লন্ডন: খেলার কথা ৯০ ওভার কিন্তু লর্ডসে দ্বিতীয় খেলা হল মাত্র ৭৫ ওভার। তাতে অবশ্য রোমাঞ্চের অভাব হল না। ফের এক টানটান দিনের খেলাশেষে ম্যাচ একেবারে ৫০-৫০। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৩৮৭ রানের জবাবে দিনের শেষে ভারতের স্কোর তিন উইকেটের বিনিময়ে ১৪৫ রান। টিম ইন্ডিয়া এখনও ২৪২ রানে পিছিয়ে। ভারতের হয়ে কেএল রাহুল (KL Rahul) ৫৩ ও ঋষভ পন্থ ১৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে জো রুট ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। লর্ডসে নিজের নবম শতরান পূরণ করতে খুব একটা সময় নিলেন না ইংল্যান্ডের মহাতারকা। দিনের প্রথম বলেই চার মেরে শতরান পূরণ করেন তিনি। তবে যশপ্রীত বুমরা (Jasprit Bumrah) অপরপ্রান্তে অনবদ্য এক ইনস্যুইংয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের স্টাম্প ভেঙে দেন। ৪৪ রানে আউট হন স্টোকস। এরপর পালা ছিল রুটের। সেঞ্চুরিয়ন ব্যাটার বুমরার বলেই প্লেডঅন হন। ঠিক তার পরের বলেই ক্রিস ওকসও সাজঘরে ফেরেন।

ওকসের হালকা খোঁচা বুমরা বা কিপার জুরেল শুনতে পারেননি বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হয়। কিন্তু স্লিপ ফিল্ডারদের পরামর্শে একেবারে দুই সেকেন্জ বাকি থাকতে ডিআরএস চান শুভমন গিল। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ওকসের ব্যাটে লেগেছে। তিনি খাতা খোলার আগেই আউট হন। শুরুতে তিন উইকেট পেয়েই তীব্র গতিতে ইংল্য়ান্ডকে অল আউট করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারত। এইসবের মধ্যে সিরাজের বলে জেমি স্মিথের একটি ক্যাচও মিস হয়। স্লিপে এক্ষেত্রে ক্যাচ ফেলেন রাহুল।

সেই জীবনদান পেয়ে তা কাজে লাগান স্মিথ। শুরুটা একটু বুঝেশুনে করলেও, নিজের ছন্দে ব্যাটিং করা শুরু করেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে একের পর এক বাউন্ডারি আসে। দেখতে দেখতে মাত্র ৫২ বলে আরও একটি অর্ধশতরান পূরণ করে ফেলেন ইংল্যান্ডের কিপার-ব্যাটার। স্মিথকে যোগ্য সঙ্গ দেন আটে নামা কার্স। একসময় যেখানে ইংল্যান্ডের তিনশো রান পার করা নিয়ে সংশয় ছিল, সেখানে এই দুই ব্যাটার মিলে ইংরেজদের ৩৫০ রানের গণ্ডি পার করান।

ভারতীয় দলের বিরক্তি বাড়ছিল। ঠিক এমন সময়েই দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের ঠিক পরেই আগ্রাসী স্মিথকে ৫১ রানে সাজঘরে ফেরান মহম্মদ সিরাজ। জোফ্রা আর্চারের উইকেট ভেঙে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন বুমরা। হাতে এক উইকেট রয়েছে, পরিস্থিতি বুঝে তাই ব্যাট চালানো শুর করেন ব্রাইডন কার্স। ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন। শেষমেশ ৫৬ রানে তাঁকে বোল্ড করে ইংল্যান্ড ইনিংস সমাপ্ত করেন সিরাজ। 

এরপর ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় দলের হয়ে যশস্বী জয়সওয়াল শুরুটা দুরন্ত করেছিলেন। ক্রিস ওকসের বিরুদ্ধে প্রথম ওভারেই তিনি তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান। তবে পরের ওভারেই জোফ্রা আর্চারের শিকার হন ভারতের বাঁ-হাতি ওপেনার। নিজের কামব্যাক ম্যাচে প্রথম ওভারেই সাফল্য পান আর্চার। তাঁর আগুনে গতি সামলাতে এরপর শুরুতে করুণ নায়ার ও আরেক ওপেনার কেএল রাহুলকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে দুই কর্ণাটকের ব্যাটার বেশ ভালভাবেই ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দুই বন্ধু অর্ধশতরানের পার্টনারশিপও গড়ে ফেলেন। 

তবে ঠিক যখন মনে হচ্ছিল নায়ার হয়তো অর্ধশতরান হাঁকাবেন, তখনই স্লিপে এক দুরন্ত ক্যাচ ধরে রুট তাঁকে ৪০ রানে সাজঘরে ফেরান। এই ক্যাচের সুবাদে রাহুল দ্রাবিড়কে পিছনে ফেলে রুট টেস্টে সর্বাধিক ক্যাচ ধরা আউট ফিল্ডার হয়ে গেলেন। এরপর গত ম্যাচের নায়ক, ভারতীয় অধিনায়ক শুভমন গিল ব্যাটে নামেন। তবে তিনি এই ম্যাচে বড় রান করতে ব্যর্থ। ১৬ রানে ওকসের বলে সাজঘরে ফেরেন গিল। অপরপ্রান্তে অবশ্য রাহুল নিজের ছন্দে খেলে অর্ধশতরান পূরণ করে ফেলেন। পন্থ তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন। দুইজনে মিলে ৩৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেছেন।