সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বয়স মাত্র ১৭! অথচ সাফল্যের নিরিখে তাক লাগাচ্ছেন।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের থার্ড স্টেজে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা জয়। আয়ার্ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইয়ুথ ওয়ার্ল্ড আর্চারিতে সোনা। বার্লিনে বিশ্ব তিরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যক্তিগত কম্পাউন্ড বিভাগে মেক্সিকোর প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সোনা। যা সিনিয়রদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে কম বয়সে ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা জেতার নজির। ভারতীয় তিরন্দাজির ইতিহাস ইতিহাস নতুন করে লিখতে হচ্ছে তাঁর জন্যই।
মহারাষ্ট্রের কন্যা অদিতি গোপীচন্দ স্বামীকে (Aditi Gopichand Swami) দেশের ক্রীড়ামহল 'সোনার মেয়ে' বলে ডাকতে শুরু করেছে। বার্লিনে চ্যাম্পিয়ন হয়েই অদিতিকে পাড়ি দিতে হয়েছে ফ্রান্সে। প্যারিসে বিশ্বকাপ তিরন্দাজির ফোর্থ স্টেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।
কোন মন্ত্রে সাফল্য অদিতির?
প্রশ্নটা শুনে হাসলেন প্রবীণ সবন্ত (Praveen Sawant)। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার বাসিন্দা প্রবীণই অদিতির ব্যক্তিগত কোচ। পুলিশে কর্মরত প্রবীণ মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'অদিতির সাফল্যে বেশ হইচই হচ্ছে। তবে আমি অবাক হইনি। ওর যা প্রতিভা, যেরকম প্রস্তুতি নিয়েছে, তাতে এই ফল স্বাভাবিক। আরও অনেক সাফল্য পাবে ও।'
এখানে বলে রাখা যাক, বিশ্ব তিরন্দাজিতে পুরুষদের ব্যক্তিগত কম্পাউন্ড বিভাগে সোনা জয়ী ওজাস ডেওটেলের (Ojas Deotale) ব্যক্তিগত কোচও প্রবীণই। অদিতি ও ওজাসকে একসঙ্গেই তালিম দিয়েছেন। অদিতি সতেরো বছর বয়সে ব্যক্তিগত সোনা জিতে ইতিহাস গড়েছেন। আর পুরুষদের ফাইালে দেড়শোর মধ্যে দেড়শো স্কোর করে রেকর্ড গড়েছেন ওজাস।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে এমন অভ্রান্ত নিশানা তৈরি করলেন কীভাবে অদিতি? ওজাসের নিখুঁত দেড়শোর রসায়নই বা কী? প্রবীণ বলছেন, 'এর নেপথ্যে রয়েছে কঠোর অধ্যাবসায়। সাতারায় আমারে তিরন্দাজি অ্যাকাডেমিতে নিরলস পরিশ্রম করে দুজনই। পাশাপাশি ওদের মনোযোগ বাড়ানোর বিশেষ পদ্ধতিও অবলম্বন করে চলি। তিরন্দাজদের একাগ্রতাই সবচেয়ে বড় সম্পদ। মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য ওদের সজ্জনগড়ে নিয়ে যাই। সজ্জনগড় সাতারার কাছেই পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এক দুর্গ। এখানে সন্ত রামদাসের সমাধিস্থল রয়েছে। অনেকে বলেন, তিনি ছত্রপতি শিবাজির ধর্মগুরু ছিলেন। সমাধিস্থলকে ঘিরে নির্মিত আশ্রমে ওঁর সমস্ত বাণী খোদাই করা রয়েছে।'
প্রবীণ আরও বললেন, 'প্রকৃতির বুকে নির্জন, কিন্তু মনোরম জায়গা এই সজ্জনগড় দুর্গ। আমি সেখানে অদিতি, ওজাস সহ আমার সকল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাই নিয়মিত। সেখানে পাহাড়চূড়ার বসে ওরা ধ্যান করে। যোগাসন করে। পরম শান্তি পাওয়া যায় এতে। তিরন্দাজদের মন যত শান্ত থাকবে, একাগ্রতা তত বাড়বে। অদিতি-ওজাসদের অভ্রান্ত নিশানার নেপথ্যে অনুশীলনের পাশাপাশি রয়েছে সজ্জনগড়ের ওই ধ্যান আর যোগাসন।'
অদিতিকে প্রথম যখন দেখেছিলেন প্রবীণ, সে তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। প্রবীণ বলছেন, 'ওর বাবা স্কুলশিক্ষক। মা গ্রামসহায়িকা। মহারাষ্ট্রের শেরিওয়ারি গ্রামে বাড়ি। খুব ছিপছিপে চেহারা ছিল। ১৫দিন প্র্যাক্টিস করিয়ে তারপর অ্যাকাডেমিতে ভর্তির জন্য ওর নির্বাচন হয়। তখন আমি শাহু স্টেডিয়ামে আমার দ্রুষ্টি আর্চারি অ্যাকাডেমি চালাতাম। শুরু থেকেই ও ভীষণ শান্ত। প্র্যাক্টিসে নিয়মনিষ্ঠ। খুব মনোযোগী। ম্যাচ খেলেই পরের দিন প্র্যাক্টিসে নেমে পড়ে। কোনও ক্লান্তি নেই। যা শেখানো হয়, দ্রুত শেখে।' যোগ করছেন, 'উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৪ ন্যাশনালসে সোনা জেতে অদিতি। তারপর পঞ্চকুলায় খেলো ইন্ডিয়াতে সোনা জেতে। মধ্যপ্রদেশে খেলো ইন্ডিয়া গেমসে সোনা জয়। গুজরাতে ন্যাশনাল গেমসে সোনা। জুনিয়র এশিয়ান গেমসের যোগ্যতা অর্জন করেছিল। পরে সিনিয়র দলেও যোগ্যতা অর্জন করে।'
সাতারার লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন অদিতি। তাঁর ছোট ভাই আদিত্যও প্রবীণের কাছে তিরন্দাজি শেখেন।
ওজাসও এখন অদিতির সঙ্গেই রয়েছেন প্যারিসে। প্রবীণ বলছেন, 'এক বছর আগে ওজাস আমার অ্যাকাডেমিতে এসেছিল। হাসিখুশি ছেলে। উচ্চশিক্ষিত পরিবার। ওর বাবার নিজস্ব স্কুল রয়েছে। মাও এক স্কুলের প্রিন্সিপাল।'
সামনেই চিনের হাংঝাউতে এশিয়ান গেমস। তিরন্দাজিতে ভারতের পদক সম্ভাবনা অনেকটাই নির্ভর করে থাকবে অদিতি ও ওজাসের ওপর। কোচ হিসাবে কী প্রত্যাশা আপনার? প্রবীণ বলছেন, 'এই সাফল্যে দাঁড়ালে হবে না। এশিয়ান গেমসেও সোনা জিততে হবে। ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।'
বাস্তবের দ্রোণাচার্যের চোখে দুই শিষ্যকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন।
আরও পড়ুন: Manoj Tiwary: সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ৪ দিনের মধ্যে অবসরের সিদ্ধান্ত বদল, আর এক মরশুম খেলবেন মনোজ
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন
https://t.me/abpanandaofficial