প্রশান্ত কুমার: ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ভারতে উন্মাদনা ক্রমশই বাড়ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২০ সালের শুরুর দিকে সুপ্রিম কোর্ট এই ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর থেকে নিষধাজ্ঞা সরিয়ে নিয়েছিল। আর তারপর থেকেই স্পটলাইটে রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। এরপর ২০২১ সাল জুড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে এক্সচেঞ্জের প্রসার এবং বাজারের বিস্তার হওয়ার ফলে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায় ভারতের প্রবেশ হয়েছে তুলনায় অনেক দেরিতে। তবে উদার মানসিকতা নিয়ে দু'বাহুডোরে ক্রিপ্টো দুনিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। আর তার জেরেই বর্তমানে প্রায় ২৭ মিলিয়ন ভারতীয়র ক্রিপ্টো অ্যাসেট বা সম্পত্তি রয়েছে। মূলত দেসজের টায়ার ২ বা টায়ার ৩ শহরগুলিতেই এই চিত্র লক্ষ্যনীয়। 

Continues below advertisement

আমাদের মতো বড় দেশগুলির ক্ষেত্রে আমআদমির সঞ্চয় যেসব বিষয়ের মধ্যে বিনিয়োগ করা হবে সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়মকানুন থাকা প্রয়োজন। কারণ ইক্যুইটি বা মিউচুয়াল ফান্ডের পাশাপাশি নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তি থাকাও প্রয়োজন। এটি এমন একটি দিক যেখানে গত দু'বছরের মধ্যে ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশ সত্ত্বেও ভারত সম্ভবত পিছিয়ে রয়েছে। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে যেকোনও ভাল কাজের ক্ষেত্রে তা বোঝা এবং গ্রহণ করা একটি স্বাভাবিক চক্র।

কেন্দ্রীয় সরকার ক্রিপ্টোর ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে

Continues below advertisement

ক্রিপ্টোকারেন্সি হল সম্পত্তি, মুদ্রা এবং প্রযুক্তির একটি দারুণ আগ্রহমূলক সহাবস্থান। এখন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রকের গৃহীত পদক্ষেপগুলি পর্যবেক্ষণ করলে প্রকাশিত হয়ে যে আমাদের নিয়ন্ত্রকরা তিনটি দিককে ভিন্নভাবে দেখেন এবং আমি মনে করি এটিই মূল কারণ যে ভারত এতদিন পর্যন্ত মিশ্র সংকেত দিয়েছে এবং সময় নিয়েছে যাতে এটি উদীয়মান বিষয়কে সমর্থন করতে পারে। তার পাশপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও রক্ষা করতে পারে।

আমরা যদি গত কেন্দ্রীয় বাজেটের সময় করা সমস্ত ঘোষণাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি, তাহলে দেখা যাবে যে তখন বেশিরভাগ গোলমাল ক্রিপ্টো ট্যাক্সেশনের চারপাশে ছিল। কিন্তু ডিজিটাল রুপি (INR-এর একটি ক্রিপ্টো সংস্করণ) প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করার জন্য আমাদের সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির চারপাশে একটি খুব আকর্ষণীয় ব্যাপার রয়েছে। এমনকি এই পদক্ষেপকে স্বাগত পদক্ষেপ যা তখন থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআই দ্বারা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। টাকার বর্তমান ডিজিটাল সংস্করণের তুলনায় ব্লকচেইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রজন্মগতভাবে উন্নত এবং ভারত একটি নতুন প্রযুক্তি যা সুবিধা ছাড়া আর কিছুই দেয় না তা গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে ।

দ্বিতীয় দিকটি হল, এটিকে একটি সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা এবং এখন টিডিএস ও আয়কর প্রবর্তনের মাধ্যমে ভালভাবে বৈধ করা হয়েছে। যদিও এটি নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে যে হারগুলি বেশি (বা কম), বা নীতিনির্ধারকদের এসটিসিজি এবং এলটিসিজির ভিত্তিতে সমানভাবে দেখা উচিত কিনা, এটি নবজাত শিল্পের জন্য উদযাপনের একটি কারণ হওয়া উচিত কিনা। ট্যাক্সেশন হল ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুমোদন করার নিয়ন্ত্রক এবং এই বিষয়টি এখন পরিষ্কার যে একজনের জন্য ক্রিপ্টো ব্যবসা পুরোপুরি বৈধ। প্রাথমিক ভাবে এটাই চিত্র এবং আমি নিশ্চিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ও ক্রমবর্ধমান বোঝাপড়ার সাথে, কর আরোপ ধীরে ধীরে আরও বিনিয়োগকারী বান্ধব হবে।

