সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আগরতলায় গিয়ে ত্রিপুরা ক্রিকেট দলে সইপর্ব সেরে ফিরেছেন। আজ, বুধবার সিএবি-তে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) নিতে যাওয়ার কথা সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের (Sudip Chatterjee)। তাঁকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন সিএবির শীর্ষকর্তারা। পাশাপাশি সুদীপ ভবিষ্যতে বাংলায় ফিরবেন বলেও আশা প্রকাশ করছে সিএবির একাংশ।


বাংলার অধিনায়কত্ব করেছেন। একটা সময় মনে করা হতো, বাংলা থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সেরা দাবিদার। চাপের মুখে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলে একাধিক ম্যাচে বাংলার রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছেন। তাঁর ব্যাটিং দক্ষতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly), ভি ভি এস লক্ষ্মণদের (VVS Laxman) মুখেও। সেই সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (Sudip Chatterjee) বাংলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার তিনি আগরতলা গিয়ে সই করেছেন ত্রিপুরা ক্রিকেট দলে। আসন্ন মরসুমে ত্রিপুরার হয়েই খেলবেন বঙ্গসন্তান।


সুদীপ বলছেন, 'ত্রিপুরার হয়ে সব রকম ফর্ম্যাটে অনেক বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। ঋদ্ধিদার (ঋদ্ধিমান সাহা) সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। এনওসি নিতে বুধবার সিএবিতে যাব।'


সিএবি-র শীর্ষস্থানীয় এক কর্তা এবিপি লাইভকে বললেন, 'সুদীপ ওখানে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন বলে মনে করছেন। তবে কোনও তিক্ততা নিয়ে বাংলা ছাড়ছে না। আমরা ওকে এনওসি দিয়ে দেব। সুদীপ জানিয়েছেন, আপাতত এক বছর ত্রিপুরায় খেলেবেন। তারপর ফের বাংলায় ফিরে আসবেন বলেই আশাবাদী আমরা।'


কিন্তু কেন আচমকা বাংলা ছাড়লেন সুদীপ? ময়দান এই প্রশ্নে তোলপাড়। একাংশ বলছে, অভিমানে বাংলা ছাড়লেন সুদীপ। ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারদের দাপাদাপিতে এমনিতেই বাংলা ক্রিকেটে বঙ্গসন্তানরা ব্রাত্য বলে অভিযোগ ওঠে অহরহ। বঙ্গ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত একাধিক লোকজন বলছেন, সুদীপকে গত কয়েক মরসুমে ব্যবহারই করতে পারেনি বাংলার টিম ম্যানেজমেন্ট। কোনও ম্যাচ খেলিয়ে, কোনও ম্যাচ না খেলিয়ে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে এমনই অনিশ্চয়তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল যে, সুদীপের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছিল বলে মনে করছে একাংশ।


ভিন্ন মতও রয়েছে। বলা হচ্ছে, পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েও সাম্প্রতিক সময়ে বলার মতো পারফর্ম করতে পারেননি সুদীপ। তাঁকে যখনই দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা হয়েছে সম্পূর্ণ ক্রিকেটীয় কারণে। এর পিছনে অন্য কিছু খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয়।


সুদীপ নিজে কী বলছেন? 'আমার সিএবি কর্তাদের বা বাংলা দলের কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। বাংলা ছাড়তে চেয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াকে টেক্সট মেসেজ করেছিলাম। পরে ওঁর সঙ্গে কথাও হয়,' এবিপি লাইভকে বলেছেন সুদীপ। নবনির্বাচিত কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল ফোন করে বাংলা না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। সুদীপ বলছেন, 'লক্ষ্মীদা ফোন করেছিল। তবে আমি নিজের যোগ্যতায় খেলতে চাই। কোনওদিনই কাউকে ধরে খেলিনি।'


শোনা যাচ্ছে যে, নামিবিয়া সফরের বাংলা দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সুদীপ। তখনই তিনি বাংলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৩০ বছরের ক্রিকেটারের কাছে ত্রিপুরার প্রস্তাব ছিলই। পরে নামিবিয়া সফর বাতিল হয়ে গেলেও, সিদ্ধান্ত বদলাননি বারাসতের বাঁহাতি ব্যাটার।


২০১০ সালে বাংলার জার্সিতে অভিষেক হয় সুদীপের। সেটা ছিল লিস্ট এ ম্যাচ। প্রতিপক্ষ কারা ছিল? ত্রিপুরা। যাদের হয়ে নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন। বাংলার হয়ে ৬৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৯৮৮ রান রয়েছে সুদীপের। ৫৬টি লিস্ট এ ম্যাচে ১৩২০ রান করেছেন। ২৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫১৩ রান রয়েছে।


আরও পড়ুন: দলীপ ট্রফি দিয়ে মরসুম শুরু, ফিরছে ইরানি কাপ, ইডেনে রঞ্জির হোম ম্যাচ খেলবে বাংলা