সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বেঙ্গালুরুতে তাঁর বাড়িতে পারিবারিক অনুষ্ঠান রয়েছে সোমবার। বাড়িতে অতিথি-অভ্যাগতদের ভিড়। তবে অনুষ্ঠানের তাল কেটেছে দুপুরের এক ফোনে। সেই ফোনেই তিনি জানতে পেরেছেন, বিষাণ সিংহ বেদী (Bishan Singh Bedi) আর নেই।
তিনি, এরাপল্লি প্রসন্ন (Erapalli Prasanna)। একটা সময় গোটা বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল ভারতের যে স্পিন চতুর্ভুজ, তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন কর্নাটকের কিংবদন্তি অফস্পিনার। বাকি তিনজন হলেন বাঁহাতি স্পিনার বিষাণ সিংহ বেদী, লেগস্পিনার ভগবৎ চন্দ্রশেখর ও অফস্পিনার শ্রীনিবাস বেঙ্কটরাঘবন। চারজনের মিলিত উইকেট সংখ্যা? ৮৫৩। মিলিতভাবে মাত্র ২৩১ টেস্টে। তাও এমন একটা সময়ে, যখন ক্রিকেট ছিল শীতকালীন বিনোদনের অঙ্গ। শীতের রোদ গায়ে মেখে কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে খেলা দেখতে মাঠ ভরাতেন দর্শকেরা।
বেদী মারা গিয়েছেন, বিশ্বাসই হচ্ছে না প্রসন্নর। এবিপি লাইভকে মোবাইল ফোনে বললেন, 'আমার বাড়িতে একটা পারিবারিক জমায়েত রয়েছে। আর তার মাঝেই দুপুর আড়াইটে নাগাদ আমার এক আত্মীয় ফোন করেছিল। তার কাছেই জানতে পারলাম যে, বিষাণ সিংহ বেদী আর নেই। একটা শব্দই আমার মাথায় আসছে। বিস্মিত। হতবাক। প্রবল আঘাত পেয়েছি। এখনও সেই আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারিনি। জানি না কীভাবে এই শোক সামলে উঠব।'
বেদীর মূল্যায়ণ করবেন কীভাবে? স্পিন চতুর্ভুজের মধ্যে বয়ঃজ্যেষ্ঠ, ৮৩ বছরের প্রসন্ন বললেন, 'ভারতীয় ক্রিকেটের, না, না, একটু শুধরে নেব। বিশ্বের সর্বকালের সেরা স্পিনার বেদী। আমি জানি না আর কী বলব। বাকরুদ্ধ মনে হচ্ছে। আমি প্রার্থনা করব ওর পরিবার ও পরিজনেরা সুস্থ থাকুক। শক্ত থাকুক। আর ওর আত্মা শান্তি পাক।'
বাঁহাতি স্পিনার বেদীকে পরবর্তীকালে আরও ভালভাবে কাজে লাগাতে পারত ভারতীয় ক্রিকেট, মনে করছেন প্রসন্ন। বলছেন, 'ওর ম্যাচ রিডিং ছিল ঈর্ষণীয়। জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছে। একটা সফরে ভারতীয় দলের কোচও ছিল। তবে ওর ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞাকে আরও ভালভাবে ব্যবহার করা যেত।'
আপনাদের স্পিন চতুর্ভুজ নিয়ে এখনও আলোচনা হয়... প্রশ্ন থামিয়ে কিংবদন্তি প্রসন্ন বললেন, 'আমার সঙ্গে বেদী, চন্দ্রশেখর ও বেঙ্কটরাঘবনের চতুর্ভুজকে ভয় পেত না, এমন ব্যাটসম্যান গোটা বিশ্বে ছিল না। সেই চতুর্ভুজ ক্রমশ ছোট হচ্ছে। বেদীর মৃত্যু আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি।' ফোন ছাড়ার আগে বললেন, 'আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তবে গত কয়েক বছর ধরে অসুস্থ ছিল। আমি ভেবেছিলাম ও সুস্থ হয়ে আবার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। কিন্তু সেটা আর হল না। আমি আর কথা বলার অবস্থায় নেই। বেদী শান্তিতে থাকুক।'