তৃতীয় দিকটি হল এই যে আমাদের দেশের নিয়ন্ত্রকরা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে খুবই দৃঢ়। তার ফলে ভারতে এবং বিদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি কীভাবে কাজ করে তা পায় তা সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এর পাশাপাশি আমরা যাতে ক্রিপ্টোকারেন্সির সহজাত ঘাটতি বা সমস্যা অর্থাৎ ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারি সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।পরবর্তীতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেইজন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ভারতে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ও তার ভবিষ্যত

আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী গত মাসে ক্রিপ্টোতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলেছেন। আমাদের প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের মতো ভারতেরও আর পিছনে ফিরে তাকানো উচিত নয়। এই দুটি দেশ এখন সঠিক পথে ক্রিপ্টো বিপ্লবের নেতৃত্বে এগিয়ে রয়েছে। ক্রিপ্টো (গুলি) খুব আকর্ষণীয় দ্বৈত আচরণ প্রদর্শন করে যেখানে একদিকে এটি সকলের কাছে দৃশ্যমান, কিন্তু অন্যদিকে এটি ব্লকচেন রয়ে যাওয়ার কারণে স্পষ্ট নয়। আমার মতে সরকারের উচিত কাঠামো তৈরি করা, বিনিময়ের সাথে অংশীদার করা এবং লাইসেন্স ইস্যু করা যাতে আমাদের (এবং অন্যদের) মতো সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রকরা যা চায় তার সহায়ক হিসাবে কাজ করতে পারে এবং ব্লকচেন প্রযুক্তির সাথে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

সব গুরুত্বপূর্ণ ও উন্নত কাজের ক্ষেত্রেই কিছু ভাল-মন্দ আছে, এবং সময়ের কাজ হল সেই বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণের সাথে সহজলভ্যতা তৈরি করা যাতে আমরা যা কিছু ভাল তা গ্রহণ করি এবং কোন অবস্থাতেই ব্লকচেন বিপ্লব থেকে বঞ্চিত না হই। কারণ এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির একটি বিশাল উত্থান হবে আজ থেকে কয়েক দশক পরে। 

ক্রিপ্টো এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এল সালভাদর মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বিটকয়েনকে আইনি দরপত্র গ্রহণকারী হিসাবে প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে। তবে এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বেশ কয়েকটি ক্রেডিট এজেন্সির সমালোচনা সত্ত্বেও, মধ্য আমেরিকার দেশটি তার জাতীয় রিজার্ভে BTC যোগ করতে থাকে এবং এমনকি বিটকয়েন সিটি নামে একটি ক্রিপ্টো ট্রেডিং হাব স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। যাইহোক, বিটিসি- র দামে সাম্প্রতিক পতন এবং সামগ্রিক ক্রিপ্টো মার্কেট দমে যাওয়ার কারণে, এই দেশের বিনিয়োগ মূল্য হারাচ্ছে, অনুমান করা হয়েছে তা ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

অন্যদিকে, আপনার সামনে চিনের নিদর্শন রয়েছে, যা ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্ম এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে নাটকীয়ভাবে নেমে এসেছে। এতটাই যে ক্রিপ্টো ব্যবসায়ী এবং খনি শ্রমিকদের শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে সরে যেতে হয়েছিল এবং তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ঘাঁটি স্থাপন করতে হয়েছিল।

সম্ভবত ক্রিপ্টো এবং এর বিভিন্ন দিকগুলির প্রতি ভারতের সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সরকারগুলির অনুসরণ করার জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। গবেষণা ছাড়া ক্রিপ্টকারেন্সি ব্যাপারটিকে সরাসরি গ্রহণ বা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবনাচিন্তা করে পা ফেলা উচিত।