আমাদের জীবন কেটে যায় অনিশ্চয়তার মধ্যেই, এর মধ্যে শুধু নিজের উপরে বা ঈশ্বরের উপরে ভরসা রেখে এগিয়ে যাওয়া সব সময় খুব সহজ হয় না, এই কারণেই অনেকে জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন। কারণ জ্যোতিষবিদ্যার মাধ্যমে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা তৈরি করা যায় এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।    


জ্যোতিষবিদ্যা – মূলত গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান এবং মানবজীবনের উপরে তার প্রভাব নিয়ে চর্চা করে – হাজার বছর ধরে বিভিন্ন রূপে এই বিদ্যা চর্চা করা হয়েছে এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের সাথে এর যোগ কার্যত অবিচ্ছেদ্য। অনেকে মনে করেন, এটি হল তাঁদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক যুগে সকলে ২৪x৭ ব্যস্ত, এই পরিস্থিতিতে অ্যাপের মাধ্যমে জ্যোতিষ পরিষেবা প্রদান করা হলে তা সকলের কাছে সুবিধাজনক হবে, এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 


অ্যাস্ট্রোটক স্টার্টআপ নিয়ে এসেছে এমনই একটি অ্যাপ, যা গ্রাহকদের দিন বা রাত যে কোনও সময়ে রিয়েল-টাইম জ্যোতিষীদের সাথে পরামর্শ করার সুবিধা প্রদান করে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্য হল, অ্যাস্ট্রোটক-এর প্রতিষ্ঠাতা পুনীত গুপ্ত নিজেই জ্যোতিষ চর্চায় বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু একটি অপ্রত্যাশিত ভবিষ্যদ্বাণী অদ্ভুত ভাবে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই ঘটনার পরে তিনি জ্যোতিষ সম্পর্কে নিজের মত পরিবর্তন করেন এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ২৪x৭ জ্যোতিষ পরিষেবা প্রদান করার জন্য এই অ্যাপ তৈরি করেন।    


একটি ভবিষ্যদ্বাণীর ফলে তৈরি হয়েছে একটি স্টার্টআপ


অ্যাস্ট্রোটক –এর জন্মের কাহিনী শুনলে বেশ চমকে যেতে হয়। ভাবলে অবাক লাগে যে, ২০১৭ সালে তৈরি হওয়া এই পরিষেবা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা পুনীতের এক সহকর্মী। 


২০১৫ সালে পুনীত তখন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটি সংস্থায় কাজ করছিলেন। এই কাজ করতে তিনি বিশেষ পছন্দ করতেন না, কিন্তু তার আগে একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং তার ফলস্বরূপ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন, তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে এই চাকরি করতে হচ্ছিল। বহু বার তিনি এই চাকরি ছাড়ার কথা ভাবলেও, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁকে বাধা দিত। পুনীত এই বিষয়ে তাঁর এক সহকর্মীর সাথে আলোচনা করেছিলেন, এবং সেই সহকর্মী জ্যোতিষচর্চা করতেন। পুনীতের সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেন।     


সেই সময়ে পুনীত জ্যোতিষবিদ্যায় বিশ্বাস করতেন না, তাই সেই প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি, বরং তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, সেই সহকর্মী একজন শিক্ষিত মহিলা হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে এই ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী হতে পারেন। তবে সেই সহকর্মী নিজের বিদ্যা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, এবং পুনীতও একটা সময়ের পরে তাঁর সাহায্য গ্রহণ করতে স্বীকৃত হন।  


পুনীতের সহকর্মী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তিনি চাকরি ছাড়বেন এবং দুইটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রথমটি সাময়িক ভাবে সফল হবে, কিন্তু ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বন্ধ হয়ে যাবে। এর পরে তিনি দ্বিতীয়টি প্রতিষ্ঠা করবেন, এবং সেটি অত্যন্ত সফল হবে।   


২০১৭ সালের মধ্যে সেই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিটি অক্ষর সত্য প্রমাণিত হয়। পুনীত চাকরি ছেড়ে প্রথমে একটি সফল স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চ মাসে তাঁর পার্টনার সরে দাঁড়ালে সেই স্টার্টআপের পতন শুরু হয়। প্রাক্তন সহকর্মীর ভবিষ্যদ্বাণী এভাবে মিলে যেতে দেখে পুনীত জ্যোতিষবিদ্যা সম্পর্কে নিজের মত পরিবর্তন করেন। এরপরে তিনি এমন একটি অ্যাপ তৈরি করার কথা ভাবেন যার মাধ্যমে সকলের কাছে জ্যোতিষ পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারবেন। পুনীতের সহকর্মী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ২০১৮ সাল থেকে সেই অ্যাপ উন্নতি করতে শুরু করবে এবং ২০২৬ সালে সেটি সাফল্যর সকল সীমা অতিক্রম করবে। 


এখনও পর্যন্ত, সেই জ্যোতিষীর প্রতিটি কথা সত্যি হয়েছে। 


পুনীতের কথায়, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত যে, মাত্র ৪ বছরের মধ্যে আমরা ২ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছি।” 


