বিজয়ওয়াড়া: তেলঙ্গানার পর এবার পালা অন্ধ্রপ্রদেশের। পুরস্কারের বন্যায় ভাসলেন পি ভি সিন্ধু এবং পি গোপীচাঁদ।

মঙ্গলবার বিশেষ বিমানে করে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সদ্যসমাপ্ত অলিম্পিকে রুপোজয়ী শাটলার এবং তাঁর কোচ তথা প্রাক্তন ব্যাটমিন্টন খেলোয়াড় গোপীচাঁদকে খোলা বাসের ছাদে তুলে সংবর্ধনা দিল অন্ধ্র সরকার।

সিন্ধুকে ৩ কোটি নগদ অর্থ পুরস্কার, নতুন রাজধানী অমরাবতীতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য ৯ হাজার বর্গফুট জায়গা দেওয়ার ঘোষণা করে অন্ধ্রপ্রদেশ।

গতকাল, সিন্ধুর জন্য ৫ কোটি টাকা আর্থিক পুরস্কার, গাচিবোলিতে গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমির কাছে গৃহ নির্মাণের জন্য ৯ হাজার বর্গফুট জায়গা দেওয়ার ঘোষণা করে তেলঙ্গনা সরকার। একইসঙ্গে, কোচের জন্যও এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

এদিন সিন্ধু ও গোপীচাঁদকে সম্বর্ধনা দেন অন্ধ্র মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। রাজ্যের অমরাবতীর মধ্যে প্রস্তাবিত স্পোর্টস সিটিতে একটি ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি গড়ে তোলার জন্য ১৫ একর জমি দেওয়ার ঘোষণা করেন।

গতকালই সিন্ধুকে হায়দরাবাদে সংবর্ধনা দিয়েছিল তেলঙ্গনা সরকার। সেখানে রুপোজয়ী শাটলারকে ‘ভূমিকন্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।  এদিন সেই একই দাবি করতে দেখা গেল অন্ধ্র প্রশাসনকেও।

সিন্ধুকে ‘মানা আম্মাই’ (আমাদের সন্তান) বলে অভিহিত করে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু বলেন, ওনার বাবা ইলুরু এবং মা বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা। দুজনই ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। আজ সিন্ধু যে পর্যায়ে পৌঁছছেন, তার জন্য ওনাদের অবদান অসস্বীকার্য।

সংবর্ধনায় আপ্লুত সিন্ধু এদিন স্মৃতি রোমন্থন করে ছোটবেলায় তাঁর বিজয়ওয়াড়ায় বেড়াতে আসার কথা শোনান। বলেন, ছোটবেলায় এখানে দাদুর বাড়িতে আসতেন আর ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টন খেলতেন।

তাঁর সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান সিন্ধু। বলেন, এই কৃতিত্ব অর্জনেক পিছনে বাবা-মা থেকে শুরু করে কোচ—সকলের ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় গোরী স্যরের খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।

এদিন উপস্থিত জনতার সামনে মঞ্চের ওপরই সিন্ধুর সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলেন চন্দ্রবাবু। ব্যাডমিন্টন তারকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ চন্দ্রবাবু বলেন, উনি এমন এক হীরে, যিনি ভারতীয় ক্রীড়ার ইতিহাসকে নতুন করে লিখেছেন। সিন্ধু যাতে ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করেন, তার জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন অন্ধ্র মুখ্যমন্ত্রী।

এমনকী, তিনি ভবিষ্যতে অমরাবতীতে অলিম্পিকের আসর আয়োজন করারও ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। বলেন, ভবিষ্যতে অলিম্পিকের আসর আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলবে অন্ধ্র সরকার।

তিনি যোগ করেন, ‘অলিম্পিকের আসর ভারতে আসা উচিত। এতে আমাদের ক্রীড়াবিদরা উদ্দীপ্ত হবে। আমরা কারও চেয়ে কম নই। রাশিয়া ও চিনের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিভাবান রয়েছেন ভারতে।’

গোপীচাঁদকে চন্দ্রবাবু আহ্বান করেন অমরাবতীতে একটি বিশ্বমানের অ্যাকাডেমি খোলার জন্য। তিনি বলেন, তার জন্য যা অর্থের প্রয়োজন, তা রাজ্য করবে। এমনকী, প্রয়োজনে ডোনর-এর ব্যবস্থাও করবে রাজ্য।  একইসঙ্গে, অলিম্পিক কোচের জন্য সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সিন্ধু-গোপীচাঁদের পাশাপাশি, আরেক অলিম্পিয়ান শাটলার গুন্টুরের বাসিন্দা কিদম্বী শ্রীকান্তকে ২৫ লক্ষ টাকা নগদ অর্থ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন চন্দ্রবাবু নাইডু। খবরে প্রকাশ, শ্রীকান্তকে রাজ্য সরকারের গ্রেড-বি চাকরি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্ধ্র প্রশাসন।

শ্রীকান্তের মতোই অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আরেক ক্রীড়াবিদ রজনীকেও নগদ ২৫ লক্ষ এবং গ্রেড-বি সরকারি চাকরি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চন্দ্রবাবু প্রশাসন। এদিন মহিলা দাবাড়ু কনেরু হাম্পি এবং গোপীচাঁদের স্ত্রী তথা প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় শ্রীলক্ষ্মীকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।