কলকাতা: একেই তুমুল গরম, তার ওপর বিকেলের গনগনে রোদে মাঠে নামতে হবে। এএফসি কাপ ২০২২-এ গ্রুপ ডি-র প্রথম ম্যাচে দুই ভারতীয় ক্লাবেরই একই অবস্থা। শুধু ভাল পারফরম্যান্স ও পরিকল্পনা দিয়ে ম্যাচ জেতা যাবে না। চাই প্রচুর বাড়তি শক্তি। কারণ, প্রতিপক্ষ শুধু উল্টেদিকের দল নয়, আবহাওয়াও।


বুধবার বিকেলে এই গনগনে আঁচের সঙ্গে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে থাকবে হাজার হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থক। যাদের শব্দব্রহ্মে কান পাতা দায় হতে পারে। এটিকে মোহনবাগান এই নিয়ে আশাবাদী হলেও, এটা ঘটনা যে, কয়েক দিন আগেই প্রতিপক্ষের এই গ্যালারি ভর্তি সমর্থকের চিৎকার সামলেই মহমেডান স্পোর্টিংকে হারিয়ে হিরো আই লিগ খেতাব জিতেছে গোকুলম কেরালা এফসি। সেই ম্যাচও হয়েছিল বিকেলেই। এমনকী দুপুর দুটোতেও আই লিগের ম্যাচ খেলতে হয়েছে কেরালার প্রথম আই লিগজয়ী দলকে। তাই প্রতিকুল আবহাওয়া এবং বিপক্ষের সমর্থকে ভরা গ্যালারি— দুটোই সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই দলের। তাই বুধবার হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্ট ও হিরো আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখিতে কোনও পক্ষের চ্যালেঞ্জই সোজা হবে না।


গতবারও এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের গণ্ডী পেরিয়ে নক আউট পর্বে গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু সেখানে গিয়ে এফসি নসফের কাছে আধ ডজন গোলে হার বোধহয় অনেকেই ভোলেনি। তবে এ বার আর সেই এটিকে মোহনবাগান নেই। অনেক কিছুই পাল্টেছে। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এফসি গোয়াকে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিতে শেখানো কোচ হুয়ান ফেরান্দো যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। হিরো আইএসএলে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েও টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার নজির গড়ার উপাদান জুগিয়েছিলেন যে কোচ, সেই ফেরান্দোর সামনে এখন এএফসি কাপের চ্যালেঞ্জ। তাই শুরু থেকেই সচেতন তিনি।


এপ্রিলে প্রাথমিক পর্বের দু’টি ম্যাচে পরপর জেতার পরে তিন সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে দলটা কতটা প্রস্তুত, সেটাই বোঝা যাবে বুধবার। আরও একটা ব্যাপার অবশ্যই বোঝাই যাবে যে, মানের দিক দিয়ে হিরো আইএসএলের সেমিফাইনালিস্ট এবং হিরো আই লিগের চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে তফাৎ ঠিক কতটা বা আদৌ সে রকম কিছু আছে কি না।


হিরো আইএসএলের সেমিফাইনাল-সহ এএফসি কাপ প্রাথমিক পর্বের দু’টি ম্যাচে জয় মিলিয়ে গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জয় পেয়েছে এটিকে মোহনবাগান। সম্প্রতি প্রস্তুতি ম্যাচে এই যুবভারতীতেই তারা ভারতের সিনিয়র দলকে ২-১-এ হারিয়েছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ছন্দে রয়েছে সবুজ-মেরুন শিবির।


উল্টোদিকে, গোকুলম কেরালা এফসি সদ্য আই লিগ জয় অভিযানে টানা ২১টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল। সারা লিগে একটি মাত্র ম্যাচ হেরেছে তারা। ২০১৯-এর ডুরান্ড কাপের কথা যাদের মনে আছে, তারা নিশ্চয়ই গোকুলম কেরালা এফসি-র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা ভোলেননি। সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ও ফাইনালে মোহনবাগানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। যদিও সে তিন বছর আগের কথা। কিন্তু সাফল্যের সেই সূচনায় যে ছন্দে ছিল দলটি, সেই ছন্দ বজায় রেখেছে তারা। তারাই প্রথম টানা দু’বার আই লিগ খেতাব জয়ী। এমন নজির কেরালার ফুটবলে কেউ কখনও গড়তে পারেনি। তাই লড়াইটা শুধু দুই লিগের দুই হেভিওয়েট দলেরই শুধু নয়, বাংলা ও কেরালার ফুটবলের মধ্যে, যে দ্বৈরথ বহুকাল ধরে চলে আসছে।


কেরালার ফুটবলে এখন সোনার সময় চলছে। হিরো আইএসএলে কেরালা ব্লাস্টার্স রানার্স আপ হওয়ার পরে সন্তোষ ট্রফিতে বাংলাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কেরালা। তার পরে গোকুলম এফসি-র দ্বিতীয় আই লিগ জয়। কেরালার ফুটবলের এই বিজয়রথকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার বড় চ্যালেঞ্জ এখন গোকুলমের সামনে।


অন্য দিকে, গত দু’বারের হিরো আইএসএলেই চ্যাম্পিয়নশিপের দরজা থেকে ফিরে যাওয়া এটিকে মোহনবাগানের সামনে চ্যালেঞ্জটা একটু অন্য রকমের। গতবার যে ভাবে নসফের কাছে হেরে এএফসি কাপ থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল, এ বার সেই হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে। সম্প্রতি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে পারফরম্যান্স দেখিয়ে এসেছে হিরো আইএসএলের আর এক দল মুম্বই সিটি এফসি, যে ভাবে দু’টি ম্যাচ জিতে সাত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দু’নম্বরে থেকে শেষ করতে পেরেছে তারা, এই কীর্তিই এখন যে কোনও ভারতীয় দলের মতো এটিকে মোহনবাগানের কাছেও বড় প্রেরণা।


এ দিনের অন্য ম্যাচে মুখোমুখি হবে গ্রুপের অপর দুই দল বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস ও মলদ্বীপের মাজিয়া এসআর। পরের ম্যাচগুলিতে আরও কতটা প্রতিরোধ সামলাতে হবে দুই ভারতীয় ক্লাবকে, তার আন্দাজ পাওয়া যাবে এই ম্যাচে, যারা শুরু হবে রাত সাড়ে আটটা থেকে।           ----তথ্য সংগ্রহে আইএসএল মিডিয়া