সুনীত হালদার, হাওড়া: পেশায় কারখানার শ্রমিক। মাসিক আয় মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। অথচ তাঁর নাকি সাত কোটি টাকা জিএসটি বাকি। তাই বকেয়া আদায় করতে ডোমজুড়ে তাঁর বাড়িতে আধিকারিকদের হানা এবং তল্লাশি। এমনই তাজ্জব ঘটনায় বিপর্যস্ত ডোমজুড়ের যুবক কার্তিক রুইদাস।

জানা গেছে ডোমজুড়ের খাটোরার বাসিন্দা কার্তিক রুইদাস (৩৫) জাতীয় সড়কের ধারে জালান কমপ্লেক্সের একটি কারখানায় কাজ করেন। তাঁর মাসিক বেতন মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরবেলায় যখন তিনি কারখানায় কাজ করছিলেন হঠাৎ তাঁর খাটোরার বাড়িতে রাজ্য জিএসটি অফিসের ৬ সদস্যের একটি দল হানা দেয়। পরিবারের লোকেদের ফোনে সাইকেলে চেপে কারখানা থেকে তড়িঘড়ি বাড়িতে ফেরেন কার্তিক। জিএসটি আধিকারিকরা কার্তিককে বলেন তাঁর সাত কোটি টাকা জিএসটি বাকি। শুধু তাই নয় সে কে ডি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কোম্পানির মালিক। সেখানে কার্তিকের নামে একটি ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টে প্রতি মাসে ৩৬ কোটি টাকা আদানপ্রদান হয়। সে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। অফিসারদের মুখে এসব কথা শুনে চোখ কপালে ওঠে কার্তিকের। আধিকারিকদের তিনি বলেন সে সামান্য বেতনে জালান কমপ্লেক্সের একটি কারখানায় কাজ করেন। দিন আমি দিন খাই অবস্থা তাঁর। ওই সামান্য আয়ে স্ত্রী এবং বাচ্চাদের নিয়ে সংসার চালান। জীবনে তিনি কোনওদিন কোন ব্যবসা করেননি। তাঁর ঠিকানা, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং ইলেকট্রিক বিলের তথ্য ব্যবহার করে কে বা কারা জি এস টি পোর্টালে তার নাম তুলে দিয়েছে। যদিও বাস্তবে তার সঙ্গে মিল নেই।

কার্তিকের ভাঙাচোরা বাড়ি এবং বাড়ির সামনের সরু রাস্তা দেখে জিএসটি আধিকারিকরা বুঝতে পারেন ওখানে কোন বড় গোডাউন নেই। দামি লোহার জিনিস গোডাউনে নেই। সরু রাস্তা হওয়ায় সেখানে লরি যাতায়াত কার্যত অসম্ভব। তারা বুঝতে পারেন  এর পেছনে দুষ্কৃতীদের হাত থাকতে পারে। তারা আরও দেখেন জিএসটি পোর্টালে যে দুটি মোবাইল নম্বর আছে সে দুটি ভুয়ো নম্বর। কার্তিকের মোবাইল নম্বর আলাদা।

এই ঘটনায় ওই যুবক ডোমজুড় থানা এবং হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। এই ঘটনার পেছনে কোনও সংঘটিত অপরাধ চক্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কার্তিক লিখিতভাবে জিএসটি আধিকারিকদের জানিয়েছেন ওই নামে কারখানার সঙ্গে সে যুক্ত নয়।

বাড়িতে ৯ বছরের মেয়ে আছে। আবার মাস দেড়েক আগে কার্তিক বাবুর সন্তান হয়েছে।  স্ত্রী এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। এর মধ্যে বাড়িতে হঠাৎ জি এস টি অফিসারদের হানায় আতঙ্কে রয়েছে গোটা পরিবার। ছাপোষা পরিবারটি বুঝে উঠতে পারছে না কী করণীয় তাঁদের।