কলকাতা: ক্রিকেটের টানে হরিয়ানা ছেড়ে বাংলায় আসা। অথচ নির্বাসিত হয়ে সেই ক্রিকেট মাঠ থেকেই দূরে থাকা!


যন্ত্রণাটা এখনও ভুলতে পারেননি শাহবাজ আমেদ। বৃহস্পতিবার আইপিএলের নিলাম থেকে যাঁকে ২০ লক্ষ টাকার বেস প্রাইসে কিনেছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। আর সেই থেকে হইচই চলছে ২৫ বছরের অলরাউন্ডারকে নিয়ে।

তিরুঅনন্তপুরমে কেরলের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতে গিয়েছেন শাহবাজ। আড়াই দিনের মধ্যে ম্যাচ সরাসরি জিতেছে বাংলা। দুই ইনিংস মিলিয়ে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে হাফসেঞ্চুরিও করেছেন শাহবাজ। দু মরসুম আগে যিনি বাংলার ময়দানে ছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। শুরু থেকেই তিনি তপন মেমোরিয়ালের হয়ে প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট খেলেন। তাঁর স্থানীয় পরিচয়পত্র নেই, এমন অভিযোগ তুলে সিএবি-র দ্বারস্থ হয়েছিল ময়দানের দুই ক্লাব। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে নির্বাসিত করেছিল সিএবি। স্থানীয় লিগে বড়িশার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে খেলতে পারেননি। মাঠের বাইরে বসতে হয়েছিল। ম্যাচটি হেরেও গিয়েছিল তপন মেমোরিয়াল। পরে তিনি অভিযোগমুক্ত হন। এরপর বাংলা দলেও জায়গা করে নেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জোরে।

শুক্রবার সকালে তিরুঅনন্তপুরম থেকে মোবাইল ফোনে শাহবাজ বললেন, ‘বড়িশার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে না পারার যন্ত্রণা এখনও ভুলিনি। খুব ভেঙে পড়েছিলাম। একটা ম্যাচ খেলতে না পারায় ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলাম। পরে অবশ্য অভিযোগ খারিজ হয়। তবে সেই অধ্যায় আমাকে মানসিকভাবে অনেক পোক্ত করেছে।’

তপন মেমোরিয়ালের কর্তা সুব্রত সরকার শুরুর দিন থেকে শাহবাজকে দেখছেন। বলছিলেন, ‘আমাদের ক্লাবের ক্রিকেটের দায়িত্বে থাকা পার্থ চৌধুরী ওকে নিয়ে এসেছিল। নেটে ওকে দেখেই বুঝেছিলাম, ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। প্রতিভাবান অলরাউন্ডার। নিজেকে মাঠে নিংড়ে দেয়।’

আর শাহবাজ উচ্ছ্বসিত আরসিবি তাঁকে কেনায়। বলছিলেন, ‘কেরলের বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর হোটেলে ফিরে সকলে আইপিএলের নিলাম দেখছিলাম। তবে প্রথম পর্বে আনসোল্ড ছিলাম। ততক্ষণে ঈশান (পোড়েল) দল পেয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি আমরা ম্যাচ জিতেছিলাম। জোড়া আনন্দে হোটেলে পার্টি হচ্ছিল। আমিও যোগ দিয়েছিলাম। পরে খবর পেলাম আমি দল পেয়েছি। আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে।’ যোগ করলেন, ‘বিরাট কোহলি-এবি ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম থাকব ভেবে ভীষণ উত্তেজিত আমি।’

আরসিবি-র সহকারী কোচ সাইমন কাটিচ ফোন করেছিলেন। শাহবাজ বলছেন, ‘কাটিচ স্যার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বলেছেন, বাংলার হয়ে ধারাবাহিকতা দেখাও। রঞ্জি ট্রফিতে মনোনিবেশ কর পুরোপুরি।’ গত মরসুমে বাংলার প্রয়াস রায়বর্মন আরসিবি-তে সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে নজর কাড়তে পারেননি। এই মরসুমে কোনও দল পাননি প্রয়াস। তাতে কি আপনার ওপর চাপ বাড়ল? শাহবাজ বলছেন, ‘প্রয়াস খুব ভাল ক্রিকেটার। তবে ওর পরিণতি দেখে ঘাবড়াচ্ছি না। বেশি ভাবছিও না। আইপিএল বড় মঞ্চ। কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। নিজের দক্ষতা নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। বাংলার হয়ে যে ভূমিকা পালন করি, আরসিবির হয়েও একই কাজ করতে চাই।’

হরিয়ানায় মেওয়াটে বাড়ি। বাবা মেওয়াটে এসডিএম অফিসে কেরানির চাকরি করেন। মা গৃহবধু। বোন চিকিৎসক। স্নাতক পাশ করেছেন শাহবাজ। হরিয়ানা থেকে বাংলায় আসা কেন? শাহবাজ বলছেন, ‘শুনেছিলাম কলকাতায় ভারতের সেরা ক্রিকেট খেলা হয়। পার্থ স্যার আমাকে এনে তপন মেমোরিয়ালে সুযোগ দিলেন। সেই থেকেই বাংলায় খেলা শুরু।’

হুগলির শ্রীরামপুরে স্টিল লেনে ফ্ল্যাট কিনেছেন। সেখানেই থাকেন। তবে ক্লাবের বা বাংলার ম্যাচ থাকলে ক্লাব থেকেই থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। বেন স্টোকসের ভক্ত শাহবাজ বলছেন, ‘ক্রিকেটের প্রত্যেক ফর্ম্যাটের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিই। মানসিকভাবে তিন ফর্ম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। আইপিএলে ভাল কিছু করার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’