কলকাতা: ক্রিকেট মাঠে যেন তাঁর পুনর্জন্মের সাক্ষী হয়ে রইল ২০২১। ৮ টেস্টে ৫২ উইকেট। চমকে ওঠার মতো স্ট্রাইক রেট। ৪২.১। অর্থাৎ, প্রত্যেক ৪২ বল অন্তর উইকেট পেয়েছেন। যা তাঁর কেরিয়ারের স্ট্রাইক রেটের চেয়েও উজ্জ্বল।


ব্যাটারদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে আর অশ্বিনের (R Ashwin) দাপটে। ঘূর্ণির জালে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন তামিলনাড়ুর অফস্পিনার। কোন মন্ত্রে বদলে গেলেন অশ্বিন? কীভাবে আরও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে তাঁর স্পিনের ছোবল?


'অশ্বিন এখন একজন ধ্রুপদী অফস্পিনারের মতো বল করছে। খুব বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করে না। পরীক্ষানিরীক্ষা কমানো আর প্রথাগত অফস্পিনে জোর দেওয়ার পর ও বল হাতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যেভাবে বলের গ্রিপ আর ক্রিজের কোণগুলো ব্যবহার করছে, এক কথায় অনবদ্য,' এবিপি লাইভকে বলছিলেন সুনীল সুব্রহ্মণ্যম। ছোটবেলা যাঁর কাছে স্পিন বোলিংয়ের তালিম নিয়েছেন অশ্বিন। ফের একবার সিরিজের সেরার শিরোপা উঠেছে ছাত্রের মাথায়। ২ টেস্টে ১৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটে ৭০ রান করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত গুরু। সুব্রহ্মণ্যম বললেন, 'ধ্রুপদী অফস্পিন করেও শুধুমাত্র ক্রিজ ব্যবহার করে, স্টাম্পের গা ঘেঁষে বা স্টাম্পের দূর থেকে বল রিলিজ করে বা গ্রিপের হেরফের করে ব্যাটারদের বোকা বানানো যায়। সেটাই করে দেখিয়েছে অশ্বিন। স্টক বল বেশি করলে ব্যাটারদের সুবিধা হয়ে যায়। সেটা ও হতে দিচ্ছে না।'


কিউয়িরা হারলেও, আজাজকে উপহার ভারতীয় দলের


ছোট থেকে তাঁর কাছেই স্পিনের পাঠ নিয়েছেন অশ্বিন। পরে জাতীয় দলের প্রশাসনিক ম্যানেজার হিসাবে যুক্ত ছিলেন সুনীল। কাছ থেকে অশ্বিনের ওঠাপড়া দেখেছেন। বলছিলেন, 'ও এমনিতেই দক্ষ স্পিনার। তবে আগে প্রচুর ক্যারম বল করত। এখন প্রথামাফিক অফস্পিন বেশি করে। ওর বল বুঝতেই পারে না ব্যাটাররা। একই বল দুরকম আচরণ করতে পারে। এখন লাইন-লেংথ নিয়ে অনেক ধারাবাহিক। তাই আরও বিপজ্জনক লাগছে।'


 





বারবার প্রথম একাদশে পারফর্ম করেছেন। কিন্তু বিদেশে টেস্ট ম্যাচে কৌশলগত কারণে তাঁকে বাইরে রাখা হয়েছে। সুব্রহ্মণ্যম বলছেন, 'বিদেশের মাটিতে অশ্বিন বারবার প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েছে। ও এই পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত। দলের সেরা স্পিনারকে বাইরে রেখে নামাটা ভীষণ কঠিন। কিন্তু পেস বোলিং সহায়ক পিচে অধিনায়কের মাঝে মধ্যে কিছু করার থাকে না। কী করা যাবে। অজিঙ্ক রাহানেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। একমাত্র ঘরের মাঠে সিরিজ হলেই ওর খেলা নিশ্চিত। তবে অশ্বিন দলের সেরা স্পিনার। টেস্ট ক্রিকেটে ওই বিশ্বের সেরা। যখনই সুযোগ পেয়েছে, কাজে লাগিয়েছে।'


দলের প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে অধিনায়কেরও কিছু করার থাকে না, জানিয়েছেন সুনীল। বলছেন, 'আমি নিজে জাতীয় দলের সঙ্গে দু’বছর ছিলাম। প্রত্যেকবারই বাদ দেওয়ার সময় অশ্বিনকে জানানো হয়েছে যে, কেন তাকে খেলানো হচ্ছে না। তাই ভুল বোঝাবুঝির জায়গা রাখা হতো না। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার জন্যও ভুগতে হয়েছে অশ্বিনকে। বিদেশে ভারত একজন স্পিনারকে খেলায়। আর সেই জায়গাটা সাধারণত পায় রবীন্দ্র জাডেজা। বিদেশের মাটিতে ২০১৮ সাল থেকে ভাল খেলেছে জাডেজা। ওর ব্যাটের হাত ভাল। দুর্দান্ত ফিল্ডিংও করে। অশ্বিনের কিছু করার ছিল না। টপ অর্ডার রান না পাওয়ায় অতিরিক্ত ব্যাটারের দিকে ঝোঁকে ভারত। নাহলে অশ্বিনের আরও কিছু সুযোগ প্রাপ্য ছিল।'


তবে বারবার প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়তে হলেও হাল ছাড়েননি অশ্বিন। ইংল্যান্ড সফরে চতুর্থ টেস্টে বাদ পড়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে মাঠে নেমে সিরিজ সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছেন। সুব্রহ্মণ্যম বলছেন, 'অশ্বিন জন্মগত ফাইটার। ও লড়াই ছাড়ে না। প্রত্যেকবার নিজেকে প্রমাণ করে ফিরে এসেছে। চ্যাম্পিয়ন স্পিনার। রেকর্ড ওর হয়ে কথা বলে। ওর স্ট্রাইক রেট দেখুন, কতবার সিরিজের সেরা হয়েছে দেখুন। ওর স্ট্রাইক রেট মুথাইয়া মুরলীধরনের চেয়েও ভাল। অশ্বিন কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে।'


তারকা ছাত্রের কীর্তিতে উচ্ছ্বসিত পর্দার পিছনে থাকা গুরু।