কলকাতা: উত্তরপ্রদেশে দেহরাদূন থেকে শুধু ক্রিকেটের টানে বাংলায় পাড়ি। স্থানীয় ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্য়ান্স। ৮ বছর আগে, অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লর আমলে, ইডেনে সেই উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধেই যখন বাংলার হয়ে তাঁর রঞ্জি অভিষেক হয়েছিল, বলা হয়েছিল, তিনি বিশেষ প্রতিভা।
পরের কয়েকবছর শুধুই উত্তরণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল অভিমন্যু ঈশ্বরণের (Abhimanyu Easwaran)। বাংলার হয়ে ধারাবাহিকতা। ভারতীয় এ দলে জায়গা করে নেওয়া। বাংলা দলের নেতৃত্ব।
কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরণের কেরিয়ারের পরের পর্বটা দেখলে মনে পড়ে যাবে যুবরাজ সিংহের সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপনের লাইন। যব তক বল্লা চলেগা, ঠাট হ্যায়।
অভিমন্যুর ব্যাটেও রানের খরা শুরু হয়। নেমে আসে আঁধার। প্রথমে নেতৃত্ব হারাতে হয় অনুষ্টুপ মজুমদারের কাছে। পরে দল থেকেই বাদ পড়েন।
মঙ্গলবার যেন বাইশ গজে বাংলার জার্সিতে পুনর্জন্ম হল অভিমন্যুর। কর্নাটকের বিরুদ্ধে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি ট্রফির মরণ-বাঁচন ম্যাচে জ্বলে উঠল তাঁর ব্যাট। যা কি না আবার এমন একটা ফর্ম্যাট, যেখানে তাঁকে অচল বলে মনে করা হতো। আইপিএলের নিলামে তাঁকে নিয়ে কেউ আগ্রহ দেখিয়েছে বলে শোনা যায় না। সেই অভিমন্যুই মঙ্গলবার চক্রব্যুহ ভেঙে বার করে আনলেন বাংলাকে। প্রবল চাপের মুখে সামলালেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ-কে গৌতম সমৃদ্ধ বোলিং লাইন আপকে। ৪৯ বলে ৫১ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন ছাব্বিশের ডানহাতি ব্যাটার। বাংলাও পৌঁছে গেল শেষ আটে।
ম্যাচের পর গুয়াহাটি থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে অভিমন্যু বললেন, 'আমরা জানতাম আজকের ম্যাচটা নক আউট। হারলে ছিটকে যেতে হবে। জিতলে কোয়ার্টার ফাইনাল। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। ক্রিকেটার হিসাবে এরকম ম্যাচের জন্যই অপেক্ষা করে থাকি। যখন বাংলার দরকার আর সেরকম ম্যাচে পারফর্ম করতে পেরেছি বলে খুব ভাল লাগছে।'
নেতৃত্ব হারানো। দল থেকে বাদ পড়া। এই টুর্নামেন্টেও প্রথম তিন ম্যাচে ডাগ আউটে বসে থাকতে হয়েছিল অভিমন্যুকে। তাঁর পরিবর্তে খেলছিলেন অভিষেক দাস। যিনি আবার স্থানীয় ক্রিকেটের বড় নাম। ছোট মাঠে চার-ছক্কার রোশনাই ছড়ান। কিন্তু বাংলার জার্সিতে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, ব্যাট হাতে কিছু করেছেন বলে অভিযোগ নেই।
অবশেষে সার্ভিসেস ম্যাচে অভিষেকের পরিবর্তে সুযোগ হয় অভিমন্যুর। পরপর দুই ম্যাচে ওপেন করতে নেমে অপরাজিত ইনিংস। নিজেকে প্রমাণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দেখাচ্ছে অভিমন্য়ুকে। নেতৃত্ব হারিয়ে ও পরে বাদ পড়ে কতটা হতাশ ছিলেন? অভিমন্যু বললেন, 'সবটা তো আমার হাতে নয়। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটাই পালন করার চেষ্টা করেছি। হতাশা এসেছে। সেটা স্বাভাবিক। গত মরসুম দলে ছিলাম, একটাও ম্যাচ খেলিনি। তবে হতাশা মনে রাখিনি। নিজের কাজের ওপর মনোনিবেশ করলে সাফল্য় আসবেই। ঠিক করেছিলাম সফল হলে তবেই সেলিব্রেট করব।'
ডানহাতি ওপেনার যোগ করলেন, 'সকলেরই খারাপ সময় আসে। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। শুধু ভাবতাম, সুযোগ এলে সেটা কীভাবে কাজে লাগাব। তৈরি থাকতাম সব সময়। কাদের সঙ্গে খেলা আছে দেখে, সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতাম।'
কর্নাটকের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল কার্যত নক আউট। রান তাড়া করতে নেমে কী ভেবেছিলেন? অভিমন্যু বলছেন, 'ম্যাচের পরিস্থিতি আর পিচ অনুয়ায়ী নিজের পরিকল্পনা তৈরিই ছিল। ক্রিজে গিয়ে সেটাই প্রয়োগ করেছি। এই সময়ে রান দরকার ছিল। মাথায় ছিল আজ দলকে জেতাতে হবে। রান করতে হবে। সেটা করতে পেরে আমি তৃপ্ত।'
মঙ্গলবার রাতেই কলকাতায় ফিরছে বাংলা দল। বুধবার ফের দিল্লির উদ্দেশে রওনা। ১৮ নভেম্বর কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। অভিমন্যু পরের পর্বের মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। মঙ্গলবারই আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ভারতীয় এ দলে সুযোগ পেয়েছেন। যে কারণে নক আউটে সম্ভবত তাঁকে ছাড়াই নামতে হবে বাংলাকে।
দুরন্ত দুই ক্যাচে ঘুরল ম্যাচ, কর্নাটককে ৭ উইকেটে হারিয়ে শেষ আটে বাংলা
খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার নেপথ্যে অভিমন্যু কৃতিত্ব দিচ্ছেন ব্যক্তিগত কোচ অপূর্ব দেশাইকে। 'রান না পেলে স্যারের সঙ্গে কথা বলি। ধ্যান করি। পরিবার সব সময় পাশে থাকে। দল থেকে যখন বাদ পড়েছিলাম, নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম। একা থাকলে চিন্তা বাড়ে। নেতিবাচক হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আড্ডা মারি, প্লে স্টেশন খেলি, ওয়েব সিরিজ দেখি। সেভাবেই চাপ কাটিয়ে পারফর্ম করেছি,' বলছিলেন আত্মবিশ্বাসী অভিমন্যু।