কলকাতা: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই এই গ্রুপকে বলা হচ্ছিল মারণ গ্রুপ। গ্রুপ অফ ডেথ। কারণ, ৬ দলের মধ্যে ছিল মুম্বই, কর্নাটক, গতবারের রানার্স বঢোদরা ও বাংলা। গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ দুই দলের কোয়ার্টার ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করার সম্ভাবনা ছিল।


সেই মারণ গ্রুপেই চমক দিল বাংলা। প্রথমে ক্রুণাল পাণ্ড্যের বঢোদরা, পরে মঙ্গলবার মণীশ পাণ্ডে (Manish Pandey), ময়ঙ্ক অগ্রবাল (Mayank Agarwal), দেবদত্ত পড়িক্কল, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, করুণ নায়ার সমৃদ্ধ প্রবল শক্তিশালী কর্নাটককে হারিয়ে দিল সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দল। ৬ দলের মধ্যে গ্রুপ শীর্ষে থেকে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির (Syed Mushtaq Ali T20) শেষ আটে পৌঁছে গেল বাংলা। কর্নাটককে ৭ উইকেটে হারালেন সুদীপ-ঋদ্ধিমান সাহারা (Wriddhiman Saha)।


যে ম্যাচে বাংলা শিবিরকে চাঙ্গা করে তুলেছিল দুই অনবদ্য ক্যাচ। এবং দুটোই কর্নাটক ইনিংসের প্রথম ওভারে নেওয়া। বাংলার হয়ে নতুন বলে বোলিং শুরু করেছিলেন ডানহাতি পেসার মুকেশ কুমার। তাঁর প্রথম ওভারের তৃতীয় বল ময়ঙ্ক অগ্রবালের ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে উইকেটের পিছন দিকে উড়ে যাচ্ছিল। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ডানদিকে শরীর শূন্যে ভাসিয়ে সেই বল তালুবন্দি করেন উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। উইকেটের পিছনে অসম্ভব সব ক্যাচ নেওয়ার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট মহলে যিনি 'সুপারম্যান' নামেও পরিচিত। সেই ওভারেরই শেষ বলে মুকেশের বলে খোঁচা দেন বাঁহাতি দেবদত্ত। ক্যাচ নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন ঋদ্ধিমান ও প্রথম স্লিপে ফিল্ডিং করা ঋত্বিক রায়চৌধুরী। শরীর শূন্যে ভাসিয়ে ক্যাচটি ধরেন অলরাউন্ডার ঋত্বিকই।


ব্যাটিং ব্যর্থতাই টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের খারাপ ফলের মূল কারণ, মত গাওস্করের


ম্যাচের পর বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ীর গলায় ধরা পড়ল ওই দুই ক্যাচ নিয়ে উচ্ছ্বাস। গুয়াহাটি থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে প্রাক্তন অফস্পিনার বললেন, 'দুটো ক্যাচই অনবদ্য। এরকম ক্যাচ খুব কমই দেখেছি। ওই দুটো ক্যাচ গোটা দলের শরীরী ভাষা পাল্টে দিয়েছিল। আত্মবিশ্বাসে সকলে ফুটছিল। প্রথম ওভারে ওই দুট ক্যাচ আমাদের হাতকে ম্যাচের রাশ তুলে দিয়েছিল।'


টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিলেন কর্নাটকের অধিনায়ক মণীশ পাণ্ডে। তবে প্রথম ওভারেই দুি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যান তাঁরা। যা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। ব্যাট হাতে ব্যর্থ সদ্য আইপিএল খেলে ফেরা ময়ঙ্ক (৪), দেবদত্ত (০)। কর্নাটকের হয়ে যেটুকু লড়াই করার করলেন মণীশ পাণ্ডে (২৭ বলে ৩২ রান) ও করুণ নায়ার (৪৪ বলে ৪৪ রান)। প্রথমে ব্যাট করে কর্নাটক ৮ উইকেটে ১৩৪ রান তোলে। বাংলার বোলারদের মধ্যে মুকেশ ৩টি ও প্রদীপ্ত প্রামাণিক ২টি উইকেট নিয়েছেন। একটি করে উইকেট আকাশ দীপ ও শাহবাজ আমেদের।


জবাবে ব্য়াট করতে নেমে শুরুতেই আউট হয়ে যান সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (৪ রান)। তবে অভিমন্যু ঈশ্বরণ ঝকঝকে হাফসেঞ্চুরি করেন। চাপের মুখে ৪৯ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় (৯ বলে ১৮) ও ঋদ্ধিমান সাহা (২৪ বলে ২৭) ব্যাট হাতে লড়াই করেন। ২৪ বলে ৩৪ রান করে ক্রিজে ছিলেন কাইফ আমেদ।


সৌরাশিস বলছেন, 'এটা সম্পূর্ণ দলগত সাফল্য। সকলে মিলে লড়াই করেছে। মুম্বই ম্য়াচটাও আমরা জিততে পারতাম। অল্পের জন্য তা হাতছাড়া হয়।' যোগ করছেন, 'একেবারে তরুণদের নিয়ে দল গড়া হয়েছে। সকলে চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামছে। সেটাই আমাদের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।'