কলকাতা: বলা হয়, টি-টোয়েন্টি (T-20) ক্রিকেট নাকি ব্যাটারদের খেলা। মাঠে চার-ছক্কার প্রদর্শনী দেখতেই নাকি মাঠে লোক আসে।


টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে যে দর্শনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন অরিত্র চট্টোপাধ্যায় (Aritra Chatterjee)। বাংলার বাঁহাতি স্পিনার শুক্রবার এমন একটি স্পেল করলেন, দেশে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই যে নজির আছে কি না, কেউ বলতে পারছেন না।


টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনও রান না দিয়ে সাত উইকেট! যার মধ্যে রয়েছে একটি হ্যাটট্রিকও।


নয়াদিল্লিতে চলছে অল ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের যে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে ৩৯টি দল। বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছে আরএসবি (রিজিওনাল স্পোর্টস বোর্ড) কলকাতা। শুক্রবার আরএসবি রায়পুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল কলকাতার। খেলা ছিল বিকাশপুরী স্পোর্টস কমপ্লেক্সে, যে মাঠে খেলে বীরেন্দ্র সহবাগের উত্থান।


চার-ছক্কায় বিশ্বের তামাম বোলারদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়া সহবাগের ক্রিকেট আঁতুরঘরেই বল হাতে ভেল্কি দেখালেন বঙ্গ স্পিনার। শুক্রবার অরিত্রর বোলিং পরিসংখ্যান? ২.৪-২-০-৭ ! একটাই স্পেলে বিপক্ষকে ছারখার করে দিলেন।


সামনে থেকে অরিত্রর স্পেল দেখেছেন বাংলার ক্রিকেটার গীতিময় বসু। যিনি কলকাতার দলের অধিনায়কও। দিল্লি থেকে মোবাইল ফোনে এক সময় বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলা উইকিটকিপার গীতিময় এবিপি লাইভকে বললেন, 'টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলাম। অরিত্র কোনও রান খরচ না করে ৭ উইকেট নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হ্যাটট্রিকও রয়েছে। অবিশ্বাস্য বোলিং। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, সে যে ধরনেরই হোক না কেন, কোনও বোলারের এরকম স্পেল রয়েছে বলে মনে হয় না।'


রায়পুর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করতে আসেন অরিত্র। কলকাতা ময়দানে যিনি লুথার নামে পরিচিত। রায়পুর মাত্র ৮.৪ ওভারে ১৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে রান তুলে দেয় কলকাতার দল।


বিরল রেকর্ড গড়ে অরিত্র বলছেন, 'আমি নিজেও অবাক। কেরিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিক করলাম। ম্যাচ চলাকালীন বুঝতেই পারিনি যে শূন্য রানে ৭ উইকেট পেয়েছি। মনে হয় এটা রেকর্ড হল।'


 



তবে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে অরিত্রর। দু’বছর আগে সিএবি-র প্রথম ডিভিশন লিগে টাউন ক্লাবের হয়ে ৩০ রানে ৮ উইকেট পেয়েছিলেন পুলিশ এসি-র বিরুদ্ধে। রায়পুরের বিরুদ্ধে শুক্রবার কৌশল কী ছিল? অরিত্র বলছেন, 'রান আটকে রাখার চেষ্টা করছিলাম। যখন বল করতে এলাম, তখনও পাওয়ার প্লে চলছে। জানতাম, আমার বলে মারার চেষ্টা করবে। বাড়তি কিছু করিনি। লাইন-লেংথে জোর দিয়েছিলাম।'


সাতটি উইকেটের মধ্যে স্টাম্প একটি। তিনটি বোল্ড, তিনটি এলবিডব্লিউ। অরিত্র বলছেন, 'আরেকটা হ্যাটট্রিক করার সুযোগ এসে গিয়েছিল। পরপর দু'বলে দুই উইকেট পেয়েছিলাম। তবে ডাবল হ্যাটট্রিক মিস করেছি।'


৩৩ বছরের অরিত্র স্থানীয় লিগে খেলেন কালীঘাট ক্লাবের হয়ে। শেষ ১০ বছরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাংলার সম্ভাব্য দলে ছিলেন। তবে আক্ষেপ একটাই। বাংলার জার্সিতে অভিষেক হয়নি। অরিত্র বলছেন, 'প্রায় ২৫টি ম্যাচে দলে ছিলাম। গত মরসুমে সীমিত ওভারের দুই ফর্ম্যাটের দলেই ছিলাম। তবে প্রথম একাদশে সুযোগ হয়নি।'


কেরিয়ারের দ্বিতীয়ার্ধে এসে নিজের সামনে কী লক্ষ্য রাখছেন? অরিত্র বলছেন, 'বাংলার হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখি এখনও। নিজের কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় লিগে শেষ ম্যাচে বালিগঞ্জ ইউনাইটেডের হয়ে ৩৬ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছিলাম। বাংলার হয়ে খেলা। বাংলার জার্সি গায়ে তোলার জন্য এখনও লড়ে যাচ্ছি।'