কলকাতা: তার বয়সী বেশিরভাগ খুদেই টিভিতে ছোটা ভীম কিংবা গ্রিজি অ্যান্ড দ্য লেমিংস কার্টুন দেখতে ভালবাসে। বা খেলনাবাটি নিয়ে সময় কাটায়। কিন্তু অনীশ সরকার (Anish Sarkar) অন্যদের চেয়ে আলাদা। বয়স মাত্র ৩ বছর আট মাস ১৯ দিন। ভালবাসা? দাবা। চৌষট্টি খোপের দুনিয়াতেই ডুবে রয়েছে কলকাতার কৈখালির শিশু।


দাবার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ রেটেড দাবাড়ু বাংলার খুদে। জন্ম ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি। অক্টোবর মাসে সারা বাংলা অনূর্ধ্ব ৯ ওপেন দাবায় অংশ নেয়। সর্বোচ্চ সম্ভাব্য ৮ পয়েন্টের মধ্যে ৫.৫ পয়েন্ট পায় অনীশ। দুজন রেটেড দাবাড়ু - আরভ চট্টোপাধ্যায় ও অহিলান বৈশ্যকে হারিয়ে সব মিলিয়ে ২৪তম স্থান পায় সে। বেঙ্গল ব়্যাপিড রেটিং ওপেনে ভারতের এক নম্বর তথা বিশ্বের চার নম্বর দাবাড়ু অর্জুন এরিগাইসির (Arjun Erigaisi) সঙ্গে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার সুযোগও পায় অনীশ। তার এক সপ্তাহ পরে রাজ্য অনূর্ধ্ব ১৩ টুর্নামেন্টে বয়সে আরও বড়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সে। পাঁচজন রেটেড খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলে অনীশ। বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছে, ফিডে রেটিংয়ে ১৫৫৫ পয়েন্ট অর্জন করেছে সে। তেজস তিওয়ারির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে অনীশ। তেজস ৫ বছর বয়সে ফিডে রেটিং পেয়েছিল। সেই ছিল সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসাবে এই কৃতিত্বের মালিক। এখন সেই কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে অনীশ।



অনীশের প্রশিক্ষক দিব্যেন্দু বড়ুয়া সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, 'ওকে দেখে মিত্রাভ গুহর কতা মনে পড়ে যাচ্ছে। মিত্রাভ ২০ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিল। অনীশের প্রতিভা রয়েছে। তবে ওকে অনেক অনেক দূর পথ পেরতে হবে।'


অনীশের বেশ কয়েকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি চেয়ারের ওপর আরও চেয়ার বসিয়ে তার ওপর বসেছে অনীশ। যাতে দাবার বোর্ডের নাগাল পায়। দিব্যেন্দু বড়ুয়া বলেছেন, 'ওকে স্পেশ্যাল গ্রুপে রেখে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রত্যেক দিন ৭-৮ ঘণ্টা অনুশীলন করে।' দিব্যেন্দু ছাড়াও গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়োর বিরুদ্ধেও খেলে প্রস্তুতি নেয় অনীশ।


 




অনীশের বাবা-মা দাবা নিয়ে সেভাবে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনীশের মায়ের কথায়, 'ও একবার দাবা খেলতে বসলে আর উঠতেই চায় না। ওকে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল ও কার্টুন দেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও দাবার ভিডিও দেখে।'


দাবার প্রতি এই তীব্র টান দেখেই ছেলেকে দাবার বোর্ড কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার দম্পতির। তারপরই দিব্য়েন্দু বড়ুয়ার কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি করা। অনীশের মা অবশ্য এখনও প্রচার চান না। জানিয়েছেন, সাধারণভাবেই জীবন কাটাতে চান তাঁরা।




আরও পড়ুন: ব্যাট-প্যাড কেনার টাকা ছিল না বলে হয়ে গেলেন পেসার! অবাক করবে কেকেআর তরুণের কাহিনি



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।