নয়াদিল্লি : বীরেন্দ্র সহবাগ বলে থাকেন, 'সুনীল গাওস্করের পর ভারতের সেরা টেস্ট ওপেনার গৌতম গম্ভীর।' শুধু টেস্টেই নয়, তাঁর 'ওস্তাদি' দেখা গিয়েছে একদিনের ক্রিকেটেও। আরব সাগরের তীরে ২০১১-র বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর সেই ৯৭ রানের ইনিংস কোনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী ভুলতে পারবেন না। কিন্তু, ক্রিকেটের আর একটা ফর্ম্যাটে ? সেখানেও কথা বলেছে তাঁর ব্যাট। উদ্বোধনী টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর ৭৫ রানের ইনিংসের ওপর ভর করেই হাতে প্রথমবার বিশ্বকাপ তুলে নিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কাজেই তিন ফর্ম্যাটেই যে ক্রিকেটার সমান তালে নিজেকে মিলে ধরেছেন, তাঁর হাতে যে ভারতীয় ক্রিকেটের দায়ভার সুরক্ষিত তা বলাইবাহুল্য।
সেকথারই প্রতিধ্বনী শোনা গিয়েছে জয় শাহের পোস্টে। 'নিজের কেরিয়ারে সব ভূমিকাই চমৎকারভাবে পালন করেছেন।' গম্ভীরকে ভারতীয় ক্রিকেটের হেড কোচ নিয়োগ নিয়ে জয় শাহের সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা-পোস্টে যেন গৌতমের ক্রিকেট-কেরিয়ারে সাফল্যের কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সত্যিই তো, গম্ভীরের কেরিয়ারে একবার নজর দিলেই সেকথা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সালে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেটে এক অর্থে 'রাজ' করেছেন গম্ভীর। তিন ফর্ম্যাটেই তিনি ছিলেন সফল ওপেনার। সময়ে সময়ে ব্যাট হাতে তিনি বীরেন্দ্র সেহওয়াগের থেকেও আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। প্রয়োজনে রাহুল দ্রাবিড়, ভিভি এস লক্ষ্ণণের ঘরানায় টেস্ট খেলে ক্রিজে পড়ে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যার সামগ্রিক ফল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১০ হাজারের বেশি রান। ২০০৭-এর টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল ও ২০১১-য় একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর অসাধারণ ইনিংস ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় লিখেছে।। গম্ভীরের নেতৃত্বেই কলকাতা নাইট রাইডার্স দু'-দু'বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
কেরিয়ারে প্রথম দিকের বেশ কিছুটা সময় সেরকম কাটেনি গম্ভীরের। অথচ রঞ্জি সার্কিটের বোলাররা তাঁর ব্যাটিং দক্ষতাকে সমীহ করতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ৩২ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে ছিল মাত্র ২টি শতরান। এরপর দলের সাময়িক ব্রাত্য হয়ে পড়েন। কিন্তু, ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করে ফের ফিরে আসেন। টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা মিটিয়ে নেন। তারপর আর থামেনি তাঁর সাফল্য়ের পথ। প্রত্যাবর্তনের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচেই সেঞ্চুরি। এরপর ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর সেই অনবদ্য ইনিংস। ৫৪ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কা মেরে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যার ওপর ভর করে ভারত ১৫৭ রান তোলে। পাকিস্তানকে ১৫২ রানে থামিয়ে দিয়ে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ভারত। এই সাফল্যের হাত ধরে টেস্টেও প্রত্যাবর্তন হয় গম্ভীরের। ২০০৮ এর অক্টোবর মাস থেকে ২০১০এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮টি সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরমধ্যে রয়েছে নেপিয়ারে ১১ ঘণ্টার সেই ম্যারাথন ইনিংসও।
তাঁর এই সাফল্যের জন্য পেয়েছেন একাধিক সম্মানও। গম্ভীরকে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে আইসিসি তাঁকে টেস্ট প্লেয়ার ঘোষণা করে। এরপর ২০১১য় মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালে ফের একবার প্রয়োজনের মুহূর্তে জ্বলে ওঠেন গম্ভীর। ৯৭ রানের ঝরঝরে ইনিংস খেলেন। আরও একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ধোনির টিম ইন্ডিয়া। ২০১৮ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তিনি অবসর নেন। তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানেও ভূষিত করা হয়েছিল। একবছর পর তিনি সংসদ সদস্য হন।
গৌতম গম্ভীরই হচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ। বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একথা ঘোষণা করলেন BCCI-এর সচিব জয় শাহ। সদ্যসমাপ্ত টি২০ বিশ্বকাপের পরই মেয়াদ শেষ হয়ে যায় রাহুল দ্রাবিড়ের। এরপর গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে জল্পনা ছিল। শেষমেশ এল সেই খবর, তিনিই নিচ্ছেন দ্রাবিড়ের জায়গা।