সন্দীপ সরকার, কলকাতা: চলতি রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy) স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন তিনি। ৯ ম্যাচে করেছেন ৮২৬ রান। একটি ডাবল সেঞ্চুরি-সহ মোট শতরানের সংখ্যা তিন। ৭৫.০৯ গড়ে রান করেছেন। সেমিফাইনালে কর্নাটকের বিরুদ্ধে কার্যত একার হাতে সৌরাষ্ট্রকে বসিয়ে দিয়েছিলেন চালকের আসনে। প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ইনিংসে চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে অপরাজিত ৪৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস।


রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে বাংলার বোলারদের সবচেয়ে বড় কাঁটা হতে পারেন তিনি। অর্পিত বাসবডা (Arpit Vasavada)। যাঁকে নিয়ে এক সময় সৌরাষ্ট্রের কোচ দেবু মিত্র বলতেন, এ ছেলে একদিন জাতীয় দলে খেলবে। বাঁহাতি ব্যাটার ভারতীয় দলে সুযোগ পাননি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজার মতো ব্যাট করছেন। ফাইনালের আগে যিনি বাংলা শিবিরকে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন।


বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) বলছেন, ফাইনালে একপেশে ম্যাচ হবে! যা শুনে হাসলেন অর্পিত। বুধবার দুপুরে সৌরাষ্ট্রের প্র্যাক্টিস তখন সবে শেষ হয়েছে। ইডেন গার্ডেন্সে দাঁড়িয়ে এবিপি লাইভকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্পিত বললেন, 'বাংলা শিবির থেকে এরকম বলা হতে পারে। তবে আমাদের জন্য বিষয়টা সেরকম নয়। আমরা সেরকম কিছু ভাবছিও না। আমরা এটাকে ফাইনাল ম্যাচ হিসাবেই দেখছি। ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। আর নিজেদের দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে হবে। পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে হবে।'


ম্যাচের আগে ইডেনের বাইশ গজ নিয়ে তুমুল চর্চা। ওপর ওপর দেখে গ্রিনটপ মনে হচ্ছে। বাংলা শিবির পেস-অস্ত্রে শান দিচ্ছে। সৌরাষ্ট্রের অধিনায়ক জয়দেব উনাদকট আবার জানিয়েছেন, উইকেট মোটেও গতি ও বাউন্সের স্বর্গরাজ্য নয়। বরং বড় রান উঠতে পারে। অর্পিতের গলাতেও একই সুর। বললেন, 'ভাল পাঁচদিনের ম্যাচের উইকেট। তবে এমনও নয় যে, ভীষণ সবুজ পিচ। ভাল পিচ। পাঁচদিন যারা ভাল ক্রিকেট খেলবে, তারাই জিতবে।'


বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, টস জিতে প্রথম ফিল্ডিং নেওয়া দল সুবিধা পাবে। কারণ, তাজা উইকেটে পেসাররা কেরামতি দেখাতে পারেন। যে কারণে টস এক্স ফ্য়াক্টর হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও অর্পিত একমত নন। বললেন, 'টস নিয়ে খুব একটা ভাবি না। কারণ বিশ্বাস করি, ক্রিকেটার হিসাবে টসের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই যা হবে, প্রথমে ব্যাটিং করতে হোক বা ফিল্ডিং, আমরা ভাল করতে বদ্ধপরিকর। টস নিয়ে ভাবছি না সেই কারণেই।'


স্বপ্নের সেমিফাইনালের পর ফাইনালে নিজের জন্য কী লক্ষ্য সাজাচ্ছেন? অর্পিত মৃদু হেসে বলছেন, 'ছন্দে রয়েছি। আমি আত্মবিশ্বাসী। কারণ আগের ম্যাচে ভাল খেলে এসেছি। তবে নিজের সামনে আলাদা করে কোনও লক্ষ্য রাখছি না। দলের প্রয়োজনে ভাল খেলতে হবে, অবদান রাখতে হবে, এভাবেই দেখছি।'


তবে বাংলার পেস-ঝঙ্কারের কথা শুনে কিছুটা যেন ভ্রু কোঁচকালেন। আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার, ঈশান পোড়েল। বাংলার পেস ত্রয়ীকে যে দেশের সেরা বলা হচ্ছে! অর্পিত শুনে বললেন, 'বাংলার পেসারদের জন্য আলাদা কোনও পরিকল্পনা নেই। বেশি ভাবছিও না। বল দেখে খেলব। নাম দেখে তো নয়। আর তাছাড়া আমরা জানি, যে দল রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে উঠেছে, তারা যথেষ্ট ভাল। তবে আমাদের দলও ভাল খেলছে। বাংলার পেস ব্যাটারি নিয়ে বেশি ভাবার কোনও কারণই নেই।'


দল হিসাবে বাংলাকে কীভাবে দেখছেন? টিমবাসে ওঠার আগে মুচকি হেসে অর্পিত বললেন, 'প্রতিপক্ষকে নম্বর দেওয়ায় আমি বিশ্বাসী নই। ক্রিকেটার আমরা। সমালোচক বা বিশেষজ্ঞ নই যে, কে ভাল আর কে খারাপ বিচার করব। বাংলার পেস বোলিং আক্রমণ ভাল। ভাল খেলতে হবে। রঞ্জি ফাইনালে কোনও দলই দুর্বল নয়। বাংলা ভাল খেলছে। আমরাও ভাল ক্রিকেট খেলেই এখানে পৌঁছেছি। বাকিটা তো মাঠে প্রমাণিত হবে।'


বাংলার বোলাররা শুনছেন কী?


আরও পড়ুন: ও মন্ত্রীমশাই! প্র্যাক্টিস শেষে প্রবল প্রতিপক্ষের ডাক, খুনসুটিতে মাতলেন বঙ্গ অধিনায়ক