কুন্তল চক্রবর্তী, কলকাতা: খেলোয়াড় হিসেবে ৫১ বছর পরে বাংলাকে রঞ্জি ট্রফি জিততে সাহায্য করেছিলেন। এবার তাঁর কোচিংয়েই ১৩ বছর পরে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে উঠল বাংলা। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে রঞ্জি ট্রফি জেতার বিরল নজিরের সামনে অরুণ লাল। অনেকেই বলছেন, তিনি দায়িত্বে আসার পর বাংলা দলের সংস্কৃতি বদলে দিয়েছেন। তরুণরা যেমন সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনই প্রয়োজনের মুহূর্তে ভাল পারফরম্যান্সও দেখাচ্ছেন। তবে নিজে কোনও কৃতিত্ব নিতে নারাজ বাংলার কোচ। তিনি যাবতীয় কৃতিত্ব দিচ্ছেন দলকে।

এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরুণ বলেছেন, ‘একজন কোচ ততটাই ভাল, যতটা ভাল তার দল। আর আমার হাতে এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভারতের সেরা দল আছে। দলে একসঙ্গে এতজন প্রতিভাবান তরুণ ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংমিশ্রণ থাকায় আমার কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে। আমাকে বিশেষ কিছু করতে হয়নি। আমি শুধু ক্রিকেটারদের নিজেদের উপর বিশ্বাস আনার চেষ্টা করেছি এবং কোন জায়গায় ওদের উন্নতি করতে হবে সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা ফিটনেস ও মানসিক জোর বাড়ানোর চেষ্টাও করেছি। অফ সিজনে আমরা কোনও প্রতিযোগিতায় যোগ দিইনি। প্রায় দু’মাস আমরা কোথাও যাইনি। আমরা ফিটনেসের উপর প্রচণ্ড জোর দিয়েছি। জুলাই-অগাস্টে কলকাতার ৩৬-৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ছুটছিল ছেলেরা। বৃষ্টির মধ্যেও আমরা অনুশীলন বন্ধ করিনি। তিন ঘণ্টা ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পর আমরা দু’ঘণ্টা নেটে অনুশীলন করেছি। আমরা যাতে কখনও ক্লান্ত না হয়ে পড়ি এবং দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল হয়ে উঠি, সেটা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য ছিল। এখন তারই ফল পাচ্ছি। পারফরম্যান্স ভাল হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, নিজের উপর বিশ্বাস জন্মায় এবং দক্ষতা অনুযায়ী খেলা যায়।’

যুবরাজ সিংহের মতো অরুণও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এই মারণরোগকে হারিয়ে তিনি মাঠে ফিরেছেন। এই প্রসঙ্গে বাংলার কোচ বলছেন, ‘ক্যান্সার আমাকে মানুষ হিসেবে বদলে দিয়েছে। আমি যেভাবে দলের সবার সঙ্গে মিশেছি, তার পিছনে হয়তো এর ভূমিকা রয়েছে। তবে এই দলের ক্রিকেটারদের ভাল পারফরম্যান্সের জন্য কারও কাছ থেকে অনুপ্রেরণার প্রয়োজন নেই। ওরা নিজেরাই ভাল খেলতে চায়। অনুষ্টুপের (মজুমদার) মতো ক্রিকেটার দীর্ঘদিন ধরে খেলে চলেছে। ও এর আগে রঞ্জি ট্রফি, দলীপ ট্রফিতে শতরান করেছে। কিন্তু এই মরসুম শুরু হওয়ার আগে ও তিনটি ম্যাচে বাদ পড়ে। তারপরেও ওর মধ্যে হতাশা বা নেতিবাচক মানসিকতা দেখা যায়নি। ও জল নিয়ে মাঠে গিয়েছিল, প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেয়। পরে যখন ও সুযোগ পেয়েছে, তখন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের মতো ব্যাটিং করেছে। টিম স্পিরিট দুর্দান্ত জায়গায় থাকলে তবেই এটা সম্ভব। এই দলের সাফল্যের রহস্য হল টিম স্পিরিট।’

এই মরসুম শুরু হওয়ার আগে শাহবাজ আহমেদ, আকাশদীপের মতো ক্রিকেটাররা তেমন পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু এখন তাঁরা তারকা হয়ে ওঠার পথে। পেসার ঈশান পোড়েলও সেমি-ফাইনালে বাংলার জয়ের অন্যতম নায়ক। তাঁদের বিষয়ে অরুণ বলেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা এবং একে অপরের উপর বিশ্বাসই আসল। আমি ভাল খেলতে না পারলে সতীর্থ খেলুক, এই মানসিকতা থাকলে দল এগিয়ে যায়। আমি দলের অংশ, দলকে ভাল খেলতে হবে, এটাই আমাদের সবার মনোভাব। মনোজ তিওয়ারি বাংলা ক্রিকেটের একজন তারকা হতে পারে, কিন্তু যে তরুণ ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পাচ্ছে, সে-ও মনোজের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। দলে এই সংস্কৃতিই আমি চালু করেছি। কেউ ৫০ হাজার রান করতে পারে, কিন্তু সে-ও অভিষেক হতে চলা তরুণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সবারই কাজ এক। আমি দলে এই সমতার মনোভাব আনার চেষ্টা করেছি। সেটাই হয়তো কাজে দিয়েছে।’

ফাইনালে সৌরাষ্ট্র না গুজরাত, বাংলার প্রতিপক্ষ কে হবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। তবে বাংলার কোচ বলছেন, যাদের বিরুদ্ধেই খেলতে হোক না কেন, এতদিন দল যেভাবে খেলে এসেছে, ফাইনালেও সেভাবেই খেলবে। আশা করা যায়, ক্রিকেটাররা একইরকম ভাল পারফরম্যান্স দেখাবেন।