জ্যোতিষীদের ২৪x৭ হেল্পলাইনের সুবিধা


ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয় যে কীভাবে জ্যোতিষবিদ্যার মতো একটি প্রাচীন বিদ্যা আধুনিক, প্রযুক্তি-নির্ভর যুগের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আর এই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন পুনীত গুপ্ত। অ্যাস্ট্রোটক-এর সাফল্যের রহস্য জানাতে গিয়ে পুনীত বলেন, এর মূল রহস্য হল এমন প্রকৃত জ্যোতিষীদের খুঁজে বের করে এই অ্যাপের সাথে যুক্ত করা, যাঁরা গ্রাহকদের সমস্যা বুঝবেন এবং নিজেদের কাজে অত্যন্ত দক্ষ হবেন। তার পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে থাকবে “যে কোনও পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের সর্বসেরা পরিষেবা প্রদান করার মানসিকতা।”


পুনীতের কথায়, “প্রথম দিন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত আমাদের সবচেয়ে কঠিন যে কাজটি করতে হয় সেটি হল, ভালো জ্যোতিষী খুঁজে বের করা। সারা ভারত থেকে আমাদের কাছে হাজার হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে, কিন্তু তাঁদের মধ্যে ৫% এরও কম আবেদনকারী আমাদের ইন্টারভিউতে সফল হতে পারেন। বর্তমানে বাজারে প্রচুর স্বঘোষিত জ্যোতিষী রয়েছেন, তাই কেউ সত্যিই ভালো জ্যোতিষী কি না সেটা বুঝতে অন্তত ৫-৭টা ইন্টারভিউ নিতে হয়।  


এখানে গ্রাহকের সুবিধার কথা ভেবে একাধিক প্রকার পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে চ্যাট এবং কলের সুবিধাও রয়েছে। এছাড়াও এখানে বিয়ের আগে কুন্ডলী-বিচার, কুষ্ঠি তৈরির মতো পরিষেবাও প্রদান করা হয়, যেগুলি যে কোনও সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সময়ে কাজে লাগে।  


তবে শুরুটা এভাবে হয়নি। পুনীতে জানালেন, প্রাথমিক ভাবে এই অ্যাপে জ্যোতিষীদের সাথে ভিডিও মারফত পরামর্শ করার পরিষেবা দেওয়া হত। কিন্তু পরে অধিকাংশ গ্রাহকই অডিও বিকল্প চালু করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, কারণ তাঁরা গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাইতেন এবং পরিচয় গোপন রেখেই পরামর্শ গ্রহণ করার পক্ষপাতী ছিলেন। পুনীত গ্রাহকদের কথা শুনেছিলেন এবং তাঁদের চাহিদা বুঝেছিলেন, যার ফলে তাঁর কোম্পানি দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা ভেবে বর্তমানে এই অ্যাপে চ্যাট পরিষেবাও প্রদান করা হয়। 


পুনীত জানাচ্ছেন, “আমরা কাজ করতে গিয়ে শিখেছি যে, সেরা প্রোডাক্ট তৈরি করার একমাত্র উপায় হল গ্রাহকদের সাথে কথা বলা এবং তাঁদের সেরা পরিষেবা প্রদান করার চেষ্টা করে যাওয়া।” তাঁর কথায়, “আপনি যদি গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান করেন, তাহলে তাঁরা আপনার ব্যবসার সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেবেন।”



অ্যাস্ট্রোটক-এর ভবিষ্যৎ 


পুনীতের দাবি, বর্তমানে অ্যাস্ট্রোটক প্রতিদিন ৩২ লাখ টাকার বেশি আয় করছে এবং এখন এই অ্যাপের সাথে ১৭০০-এর বেশি সংখ্যক জ্যোতিষী যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ১,৪০,০০০ মিনিট গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬৮,০০০ মিনিট তাঁরা প্রেম, সম্পর্ক এবং বিয়ে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বাকি সময়ে চাকরি, কেরিয়ার এবং ব্যবসা সংক্রান্ত প্রশ্নের সমাধান দেন।  


ইতিমধ্যে বিদেশের বাজারেও ভালো ব্যবসা করছেন, জানানোর পাশাপাশি পুনীত জানিয়েছেন যে, এরপরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য দেশেও এই পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। এর জন্য তিনি ২০২২ সাল শেষ হওয়ার মধ্যে আরও অন্তত ১০,০০০ জন জ্যোতিষীকে নিয়োগ করার কথা ভাবছেন। বর্তমানে নতুন গ্রাহকদের free first chat পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা একবার অ্যাস্ট্রোটক -এর পরিষেবা গ্রহণ করেন। পুনীতের কথায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রাহক এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় পরিষেবা গ্রহণ করার জন্য ফিরে আসেন। 


জ্যোতিষীর পরামর্শ গ্রহণের জন্য শুধুমাত্র astrotalk.com–এ যেতে হবে এবং তালিকাভুক্ত পরিষেবাগুলির মধ্যে যে কোনও একটি গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে উপলব্ধ প্রত্যেক জ্যোতিষীর তালিকা পাওয়া যাবে এবং তার পাশাপাশি তাঁদের অভিজ্ঞতা, তাঁরা কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার অধিকারী, কোন ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং তাঁদের পরামর্শ গ্রহণের চার্জ সব কিছু উল্লেখ করা থাকে। 


ডিসক্লেমার : এটি বাণিজ্যিক প্রতিবেদন। এই কন্টেন্টের সত্যতা এবিপি আনন্দ লাইভ খতিয়ে দেখেনি।