কলকাতা: করোনা আবহে এমন অনেক কিছু দেখছি বা ঘটছে, যে সবের অভিজ্ঞতা আগে কখনও সেভাবে হয়নি। যেমন ইউরো কাপ ও কোপা আমেরিকা এক বছর করে পিছিয়ে গিয়ে কার্যত একই সঙ্গে হচ্ছে। ফুটবলার তো বটেই, ফুটবলপ্রেমী সমস্ত মানুষ উত্তেজনায় ছটফট করছে।


কোপা আমেরিকার প্রতি আমার বিশেষভাবে আকৃষ্ট হওয়ার কারণ রয়েছে। আমি ব্রাজিলের ফুটবলের বড় ভক্ত। ছোট থেকেই সাম্বার দেশের ফুটবল শিল্প আমাকে টানে। এবারও কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের খেলা দেখতে মুখিয়ে রয়েছি। ব্রাজিলের পাশাপাশি গ্রুপ 'বি'-র বাকি চার দল নিয়েও আলোচনা করে নিই।


গ্রুপ বি-তে রয়েছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভেনেজ়ুয়েলা, ইকুয়েডর ও পেরু। পাঁচ দলের মধ্যে সেরা অবশ্যই ব্রাজিল। ফুটবল ঐতিহ্য না হয় বাদই দিলাম, সাম্প্রতিক ফর্মে ব্রাজিল বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। শুধু আমি নয়, ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সকলেই হয়তো মেনে নেবেন যে, বহু বছর পর একটা দারুণ ব্রাজিল দল দেখা যাচ্ছে। দলের বেশিরভাগ ফুটবলার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চুটিয়ে খেলছে। ব্রাজিলের এই দলের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল সব পোজিশনে দারুণ ফুটবলার রয়েছে। গোলকিপার অ্যালিসন বেকার থেকে শুরু করে ডিফেন্সে মারকুইনহোস, এমার্সন রয়্যাল, রেনান লোদি, মাঝমাঠে ক্য়াসেমিরো, আক্রমণভাগে নেমার তো রয়েছেই, সঙ্গে ফিরমিনো, গ্যাব্রিয়েল জেসাস, রিচার্লিসন। এক কথায় কমপ্লিট দল ব্রাজিল।


বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে এখনও পর্যন্ত গ্রুপ শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। এর থেকেই বোঝা যায় কী রকম ছন্দে রয়েছে। তিনজন ফরওয়ার্ড নেমার, জেসাস ও রিচার্লিসন ফর্মে রয়েছে। ব্রাজিলের আক্রমণভাগ টুর্নামেন্টের সেরা। গোল করার ক্ষেত্রে নেমারের ওপর একটু বেশি নির্ভর করে ঠিকই। নেমার ক্লাব পর্যায়ে এত সফল। ফ্রান্সে গিয়ে যেন আরও ভাল খেলছে। নেমার নেমারের জায়গাতেই রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে যেরকম ফুটবল খেলছে, কোপা আমেরিকায় সেটা খেলতে পারলে গোল করার কোনও সমস্য়া হবে না।


ব্রাজিলের আর একটা বড় সুবিধা হল, নেমাররা খেলছে ঘরে মাঠে। এবারের কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল কলম্বিয়া ও আর্জেন্তিনায়। বিভিন্ন কারণে ওই দুই দেশ থেকে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিয়ে ব্রাজিলকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অপ্রত্যাশিতভাবে ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে নেমাররা। চেনা পরিবেশে, পরিচিত মাঠে খেলা সবসয়মই বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগায়। ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও সেই ব্যাপারটা কাজ করবে। নিজের দেশে খেলার একটা আলাদা অ্যাডভান্টেজ সব সময়েই রয়েছে। সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। সেই সুবিধা পাবে ব্রাজিলও।


সাম্বার দেশের ফুটবল দলের রিজার্ভ বেঞ্চও চমৎকার। ফুটবলে বলা হয়, যে দলের রিজার্ভ বেঞ্চ যতটা শক্তিশালী, দল হিসাবে তারা ততই বিপজ্জনক। ব্রাজিলের রিজার্ভ বেঞ্চটা দেখুন। ফ্যাবিনহো থেকে শুরু করে এমন কিছু ফুটবলার প্রত্যেক বিভাগেই রয়েছে যারা পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমে যে কোনও সময়ে ম্যাচের রং বদলে দিয়ে যেতে পারে।


ব্রাজিলকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বললে অত্য়ুক্তি হবে না। ব্রাজিলের সমর্থক বলে নয়, যুক্তি দিয়ে বিচার করেই এ কথা বলছি। সর্বোপরি তিতের মতো প্রখর বুদ্ধিধর কোচ রয়েছে। এই দল চ্য়াম্পিয়ন না হলে বেশ অবাকই হব। যদিও খেলাধুলোর ময়দানে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। আর এখন বিশ্বফুটবলের সবকটি দলের মধ্যে পার্থক্যটা এত সামান্য যে, নিজেদের দিনে যে কোনও দল যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। তবু মনে হচ্ছে, গতবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবারও কোপা আমেরিকা জয়ের সেরা দাবিদার। আর সেটা না হলে বেশ বিস্মিতই হবে সকলে।


গ্রুপের অন্য দলগুলির মধ্যে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর খুবই ভাল দল। কলম্বিয়া প্রত্যেক বড় টুর্নামেন্টেই ভাল খেলে। তবে ওদের কয়েকজন প্রথম সারির তারকা চোট বা অন্য কোনও কারণে নিষ্প্রভ। হামেজ় রদরিগেজ়কে চোটের জন্য দলে রাখেনি কোচ। যা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কারণ, রদরিগেজ়ের ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কোপা আমেরিকার আগে ম্যাচ ফিট হয়ে যেত। তবে কলম্বিয়ার কোচ ওকে দলে ফেরায়নি। আর এক তারকা রাদামেল ফালকাও তুরস্কের ক্লাব গালাতসারের হয়ে খেলার সময় মুখে গুরুতর চোট পেয়েছিল এবং এখনও সেরে ওঠেনি। তবে গত পাঁচ বছর ধরে দল হিসাবে ছন্দে রয়েছে কলম্বিয়া। দাভিদ অসপিনা গোলকিপার হিসাবে দুর্দান্ত। বুধবারই শক্তিশালী আর্জেন্তিনার কাছে দু গোলে পিছিয়ে পড়েও ড্র করেছে কলম্বিয়া। ইকুয়েডরও গত কয়েক বছরে ভাল ফুটবল উপহার দিয়েছে। কোপা আমেরিকায় ওরাও নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মুখিয়ে থাকবে।


ভেনেজুয়েলা আর পেরু লড়াই করবে। তবে ব্রাজিলকে খুব একটা বেগ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। ব্রাজিলের এই গ্রুপ থেকে পরের পর্বে যাওয়ার ব্যাপারে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কাপটাও সেলেসাও শিবিরেই দেখতে পাচ্ছি।


*সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন: সন্দীপ সরকার