কলকাতা: সালটা ২০০৫। সবে পাকিস্তান থেকে ফিরেছে ভারতীয় দল। আর পাক সফরে লম্বা চুলের এক ক্রিকেটার সকলের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফও যাঁর হেয়ারস্টাইলের প্রশংসা করেছেন।


পাকিস্তানের মাটিতে হইচই ফেলে দেশে ফিরেই ধোনি গিয়েছিলেন হিমাচলপ্রদেশের রোহরু গ্রামে। পঞ্জাব, চণ্ডীগড়ের মতো চার-পাঁচটি দল নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছিল। সেই উপলক্ষেই পাহাড়ি গ্রামে যাওয়া ধোনির। আর প্রিয় নায়ককে দেখতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন দেব পুহার্তা। রোহরু গ্রামের বাসিন্দা দেব ধোনির অন্ধ ভক্ত। প্রিয় তারকার অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে অবশ্য সুখস্মৃতি হয়নি তাঁর। পুলিশের কাছে ধাক্কা খেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। বিষণ্ণ চিত্তে।


অবশেষে অপূর্ণ সেই স্বপ্ন পূরণ হল দেবের। ১৬ বছর পর। শুধু যে তিনি ধোনির অটোগ্রাফ নিলেন তাই নয়, ছবিও তুললেন। পুরো দু'দিন ধরে ধোনির সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেলেন তিনি। খাবার খাইয়ে ক্যাপ্টেন কুলের মনও জিতলেন ভক্ত।


সম্প্রতি স্ত্রী সাক্ষী, কন্যা জীভা ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে হিমাচলপ্রদেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন ধোনি। করোনার ধাক্কায় অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় স্থগিত হয়ে গিয়েছিল আইপিএল। টুর্নামেন্টের বাকি অংশ হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। হাতে এখনও ঢের সময়। তার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ধোনি কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে এলেন পাহাড়ের কোলে। আর সেই সফরে ধোনির দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছিল তাঁর অন্ধ ভক্ত দেবের কাঁধে। কিন্তু কীভাবে?


হিমাচলপ্রদেশের রত্নারিতে মীনাবাগ হোমসে ছিলেন ধোনি। আর দেব কাজ করতেন হোটেলের সিমলা শাখায়। শুধু ধোনিকে দেখার জন্য তিনি রত্নারিতে বদলি হয়ে চলে এসেছিলেন। সোমবার সেখান থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে ধোনির ভক্ত দেব বললেন, '২০০৫ সালে পাকিস্তান সফর থেকে ফিরেই টুর্নামেন্ট খেলতে রোহরুতে আমাদের গ্রামে এসেছিলেন ধোনি। অটোগ্রাফ নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের ভীষণ কড়াকড়ি ছিল। কাছে যেতেই দেয়নি। ভগ্ন হৃদয়ে ফিরে এসেছিলাম।'


অবশেষে তাঁর সামনে ধোনি-দর্শনের সুযোগ আসে আচমকাই। জানতে পারেন, ছুটি কাটাতে রত্নারি যাচ্ছেন ধোনি। দেরি করেননি দেব। হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে সিমলা থেকে রত্নারিতে বদলি নেন। দেব বলছেন, 'ধোনি স্যারের দেখভালের দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। ২০০৫ সালের সেই টুর্নামেন্টের গল্পও হয়েছে। স্যার আমাকে অটোগ্রাফ দেবেন জানানোর পর ভেবেছিলাম একটা টি শার্ট কিনে স্বাক্ষর নেব। কিন্তু দোকানপাট খোলা না থাকায় শেষে আমার মোবাইল ফোনের কভারে ধোনি স্যারের অটোগ্রাফ নিই।'


মাঠের ক্যাপ্টেন কুল মাঠের বাইরেও শান্ত, সংযত, দু'দিন সামনাসামনি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন দেব। বললেন, 'একেবারে মাটির মানুষ। সকলের সঙ্গে মেশেন, কথা বলেন।' যোগ করলেন, 'রত্নারিতে দুদিনের বেশি থাকতে পারেননি। মোট ১২ জন ছিলেন ওঁরা। ৪টি ঘর বুক করেছিলেন। আরও থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্যদের আগাম বুকিং করা ছিল। তাই ইচ্ছে থাকলেও দু'দিনের বেশি থাকা হয়নি।'


স্টুয়ার্ড হিসাবে ওই দুদিনই ধোনির সঙ্গে ছিলেন দেব। রত্নারিতে কী করতেন ধোনি? 'এখানে দোকান-বাজার সেরকম নেই। পাহাড়ি জমিতে অনেক চাষবাস হয়। সেখানে জীভাকে নিয়ে ঘুরেছেন ধোনি স্যার। আমাদের হোটেলে একটি কুকুর আছে। বিশ্ব তার নাম। ধোনি স্যার কুকুর ভালবাসেন। বিশ্বর সঙ্গে খেলা করেছেন,' বললেন হোটেলকর্মী দেব।



আর খাওয়াদাওয়া? দেব বললেন, 'ডোসা, চিকেনের রকমারি ডিশ খেয়েছেন। তবে ধোনি স্যারের সবচেয়ে ভাল লেগেছে সিড্ডু। হিমাচলপ্রদেশের স্থানীয় ডিশ। বিখ্যাত। নোনতা ও মিষ্টি স্বাদের খাবার। ঘি দিয়ে তৈরি হয়। স্যারকে পরিবেশন করেছিলাম। এত ভাল লেগেছিল ধোনি স্যারের যে, বারবার অর্ডার করেছিলেন। ভীষণ খুশি হয়েছিলেন।' ভক্তের গলায় স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাস।