কলকাতা: সেই ৩৭-এর সুনীল ছেত্রীই সাফল্য এনে দিলেন ভারতকে। এশিয়ান কাপ (Asian Cup) ২০২৩-এর চূড়ান্ত বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে ভারত দু’গোলে কম্বোডিয়াকে (Cambodia) হারিয়ে অভিযান শুরু করল। দু’টি গোলই করলেন এ দেশের ফুটবলের সেরা তারকা সুনীল ছেত্রী (Sunil Chetri)। ভারত অধিনায়ক প্রথমে ১৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ও ৬০ মিনিটের মাথায় নিখুঁত হেডে কম্বোডিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন।


এ দিন প্রথম এগারোয় রক্ষণে প্রীতম কোটাল (Pritam Kotal) ও শুভাশিস বোসকে না দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই বেশ হতাশ হন যুবভারতীর দর্শকেরা। সম্ভবত অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিরুদ্ধে খেলা বলেই আকাশ মিশ্র, আনোয়ার আলি, সুরেশ সিং, রোশন সিং, অনিরুদ্ধ থাপাদের সুযোগ দেন কোচ ইগর স্টিমাচ।


শুরু থেকেই যে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবেন, তা আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় দলের কোচ স্টিমাচ। বুধবার ঠিক সেটাই দেখা যায়। বাঁ দিকের উইং দিয়ে লিস্টন কোলাসোই মূলত আক্রমণে উঠছিলেন বারবার। তবে শুরুর দিকে ডান দিক দিয়ে মনবীর সিং, অনিরুদ্ধ থাপারা কমই ওঠেন। কম্বোডিয়াও স্বাভাবিক ভাবেই আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল দিয়ে শুরু করে।


এমনই এক আক্রমণে কোলাসো বাঁ দিক দিয়ে উঠে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে গোলে শট নিতে যাওয়ার সময়ই অবৈধ ভাবে বাধা পান কম্বোডিয়ার ডিফেন্ডার বরিস ককের কাছে। রেফারির চোখ এড়ায়নি সেই ঘটনা এবং অবধারিতভাবে পেনাল্টির বাঁশি বাজান তিনি। ১৩ তম মিনিটে স্পট কিকে জোরালো শটে দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সুনীল ছেত্রী (১-০)।


এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে চাপ আরও বাড়াতে শুরু করে ভারত। শুরুতে মূলত বাঁ দিক দিয়েই আক্রমণ হলেও গোল হওয়ার পরে দুই উইং দিয়েই সমান ভাবে আক্রমণে ওঠা শুরু করে ভারত। আক্রমণের ঝড় তুলে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো কোণঠাসা করে দেয় এই গ্রুপের ফেভারিটরা।


বেশিরভাগ সময়েই খেলা হয় কম্বোডিয়ার পেনাল্টি বক্সের আশে পাশে। তবে কম্বোডিয়ার রক্ষণের তরপরতায় তেমন কোনও সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে নিতে পারেননি কোলাসো, ছেত্রীরা। ৩২ মিনিটের মাথায় ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের মাটি ঘেঁষা শট সোজা গোলকিপার হাল কিমহুইর হাতে চলে যায়।


ডান দিক দিয়ে ওঠা সুরেশের ক্রসে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারলে ৩৭ মিনিটের মাথায় ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যেতেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তিনি তা পারেননি। ৪১ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে উঠে বক্সে ঢুকে গোলে কোণাকুনি শট নেন আকাশ মিশ্র। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলকিপার তা রুখে দেওয়ায় তা বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।


রক্ষণে জমাট বাঁধা কম্বোডিয়ার ফুটবলারদের নিজেদের এলাকায় টেনে আনার জন্য ভারত নিজেদের বক্সের সামনে মাঝে মাঝে বল দেওয়া-নেওয়া করলেও সেই প্রলোভনে পা দেননি সোইউ ভিসালরা। তবে প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে ভারতের পেনাল্টি বক্সের মাথায় যে ফ্রি কিক পায় কম্বোডিয়া, তা থেকে সমতা আনার  সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় তারা। তাদের ফরোয়ার্ড কিও শকফেঙ ওয়ালের ওপর দিয়ে শট নিলেও তা ক্রস বারে লাগার আগে ভারতের গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর হাতে আটকে যায়।


দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অনিরুদ্ধ থাপা ও মনবীর সিংকে বসিয়ে যথাক্রমে সহাল আব্দুল সামাদ ও উদান্ত সিংকে নামান স্টিমাচ। তবে শুরুতেই একটি বিপজ্জনক আক্রমণে ওঠে কম্বোডিয়া এবং গোলে শটও নেয়। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় সে যাত্রা বেঁচে যায় ভারত। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি বাড়ায় তারা।


কিন্তু এর পর থেকেই ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় ভারত। ৫১ মিনিটে ডান দিক থেকে ব্র্যান্ডনের ক্রস সুনীল গোলের সামনে বাঁদিক থেকে হেড করলেও তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এর ন’মিনিট পরে যে সুযোগটি পান সুনীল, তা কাজে লাগাতে অবশ্য বিন্দুমাত্র ভুল করেননি।


বাঁ দিক থেকে ব্র্যান্ডনের ক্রস উড়ে আসে দূরের পোস্টের সামনে থাকা সুনীলের কাছে এবং হেড করে সোজা জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি (২-০)। তাঁকে কেন্ চানসফিক কভার করলেও সুনীলের বুদ্ধির কাছে পরাস্ত হন। ভারত অধিনায়ক কিছুটা পিছিয়ে এসে হেড করেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৮২ নম্বর গোলটি করে ফেললেন তিনি। লিওনেল মেসিকে ছুঁতে আরও চার গোল দরকার তাঁর।                                                                     ------ তথ্য সংগ্রহ আইএসএল মিডিয়া