কলকাতা: দল থেকে বাদ দেওয়ার সময় ক্রিকেটারদের প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI), টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের সংবেদনশীল হওয়া উচিত বলে মনে করেন মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary)। এক সময় ভারতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারের আশঙ্কা, বাদ পড়ার সঠিক কারণ জানতে না পারায় ক্রিকেটারেরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাদের কেরিয়ার।


এ ব্যাপারে মনোজের নিজের অভিজ্ঞতাও খুব একটা সুখকর নয়। এক সময় ইডেনের স্যাঁতস্যাঁতে পিচে তাঁর ব্যাটিং দেখে ভাল লেগে গিয়েছিল স্বয়ং গুরু গ্রেগ চ্যাপেলের। তারপরই জাতীয় দলে সুযোগ। যদিও মনোজকে ভুগিয়েছে চোট-আঘাত। যদিও লড়াই ছাড়েননি। দলে ফিরেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন। ‘পুরস্কার’ হিসাবে তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে!


রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছেন মনোজ। রাজ্যের শাসক দলের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন। পেয়েছেন আরও বড় দায়িত্ব। রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। তবে বাইশ গজে প্রত্যাবর্তন ঘটাচ্ছেন মনোজ। বাংলার হয়ে আসন্ন রঞ্জি ট্রফি খেলবেন। তারই প্রস্তুতিতে মগ্ন রয়েছেন। রবিবার সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের মাঠে প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেললেন মনোজ।


ম্যাচের শেষে এবিপি লাইভকে বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক বললেন, ‘শতরান করে, ম্যাচের সেরা হয়ে জাতীয় দলের প্রথম একাদশ থেকে বাদ গিয়েছি। টানা ১৪ ম্যাচ বাইরে বসতে হয়েছিল। আর সেই ম্যাচগুলো হয়েছিল ৬ মাসের ব্যবধানে। আমার পরিবর্তে যাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তারা তখন কেউই রান করছিল না। অনেক সময় প্র্যাক্টিস সেশনেও ব্যাটিং করতে দেওয়া হতো না ঠিক করে। যখন ব্যাট পেতাম, নেট বোলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়ত। ওদের বয়স কম ছিল। নিজের প্রস্তুতির জন্য ওদের খাটিয়ে নিতে খারাপ লাগত। তাই ভালভাবে ব্যাটিং প্র্যাক্টিসও করতে পারতাম না।’


জাতীয় দলে উপেক্ষিত হওয়ার সেই যন্ত্রণা এখনও কুরে কুরে খায় মনোজকে। বলছেন, 'খারাপ লাগে। আমি মনে করি নিজের সেরা ছন্দে থাকার সময় আমাকে আটকে দেওয়া হয়েছিল, যা আমার কেরিয়ারকেও ধাক্কা দিয়েছিল। কেউ ভাল খেললে তাকে সুযোগ দিতে হয়। বাদ পড়ার পর আবার আমাকে শ্রীলঙ্কায় যখন সুযোগ দেয়, চার উইকেট নিই, ২১ রান করি। শেষ ম্যাচে ৬৫ রান করি। তারপর ফের বাদ পড়ি। টানা সুযোগ পাইনি।'


মনোজ যোগ করছেন, 'এখনকার ক্রিকেটারেরা অনেক বেশি সমর্থন পায়। আমি তা পাইনি। অনেকে আমাকে বলে, ভুলে যা। এখন বয়স বেড়ে গিয়েছে। জীবন অন্য খাতে বয়ে চলেছে। কিন্তু ভুলে যাই কী করে! সবাই চায় দলকে জিতিয়ে নায়ক হতে। আমিও তাই চেয়েছিলাম। হতে পারিনি। ৯ হাজারের ওপর রান। ২৭টি সেঞ্চুরি। পঞ্চাশের ওপর ব্যাটিং গড়। শেষ রঞ্জিতে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছি। ছ’টি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে। তা সত্ত্বেও টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারিনি। আর সেই স্বপ্নপূরণ হবেও না। যখন খেলা শুরু করি, মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম ভারতের হয়ে টেস্ট খেলব। এই আক্ষেপ যাওয়ার নয়।'


জাতীয় দলের হয়ে ১২টি ওয়ান ডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। কিন্তু টেস্ট খেলতে না পারা এখনও কষ্ট দেয় ডানহাতি ব্যাটারকে। 'নিজের পারফরম্যান্স বলি না। তবে মাঝে মধ্যে মনে হয় লোকেদের মনে করাই যে, এই পারফর্ম করে বসে রয়েছি। আক্ষেপ রয়েছে। দুঃখ রয়েছে। পঞ্চাশের ওপর গড় রয়েছে অথচ দেশের হয়ে টেস্ট খেলেনি, এরকম ক্রিকেটার বিশ্বে বড় একটা নেই। এখন সব ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সময় কাটাই,' বলছিলেন মনোজ।


আরও পড়ুন: ভারতীয় দলের ছায়া, তিন ফর্ম্যাটের জন্য দুজন আলাদা অধিনায়ক বাছার পথে সিএবি


নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, 'বাদ দেওয়ার সময় নির্বাচক বা টিম ম্যানেজমেন্টের কেউই কোনওরকম কথা বলেনি। জানায়নি, কেন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কথাবার্তা না বললে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বেশ মনে পড়ছে ইরানি ট্রফির একটা ম্যাচ খেলছিলাম। সেই ম্যাচে অবশিষ্ট ভারতীয় একাদশের হয়ে খেলেছিলাম। মুম্বইয়ের হয়ে সচিন খেলেছিল। আমাদের কোচ ছিলেন বিক্রম রাঠৌর। তিনি নির্বাচকও ছিলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী করলে আরও ভাল হয়। আমি বলেছিলাম, কাউকে বাদ দেওয়া হলে তার সঙ্গে কথা বলুন। কী কারণে খেলছে না বলে দিলে সেই প্লেয়ার নিজের জানপ্রাণ লাগিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করে। কথাবার্তা না বললে সে বেচারা জানতেও পারবে না কেন বাদ পড়ল। সব খারাপ লাগা কেটে যায় তাতে।'


নির্বাচকরা কি শুনছেন?