গোইয়ানিয়া: বার্সেলোনার সঙ্গে এখনও নতুন চুক্তি হয়নি। তাঁকে পেতে ঝাঁপিয়েছে বিশ্বের সেরা এক ঝাঁক ক্লাব। কেন তিনি এখনও ফুটবল গ্রহের আকর্ষণের কেন্দ্রে, রবিবার ফের একবার তা প্রমাণ করে দিলেন লিওনেল মেসি।


আর্জেন্তিনার জার্সিতে ফ্রি কিক থেকে দুরন্ত গোল করলেন। আর সাজিয়ে দিলেন দুটি গোলের বল। কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরকে ৩-০ হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল লিওনেল স্কালোনির দল। আর আর্জেন্তিনার জয় হয়ে উঠল মেসি-ময়।


চলতি কোপা আমেরিকায় দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন মেসি। ইকুয়েডর ম্যাচের আগে পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তিনটি করে গোল করেছিলেন ও করিয়েছিলেন। রবিবারের পর নিজের গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ৪। আর গোলের পাস বাড়ানোর সংখ্যা হল পাঁচ।


ভারতীয় সময় রবিবার সকালের ম্যাচে শুরু থেকে ছিল আর্জেন্তিনার দাপট। গোটা ম্যাচে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেন রেফারি। যা নিয়ে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন আর্জেন্তিনার ফুটবলাররা। কিক অফের ১৬ মিনিটের মাথায় মেসির শট ইকুয়েডর বক্সে প্রেসিয়াডোর হাতে লাগে। তবে পেনাল্টি দেননি রেফারি।


২৩ মিনিটের মাথায় বিপক্ষ গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি মেসি। তাঁর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। যা দেখে অনেকে মনে করেছিলেন যে, দিনটি হয়তো মেসির নয়।



তবে মেসি হয়তো অন্যরকম ভেবেছিলেন। ম্যাচের বয়স তখন ৪০ মিনিট। নিকোলাস গঞ্জালেজ়কে পাস বাড়িয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ইকুয়েডর বক্সে ঢোকার মুখে গোলকিপারের কড়া ট্যাকলে সেই বল তাঁর পা থেকে বেরিয়ে যায়। সেই বল ধরে ফের বক্সের ডানদিকে রদ্রিগো দে পল-কে নিখুঁত পাস বাড়ান মেসি। জোরাল শটে ১-০ করে দেন দে পল। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ব্যবধানে।



দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ করতে মরিয়া ইকুয়েডর বারবার আক্রমণ করে আর্জেন্তিনা বক্সে। লা আলবিসেলেস্তেদের মাঝমাঠ তখন বলের দখল ধরে রাখতে হোঁচট খাচ্ছে। কয়েকবার গোলের সুযোগ তৈরিও করে ফেলেছিল ইকুয়েডর। তবে গোল হয়নি।


৭১ মিনিটে পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নামের অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। তিনি নামতেই ঝাঁঝ বাড়ে আর্জেন্তিনার আক্রমণের। ৮৪ মিনিটে ডিফেন্সের ভুলে দ্বিতীয় গোল হজম করে ইকুয়েডর। তাদের ডিফেন্ডারের ভুল করে বাড়ানো বল ধরে মেসিকে পাস দেন দি মারিয়া। তবে নিজে গোল লক্ষ্য করে শট নেননি মেসি। পরিবর্তে গোলের ঠিকানা লেখা পাস বাড়ান বক্সের বাঁদিকে ঢুকে পড়া লউতারো মার্তিনেজ়কে। গোল করতে ভুল করেননি তরুণ স্ট্রাইকার। ইন্টার মিলানে খেলা মার্তিনেজ় ২-০ করেন।


৮৮ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে দি মারিয়াকে ফাউল করেন পিয়েরো হিনক্যাপি। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ফ্রি কিক পায় আর্জেন্তিনা। ফ্রি কিক থেকে অনবদ্য গোল করে আর্জেন্তিনার ব্যবধান ৩-০ করেন মেসি। জাতীয় দলের জার্সিতে ৭৬টি গোল হয়ে গেল তাঁর। ম্যাচের পর মেসি বলেছেন, 'কঠিন ম্যাচ হল। জানতাম প্রতিপক্ষ সহজে ছাড়বে না। তবে শেষ পর্যন্ত এক কদম এগোতে পেরেছি। সেমিফাইনালে ওঠা প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। এই মাঠে খেলা সহজ ছিল না। সেমিফাইনালের আগে হাতে খুব কম সময়। ভাল মতো বিশ্রাম নিতে হবে। আমি সব সময় বলি ব্যক্তিগত সাফল্য গৌণ। দল হিসাবে একটা লক্ষ্য নিয়ে আমরা কোপা আমেরিকায় খেলতে এসেছি। দলের সকলে পরিবার ছেড়ে অনেকদিন বাইরে আছে। সকলের পরিশ্রমকে কুর্নিশ।' ম্য়াচের সেরা হয়েছেন মেসিই।


কোপা আমেরিকায় আর্জেন্তিনাকে কোনওদিন হারাতে পারেনি ইকুয়েডর। সেই রেকর্ড অক্ষত রেখে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলেন মেসিরা। শেষ চারে তাঁদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া।