সন্দীপ সরকার, কলকাতা: একজন তিন বছর আগে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট (BCCI)। তাঁর আমলেই রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতীয় দলের কোচ হওয়া, বিরাট কোহলির হাত থেকে নেতৃত্বের ব্যাটন রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) হাতে ওঠা।
অন্যজন ছিলেন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের (IPL GC) সদস্য। অরুণ ধূমলের নেতৃত্বে আইপিএলের নীল নকশা তৈরিতে অংশ নিতেন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ও অভিষেক ডালমিয়া (Avishek Dalmiya)। বাংলার দুই ক্রিকেট প্রশাসককে ফের ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোনও দায়িত্বে দেখা যায় কি না, জানতে উৎসুক ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২৮ সেপ্টেম্বর, দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন মুম্বইয়ে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা। সেদিনই ঠিক হবে, কারা ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে বিভিন্ন পদে বসবেন। যদিও ২৮ সেপ্টেম্বরের এজিএম কার্যত নিয়মরক্ষার। কারণ, তার এক সপ্তাহ আগে, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বরই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে, কাদের হাতে থাকবে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের দায়িত্ব। নয়াদিল্লিতে যেদিন জোড়া বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। হাজির ছিলেন বোর্ডের সমস্ত প্রভাবশালী কর্তা। সেই বৈঠকে কেন্দ্রের শাসক দলের কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্বও ছিলেন বলেই খবর।
যদিও সেই বৈঠকে বাংলার জন্য ভাল কোনও খবর নেই। বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন না সৌরভ। অভিষেককেও বড় কোনও দায়িত্বে দেখা যাবে না এবার। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেও থাকছেন না প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেট প্রশাসক, আইসিসি, বিসিসিআই ও সিএবি-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার পুত্র।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা করেছেন মিঠুন মানহাস। জম্মু-কাশ্মীরের মানহাস দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে মনোনয়ন পেশ করেছেন উত্তর প্রদেশের রাজীব শুক্ল। ফের সচিব হচ্ছেন অসমের দেবজিৎ সাইকিয়া। ছত্তীসগঢ় ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি প্রভতেজ সিংহ ভাটিয়া হচ্ছে যুগ্মসচিব। কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন কর্নাটকের রঘুরাম ভাট। আইপিএল চেয়ারম্যান থাকছেন অরুণ ধূমলই। যিনি হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি। মিজোরামের মামন মজুমদার আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে ঢুকে পড়ছেন অভিষেক ডালমিয়ার জায়গায়। সৌরাষ্ট্রের জয়দেব শাহ অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য হচ্ছেন।
পুরো প্যানেলের ক্ষেত্রেই 'হচ্ছেন' লিখে ফেলা যায় কারণ, সকলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দায়িত্বে থাকছেন বা আসছেন। বোর্ডে কোনও নির্বাচন হচ্ছে না। প্রত্যেক পদেই নাম চূড়ান্ত। ২৮ তারিখ শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করা হবে।
বাংলার প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রেসিডেন্ট পদে রঘুরাম ভাটের নাম কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আগের বোর্ড প্রেসিডেন্ট রজার বিনিও ছিলেন কর্নাটকের। একই রাজ্য থেকে পরপর দুবার বোর্ড প্রেসিডেন্ট হোক, চায়নি ভারতীয় ক্রিকেটের 'হাইকম্যান্ড'। তাই দিল্লির মিঠুন মানহাসের প্রবেশ। তবে রঘুরাম ভাটকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি। তাঁকে বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ করা হচ্ছে। বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ প্রভতেজ ভাটিয়া হচ্ছেন যুগ্মসচিব। শোনা গেল, প্রেসিডেন্ট পদে সৌরভের নাম নিয়ে খুব যে আলোচনা হয়েছে, তা নয়। বরং ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়কের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের জন্যই তাঁর কথা বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে ভাবা হয়নি, বলা হল কোনও কোনও মহল থেকে। ঠিক যেভাবে পঞ্জাবের হরভজন সিংহ ধারাভাষ্যকারের কাজের ব্যস্ততার জন্য দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন বলে দাবি কারও কারও।
অভিষেক একটা সময় আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে অরুণ ধূমলের কুলিং অফে যাওয়ার কথা ছিল। সেক্ষেত্রে অভিষেক তাঁর জায়গা নেবেন, এমন আলোচনা চলছিল। তবে বোর্ড কর্তারা আইনি পরামর্শ নিয়ে জানতে পারেন যে, অরুণ ধূমলের কুলিং অফে না গেলেও চলে। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে যেহেতু বোর্ডের পদাধিকারী হিসাবে দেখা হয় না। যদিও এ নিয়ে কারও কারও মনে ধোঁয়াশাও রয়েছে বলে খবর।
যা নিয়ে ধোঁয়াশা নেই, সেটা হল অনুরাগ ঠাকুরের ভাই অরুণ ধূমলই আইপিএল চেয়ারম্যান থাকছেন। শোনা গেল, অরুণ ধূমলের থাকা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরই বদলে যায় চিত্রনাট্য। অভিষেকের পরিবর্তে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে ঢুকছেন মিজোরামের মামন।
রবিবার, মহালয়ার দিনই সমস্ত ভাবি পদাধিকারীরা আমদাবাদ রওনা হয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের 'হাইকম্যান্ড'-এর ডাকে, বিশেষ ডিনারে অংশ নিতে। আইসিসি চেয়ারম্যান হলেও ভারতীয় ক্রিকেট এখনও যাঁর অঙ্গুলিহেলনে চলে বলে জানেন ওয়াকিবহাল সকলেই।
সৌরভ ও অভিষেক - দুজনই অবশ্য ২৮ সেপ্টেম্বর বোর্ডের এজিএমে থাকছেন। প্রথমজন সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসাবে। অভিষেক থাকছেন এনসিসি (ন্যাশানল ক্রিকেট ক্লাব) প্রতিনিধি হিসাবে।