সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কলকাতায় আইপিএল (IPL 2023) পর্ব সবে মিটেছে। শনিবার ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টসের কাছে মাত্র ১ রানে হেরে অভিযান শেষ করেছেন নাইটরা (KKR vs LSG)।
আর সেই ম্যাচের রেশ কাটার আগেই ফের ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ বসছে ক্রিকেটের নন্দনকাননে। এবং সেটাও অভিনবত্বের সঙ্গে। স্থানীয় ক্রিকেটের দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল ইডেনে নৈশালোকে এবং গোলাপি বলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সিএবি। জোড়া ফাইনালের প্রথমটি মেয়র্স কাপের। সোম ও মঙ্গলবার দুদিনের যে ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে রত্নাকর নর্থ পয়েন্ট স্কুল ও নব নালন্দা হাইস্কুল। দুপুর দেড়টায় শুরু হবে ম্যাচ। দ্বিতীয়টি স্থানীয় ক্রিকেটের প্রথম ডিভিশন লিগের ফাইনাল। মুখোমুখি কালীঘাট ও টাউন ক্লাব। ২৫-২৯ মে পাঁচদিনের ফাইনাল ম্যাচ হবে গোলাপি বলে। ফ্লাডলাইটে।
মেয়র্স কাপ স্কুল ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট। স্কুলপড়ুয়াদের প্রতিযোগিতার ফাইনাল নৈশালোকে ও গোলাপি বলে, ভারতীয় ক্রিকেটে এরকম অভিনব ঘটনা দেখা যায়নি। এই উদ্যোগ যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, সিএবি প্রেসিডেন্ট সেই স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'বাচ্চাদের মধ্যে ক্রিকেটের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। একটা ১৪-১৫ বছরের ক্রিকেটার যখন ইডেনে নৈশালোকে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে, তখন তার মধ্যে একটা দারুণ রোমাঞ্চ কাজ করবে। আমরা গত বছর জেলার মহিলাদের অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল করেছিলাম নৈশালোকে। তখনই দেখেছিলাম ক্রিকেটারেরা এই ধরনের ম্যাচ নিয়ে কতটা রোমাঞ্চিত। সৌরভ (গঙ্গোপাধ্যায়) যখন সিএবি প্রেসিডেন্ট ছিল, তখন প্রথম লিগ ফাইনাল আয়োজন করেছিল গোলাপি বলে নৈশালোকে। মোহনবাগান বনাম ভবানীপুরের সেই ম্যাচ নিয়ে খুব চর্চা হয়েছিল। ফের লিগ ফাইনাল হবে গোলাপি বলে ও নৈশালোকে।'
টিভিতে আইপিএল ম্যাচে চোখ রেখেছেন ক্রিকেটারেরাও। ইডেনের ম্যাচ দেখেছে খুদে খেলোয়াড়রা। সেই মাঠেই এবার নৈশালোকে ফাইনাল খেলতে পারবে, উঠতি ক্রিকেটারদের কাছে এটা বাড়তি তাগিদ হবে বলে মনে করেন স্নেহাশিস। বলছেন, '১৯৮০ সালে আমি নিজে ১১ বছর বয়সে যখন বাংলার অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে প্রথমবার ইডেনে খেলেছিলাম, সে যে কী উত্তেজনা কাজ করেছিল, বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি চাই বাংলার সমস্ত উঠতি ক্রিকেটার সেই রোমাঞ্চের স্বাদ পাক। তাতে ক্রিকেটের প্রতি তাদের টান আরও বাড়বে।' সিএবি সচিব নরেশ ওঝা বলছেন, 'ক্রিকেটের মক্কা বলা হয় ইডেনকে। সেখানে খেলার সুযোগ পেয়ে ফাইনালে উঠতি ক্রিকেটারেরা নিজেদের সেরাটা দেবে বলে আশাবাদী আমরা।'
মেয়র্স কাপ ফাইনাল ও লিগ ফাইনাল দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা। আর সেটাও নিখরচায়। ইডেনের বি ব্লক ক্রিকেটভক্তদের জন্য অবারিত দ্বার করে দেওয়া হচ্ছে। কোনও টিকিট ছাড়াই খেলা দেখতে পারবেন সকলে।
একটি নতুন টুর্নামেন্টেও শুরু করতে চলেছে সিএবি। ২০টি দল নিয়ে সিনিয়র মহিলাদের ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট (৪৫ ওভার)। ১৮টি জেলা দলের পাশাপাশি থাকবে কলকাতার ২টি দল। কারা খেলার সুযোগ পাবেন, তা নির্ধারণ করতে প্রাথমিকভাবে ট্রায়ালও সেরে নিয়েছেন মহিলা ক্রিকেটের নির্বাচকেরা। দল তৈরিও কার্যত সম্পন্ন। স্নেহাশিস জানালেন, ৬ বা ৭ জুন থেকে খড়্গপুর ও কল্যাণীতে হবে ম্যাচগুলি।
সিএবি প্রেসিডেন্ট জানালেন, শনিবার কেকেআর বনাম লখনউ ম্যাচের পর ইডেনের কর্পোরেট বক্সের প্রশংসা করে গিয়েছেন এলএসজি-র কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। যে কর্পোরেট বক্সের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়েছে আইপিএলের ঠিক আগে। স্নেহাশিস বলছিলেন, 'কেকেআরের মিস্টার জিজিবয় খুব সাহায্য করেছেন। দু'মাস একসঙ্গে কাজ করেছি। কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরও ইডেনের উইকেট নিয়ে খুশি। কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় ও সকলে মিলে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন।'
সামনে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। তার আগে স্টেডিয়ামের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে ২৫ মে থেকে।
আরও পড়ুন: রিঙ্কুর মরিয়া লড়াই ব্যর্থ, ১ রানে ম্যাচ হেরে প্লে অফের দৌড়ে নক আউট কেকেআর