কলকাতা: তিনি ভারতের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বকাপজয়ী দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। টুর্নামেন্টে ওভার প্রতি মাত্র ৫.৩৬ রান খরচ করে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট।


সেই মুনাফ পটেল এবার মানবিক উদ্যোগ নিয়ে সকলের মন জিতে নিলেন। গোটা বিশ্ব এবং দেশ যখন অতিমারিতে ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে, তখন প্রায় একশো বাচ্চার দায়িত্ব নিলেন মুনাফ।


২০১৮ সালের নভেম্বরে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ডানহাতি পেসার। সম্প্রতি গুজরাতের ঢঙ্গ জেলার একটি স্কুলের বাচ্চাদের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। এবিপি লাইভকে মোবাইল ফোনে মুনাফ বললেন, 'করোনা অতিমারির কারণে এমনিতে তো স্কুল বন্ধ। এখন পুরোটাই হচ্ছে অনলাইনে। বাচ্চারা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি ও কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢঙ্গ জেলার একটি স্কুলে গিয়েছিলাম। সেদিন স্কুলের পড়ুয়াদের আসতে বলা হয়েছিল। বাচ্চারা বেশিরভাগই খুব অভাবী পরিবারের। ওদের যেমন পড়াশোনার জন্য বই দরকার, তেমনই দরকার পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া। তাই আমরা ওদের বইপত্র কিনে দিয়েছি। সেই সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার দায়িত্বও নিয়েছি।'


লম্বা, পেটানো চেহারা। সঙ্গে বল হাতে আগুনে গতি। মুনাফ পটেলকে এভাবেই মনে রেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। আদর করে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তাঁকে সকলে মুন্নাভাই বলে ডাকেন। পর্দার মুন্নাভাই সার্কিটকে সঙ্গী করে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ক্রিকেটের মুন্নাভাইও কঠিন এই পরিস্থিতিতে বারবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর সার্কিটের মতো তাঁর এই মানবিক উদ্যোগে সামিল হয়েছেন কয়েকজন বন্ধু।


'করোনা অতিমারি গোটা বিশ্বকে অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতির সামনে এনে ফেলেছে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে। তবে আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমার বিশ্বাস, সকলে মিলে উদ্যোগ নিলে অতিমারি পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব,' ফোনে বলছিলেন মুনাফ। যোগ করলেন, 'করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছিল, সেই সময়েও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দুঃস্থ বা কর্মহীনদের মধ্যে সাধ্যমতো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছি। প্রত্যেকে যদি একটু আধটুও কিছু করতে পারি, সমাজ উপকৃত হবে।' মুনাফ আরও বললেন, 'এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। তাই ওদের নিয়ে আপাতত কিছু কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।'


২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্য়াচ ছিল তাঁর কেরিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২০১৬ সালে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে বঢোদরার হয়ে খেলেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। ২০১৭ সালে গুজরাত লায়ন্সের হয়ে আইপিএলে খেলেছিলেন। সব মিলিয়ে দেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট, ৭০টি ওয়ান ডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মুনাফ। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২৫টি উইকেট রয়েছে। ক্রিকেট ছাড়ার পরেও অবশ্য বাইশ গজের খোঁজখবর রাখেন। বিরাট কোহলিদের খেলা দেখেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন। ফোন ছাড়ার আগে মুনাফ বললেন, 'ভারতের পেস বোলিং বিভাগ এখন বিশ্বের অন্য়তম সেরা। নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ হবে না। সকলে দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে পারলে ফাইনালে ভারতই ভাল জায়গায় থাকবে।'