কলকাতা: মন ভাল নেই শ্রেয়সীর।


স্বামীর জন্মদিন। এই দিনটিতে কোনও বছর রাত ১২টায় অর্ডার দিয়ে হোটেলের রুমে কেক আনিয়ে সেলিব্রেট করেছেন। কোনও বছর হয়তো আবাসনের ছাদেই বন্ধুদের নিয়ে ছোটখাট পার্টি করেছেন। অথচ এবারের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। কেক বা পছন্দের খাওয়া দাওয়া তো দূর অস্ত, সারাদিন কথাই হয়নি সেভাবে। কোনওমতে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাই যেন মনমরা শ্রেয়সী।


আসুন আলাপ করিয়ে দেওয়া যাক, শ্রেয়সী ক্রিকেটার ও বর্তমানে রাজনীতির ময়দানে নাম লেখানো অশোক দিন্দার স্ত্রী। বৃহস্পতিবার ৩৭ পূর্ণ করলেন দিন্দা। যদিও জন্মদিন পালনের সময় কোথায়! তিনি দিনভর ব্যস্ত রইলেন প্রচার-সহ নানা দলীয় কর্মসূচিতে। আর তিন বছরের মেয়ে ত্রিয়াক্ষাকে নিয়ে শ্রেয়সী কাটালেন কলকাতায়। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর রাজনীতির ময়দানে নাম লিখিয়েছেন দিন্দা। ময়না কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী তিনি। প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ময়নাতেই রয়েছেন তিনি। আর শ্রেয়সী মেয়েকে নিয়ে কলকাতায়। বৃহস্পতিবার এবিপি লাইভকে শ্রেয়সী বললেন, 'ওকে তো শুভেচ্ছা জানাতেই পারছিলাম না। ফোনে পাইনি। প্রত্যেকবার রাত ১২টা বাজলেই শুভেচ্ছা জানাই। এবার সেটা হল না। শেষে সকালে ওর সহকারীকে ফোন করে অশোককে ঘুম থেকে তুলিয়ে কথা বলেছি।'


মেয়ে বাবা-অন্ত প্রাণ। বাবার জন্মদিনে সেও যেন কিছুটা একাকী। শ্রেয়সী হাসতে হাসতে বললেন, 'ত্রিয়াক্ষা তো সকাল থেকে কোনও ফোন এলেই পাপা, পাপা হ্যাপি বার্থ ডে বলে চিৎকার জুড়ছে। ওর সবে তিন বছর বয়স। তাও অশোক কিংবা আমি জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীতে কী ফ্লেভারের কেট কাটব, সব ওই বেছে দেয়। ও ভীষণ মিস করছে পাপাকে।'


মাঝে দুদিনের জন্য ময়নায় গিয়েছিলেন শ্রেয়সী। সেটাও নাটকীয়ভাবে। মেয়েকে কলকাতায় রেখে। বলছেন, 'অশোক রাজনৈতিক কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। ওর সঙ্গে প্রায় এক মাস ফোনেও সেভাবে কথা হয়নি। ওর সহকারীর কাছেই হয়তো কিছু খোঁজখবর পাই। গত ১২ বছরে এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি। শুনছি সারাদিনে মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমোচ্ছে। দিনভর ছোটাছুটি করে এত ক্লান্ত থাকছে যে রাতে নাকি খেতে খেতেই ঘুমিয়ে পড়ছে। এরই মাঝে একদিন সকাল ৬টার সময় কলকাতায় গাড়ি পাঠিয়েছিল। ড্রাইভার বলল, অশোক যেতে বলেছে। তড়িঘড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। দুদিন ছিলাম। সেখানেও অশোকের সঙ্গে সেভাবে কথাই হল না। একটা জনসভা ছিল। অশোক এক গাড়িতে গেল, আমি আর এক গাড়িতে। মঞ্চে উঠে সামান্য কিছুক্ষণ দেখলাম। ব্যাস ওইটুকুই।'


'প্রস্তাব ছিল, যাইনি, মানুষের কাজ করার জন্য রাজনীতিতে যোগদান জরুরি নয়'


তবে দিন্দার প্রত্যেক জন্মদিন যে সেলিব্রেট করেছেন, এমন নয়। শ্রেয়সী বললেন, 'ওর খেলা থাকলে সেভাবে সেলিব্রেট করা হতো না। বাড়িতে থাকলে হয়তো হোটেল থেকে কেক অর্ডার করলাম। বাড়িতে ওর পছন্দের খাওয়াদাওয়া হতো। ভাত, আলুপোস্ত, মাছ, মাটন। ও নিজে খুব ভাল মাটন রান্না করে। রাতে হয়তো রেস্তোরাঁয় খেতে যেতাম।'


এ বছর অবশ্য অন্য জগতে ব্যস্ত দিন্দা। নিখুঁত ইয়র্কারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া নয়, তিনি রাজনীতির রান আপ ধরে ছুটছেন দিবারাত্র। বিপক্ষকে গণতান্ত্রিক দ্বৈরথে হারিয়ে বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদলের লক্ষ্য নিয়ে। আর শ্রেয়সী অপক্ষা করছেন। কবে ভোটপর্ব মিটবে। কলকাতায় ফিরবেন দিন্দা। মেয়ে ত্রিয়াক্ষাকে নিয়ে সেদিনই দিন্দার জন্মদিনের বকেয়া উৎসব পালন করবেন শ্রেয়সী।