নয়াদিল্লি: গত বছর পাতিয়ালায় জাতীয় ভারোত্তোলন শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে সঙ্কেত সরগর (Sanket Sargar) মহারাষ্ট্রের সঙ্গলিতে বাবার চায়ের দোকানে নিয়মিত সময় দিতেন। পড়াশোনা, ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি বাবাকে চা তৈরি ও বিক্রির কাজে সাহায্য করতেন।



শনিবার বিকেলে গোটা দেশকে গর্ব করার মতো মুহূর্ত উপহার দিলেন সঙ্কেত। বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে তাঁর হাত ধরেই প্রথম পদক এল ভারতের ভাঁড়ারে। ওজন তুলতে গিয়ে তিনি চোট পেলেন। তবু লড়াই ছাড়লেন না। মরিয়া লড়াইয়ে দেশকে চলতি কমনওয়েলথ গেমস থেকে প্রথম পদক এনে দিলেন সঙ্কেত সরগর (Sanket Sargar)। পুরুষদের ৫৫ কেজি বিভাগে ভারোত্তোলনে রুপো জিতলেন তিনি।


১ কেজির জন্য সোনা হাতছাড়া


৫৫ কেজি বিভাগে ভারোত্তোলনে দ্বিতীয় স্থান পেলেন সঙ্কেত। তাঁর হাত ধরেই বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে পদকের খাতা খুলল ভারত। সঙ্কেত স্ন্যাচে ১১৩ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৩৫ কেজি ওজন তোলেন। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৪১ কেজি ওজন তুলতে গিয়ে তিনি কনুইয়ে চোটও পান। সব মিলিয়ে ২৪৮ কেজি ওজন তোলেন ভারতীয় অ্যাথলিট। তাঁর চেয়ে মাত্র ১ কেজি ওজন বেশি তুলে সোনা জেতেন মালয়েশিয়ার মহম্মদ আনিক বিন।


গর্বিত বাবা


ছেলের সাফল্যে গর্বিত সঙ্কেতের বাবা মহাদেব সরগর। উৎসব করতে চায়ের দোকান এক ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর এমন একটা দিন শনিবার, যেদিন তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখা যায়নি। তিনি বলেছেন, 'আজকের দিনে ঘণ্টাখানেক দোকান বন্ধ রাখাই যায়।'




গত মাসে সঙ্কেতের বোন কাজল সরগর চতুর্থ খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসে সোনার পদক জিতেছিলেন। মহাদেব তাই জানেন ছেলের পদক কোথায় রাখবেন সকলকে দেখানোর জন্য। বলেছেন, 'কাজল পদক জেতার পর সেটা চায়ের দোকানে রেখেছিলাম। সকলকে দেখিয়েছিলাম। ওই দোকান থেকেই তো আমাদের সংসার চলে। সঙ্কেতের পদকও চায়ের দোকানে রেখে দেব।'

 

আম পকোড়া ও বড়া পাও

 

বাবার চায়ের দোকানে আমের পকোড়া ও বড়া পাও তৈরি করেন সঙ্কেত। দোকানে পানও বিক্রি হয়। তবে মহাদেব কোনওদিনই চাননি ছেলে এই পেশাকে আঁকড়ে ধরুক। মহাদেব বলেছেন, 'আমি ওকে বলতাম, আমার বাবা রাস্তায় ঠেলাগাড়িতে করে কলা বিক্রি করত। আমি চা, পকোড়া বিক্রি করি। তোমাকে বড় স্বপ্ন দেখতেই হবে। আজ পদক জিতে ও শুধু নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলল তাই নয়, আমাদেরও পরিচিত করে তুলল।'


ভারতেরই আরেক ভারোত্তোলক গুরুরাজা পূজারিকে ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জিততে দেখে প্রথম পদক জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন সঙ্কেত। মহাদেব বরাবরই ভারোত্তোলনের ভক্ত। তাঁদের চায়ের দোকানের কাছেই রয়েছে দিগ্বিজয় ওয়েট লিফটিংসেন্টার। সেখানেই নানা সিনহাসানের কাছে সঙ্কেতকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন ২০১২ সালে।


২০১৭ সালে মহারাষ্ট্র জুনিয়র ভারোত্তোলনে সোনা জেতেন সঙ্কেত। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শনিবার পদক জিতে সঙ্কেত বলেছেন, 'এই পদক উৎসর্গ করলাম দেশের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। যাঁরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছিলেন।'


আরও পড়ুন: সাঁতারে পদক জয়ের আশা, ফাইনালে উঠলেন শ্রীহরি নটরাজ