কলকাতা: মাঠে একসঙ্গে খেলেননি কখনও। তিনি যখন কেরিয়ার শেষে কমেন্ট্রির দুনিয়ায় পা রেখেছেন, তখন নিজের কেরিয়ারের অগ্রগতির সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠছেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাঁকে। ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্তকে তো সবাই চেনেন। কিন্তু ক'জন জানেন, তাঁর অসামান্য গানের গলার কথা? কজনই বা জানেন, তাঁর দুর্দান্ত লেখনীর কথা? গুরুবারের দুুপুর বেলায় মন খারাপ করা সংবাদটা কানে আসতেই যেন পুরনো সময়গুলোকে ফিরে পেতে চাইছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার সুকুমার সমাজপতি। বন্ধুসম অনুজ সুরজিৎ আর নেই! মানতেই পারছেন না। এবিপি লাইভকে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকারে সুকুমার শোনালেন এক অন্য সুরজিতের গল্প, সংস্কৃতিমনষ্ক এক বাঙালি ফুটবলারের গল্প। 


কখন পেলেন খবরটি? সুকুমার বলছেন, ''আমি টিভিতেই দেখতে পেলাম। কোভিডটা সব শেষ করে দিল। সব শেষ করে দিল। আমি শুধু ভাবি যে আমরা এত বছর বয়সেও বেঁচে আছি। আর আমাদের থেকে কত ছোট এই সুরজিৎ, ভোম্বল (সুভাষ ভৌমিক) সব চলে যাচ্ছে। কিছু ভাল লাগে না আর। সময়টা খুব খারাপ।'' প্রশ্ন করার আগেই নিজে থেকেই বলে উঠলেন, ''সুরজিতের সঙ্গে আমি কখনও একসঙ্গে খেলিনি। আমার কেরিয়ার শেষে ওঁর শুরু হয়েছিল। কিন্তু মোহনবাগান মাঠে আমি যখন কমেন্ট্রি করতাম তখন প্রত্যেক ম্যাচেই ওঁর সঙ্গে দেখা হত। মুগ্ধ হয়ে যেতাম ওঁর খেলা দেখে। ম্যাচের শেষে স্নানের আগে ওঁরা যখন বিশ্রাম নিত, তখন প্রায়ই সুরজিতের সঙ্গে দেখা করে কংগ্র্যাচুলেশন জানাতাম।''


শুধু ফুটবলার হিসেবে নন, একজন তবলা বাদক হিসেবেও খ্যাতি ছিল সুরজিৎ সেনগুপ্তর। বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে বেশ কয়েকবার তবলা সঙ্গতও করেছেন। সুকুমার বলছেন, ''ছোট থেকেই ওঁর বাড়িতে একটা গান-বাজনার পরিবেশ ছিল আলাদা রকমের। সুরজিতের গানের গলাটা দারুণ। মাঝে মাঝে শুনিয়েওছে। তবলাও বাজাত দারুণ। ওঁর ছেলে স্মিগ্ধদেব তো গানের লাইনেই চলে গেল পরবর্তীতে। বাবার থেকেই পেয়েছিল এটা। এই যে ওঁকে বলা হয় না যে ময়দানের শিল্পী, একদমই ঠিক। শুধু নিজে গোল করত না, গোল করাতেও ওস্তাদ ছিল। এই শিল্পের মননটা পরবর্তীতে লেখনীর মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছিল ওঁর। আমি যতদূর জানি যে ওঁ নিজেই লিখত। পড়েছি অনেক লেখা। ভাষাজ্ঞান দুর্দান্ত।''


শেষ কবে কথা হয়েছিল? ষাটের দশকের ময়দানের তারকা রাইট উইঙ্গার সুকুমার বলছেন, ''মাস পাঁচেক আগে আমি একটি টেলিভিশন শোয়ে সুরজিতের ছেলের গান শুনেছিলাম। আমি তখনই ফোন করে ওঁকে জানাই যে কী সুন্দর গলা স্নিগ্ধদেবের। আমি জানতাম ওঁ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কিন্তু আশা করেছিলাম যে ফিরে আসবে। কিন্তু তা আর হল না। তরুণ প্রজন্মকে ওঁর আরও অনেক কিছু শেখানোর ছিল। তার আগেই চলে গেল।''