোই খাবার হজম করার ক্ষমতা ছিল। তিনি প্রেস বিবৃতিতে বলেন, 'বিজ্ঞানীরা আগেই জানতেন যে কিম্বারেলা সমুদ্রের তলদেশে ছেয়ে থাকা শৈবালকে খাওয়ার চিহ্ন রেখে গেছে, যা প্রাণীটির অন্ত্রে ছিল। কিন্তু ওদের অন্ত্রে পাওয়া অণু পরীক্ষা করার পরই আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে ওরা আদতে ঠিক কী খেত এবং কীভাবে সেই খাবার হজম করত।'
'ডিকিনসোনিয়া' (Dickinsonia) নামক আরেকটি জীব, পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম, যা মুখ বা অন্ত্র ছাড়াই একটি কম উন্নত প্রাণী ছিল। গবেষকদের মতে, দৈর্ঘ্যে এটি ১.৪ মিটার হত এবং শরীরে তাদের একটি পাঁজরের মতো চিহ্ন থাকে।
২০১৮ সালে রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে শ্বেত সাগরের (White Sea) কাছের পাহাড় থেকে কিম্বারেলা এবং ডিকিনসোনিয়া জীবাশ্ম সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রাচীন জীবের বিবর্তন থেকে আজকের প্রাণীতে পরিবর্তনের গবেষণার ক্ষেত্রে এই তথ্য গবেষক ও বৈজ্ঞানিকদের বেশ সাহায্য করছে।