কলকাতা: করোনাভাইরাসের (Coronavirus) করাল থাবা এক এক করে গুণীজনদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সাহিত্য, শিল্প, বিনোদন, সঙ্গীত, ক্রীড়া-সমাজের এমন কোনও ক্ষেত্রই নেই যেখানে করোনার শিকার কেউ হননি। লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay), বাপি লাহিড়ির (Bappi Lahiri) প্রয়াণের শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের ধাক্কা। প্রয়াত প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত (Surajit Sengupta)। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হন সতীর্থ সুভাষ ভৌমিক (Subhash Bhowmick)। এবার সুরজিৎ সেনগুপ্তও ফুটবলপ্রিয় বাঙালিকে শোকের সাগরে ডুবিয়ে বিদায় নিলেন।


বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হন। মাঠে যেভাবে অনায়াসে বিপক্ষের একের পর এক ফুটবলারকে ড্রিবল করে গোল করে আসতেন, সেভাবেই তিনি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও জয় পাবেন বলে আশা করেছিল ময়দান। কিন্তু এই লড়াইয়ে হার মানতে হল শিল্পী ফুটবলারকে। তাঁকে হারিয়ে ভারাক্রান্ত গড়ের মাঠ।


আরও পড়ুন "বিশ্বমানের প্লেয়ার ছিল, ওর মূল্যায়ন হয়নি", বন্ধু সুরজিতের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ প্রসূন


প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্ত, চুনী গোস্বামী আগেই বিদায় নিয়েছেন। এবার পিকে-অমলের দুই ছাত্র সুভাষ-সুরজিৎও চলে গেলেন। সত্তর দশকের ফুটবল নিয়ে বাঙালির যে নস্ট্যালজিয়া, তার নায়করা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। রিক্ত হচ্ছে ময়দান।


সুরজিৎ সেনগুপ্তর সঙ্গে কখনও একই দলে না খেললেও, এই সিনিয়র ফুটবলারকে অনেকবার বিপক্ষ দলে পেয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার অলোক মুখোপাধ্যায়। তিনিও আজ শোকাহত।


এবিপি লাইভকে অলোকবাবু জানালেন, ‘১৯৭৮ সালে আমি যখন ইস্টার্ন রেলে, তখন প্রথমবার বিপক্ষ দলে সুরজিৎদাকে পেয়েছিলাম। ১৯৮১ সালে আমরা যখন মহমেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে কলকাতা লিগ জিতি, তখন উনি মোহনবাগানে। সেবারও প্রতিপক্ষ হিসেবে ওঁকে সামলাতে হয়েছিল। মাঠে কোনওদিন ওঁকে মাথা গরম করতে বা খারাপ কথা বলতে দেখিনি। অত্যন্ত শিক্ষিত, মার্জিত, নম্র ছিলেন। সবসময় জুনিয়রদের পাশে থাকতেন, সাহায্য করতেন। এত বড়মাপের শিল্পী ফুটবলার খুব কমই এসেছেন। এত ভাল টাচ, উইং প্লে খুব কমই দেখা যায়। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনেছি। উনিও অনেক বড় ফুটবলার ছিলেন। কিন্ত সুরজিৎদার খেলা তো দেখেছি, এত বড় ফুটবলার খুব কমই হয়। বিপক্ষ দল যদি ঠিকমতো হোমওয়ার্ক না করে মাঠে নামত, তাহলে উনি একাই শেষ করে দিতে পারতেন। এত বড় ফুটবলারকে আজ আমরা হারালাম। খুব খারাপ লাগছে।’


অলোকবাবু আরও জানালেন, ‘খেলা ছাড়ার পরেও সুরজিৎদার সঙ্গে দেখা হত। আমি যখন কোচ ছিলাম, সাংবাদিক হিসেবে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। করোনা গত দু’বছরে সব লন্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। ভৌমিকদা চলে গেলেন, সুরজিৎদাও চলে গেলেন। কিছু ভাল লাগছে না।’