লন্ডন: দুরন্ত বোলিংয়ের পর ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় দলের দুই ওপেনার, বিশেষ করে যশস্বী জয়সওয়াল শুরুটা দারুণভাবেই করেছিলেন। তবে অর্ধশতরানের দোরগোড়ায় সাজঘরে ফেরেন কেএল রাহুল। দিনশেষের আগে সাই সুদর্শনকেও আউট করে ইংল্যান্ড। দিনশেষে ভারতের স্কোর দুই উইকেটের বিনিময়ে ৭৫ রান। ক্রিজে ৫১ রানে ব্যাট করা যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) সঙ্গে চার রানে অপরাজিত রয়েছেন নাইট ওয়াচম্য়ান আকাশ দীপ। আপাতত ভারত ৫২ রানে ম্যাচে এগিয়ে রয়েছে। 

দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা একেবারেই ভারতের বিপক্ষে গিয়েছিল। গত রানের স্কোরের সঙ্গে মাত্র ২০ রান যোগ করেই চার উইকেট হারিয়ে অল আউট হয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। গাস অ্যাটকিনসন পাঁচ উইকেট নেন। এরপর ব্যাটে নেমে বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলির দাপুটে ব্যাটিংয়ে লাঞ্চের আগেই শতরানের গণ্ডি পার করে যায় ইংল্যান্ড। ছয় রানে প্রতি ওভারেরও অধিক গতিতে ব্যাট করছিলেন ইংরেজ ব্যাটাররা। ডাকেট ৪৩ রানে আকাশ দীপের বলে আউট হলেও, ক্রিজে অর্ধশতরান হাঁকিয়ে উপস্থিত ছিলেন ক্রলি।

তবে দ্বিতীয় সেশনেই ম্যাচে দুরন্তভাবে ফেরে ভারতীয় দল। ছয় উইকেট তুলে নেয় ভারতীয় দল। লাঞ্চের পরপরই অর্ধশতরান হাঁকানো ক্রলিকে ৬৪ রানে সাজঘরে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর সফরটা শুরু করেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ (Prasidh Krishna)। অপরপ্রান্ত থেকে মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj) ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অলি পোপকে ২২ রানে সাজঘরে ফেরান। ক্রিজে অবশ্য তখনও ভারতের সম্ভবত সবথেকে বড় কাঁটা জো রুট উপস্থিত ছিলেন। ইংল্যান্ড তারকাকেও কিন্তু সেই সিরাজই আউট করেন। তাঁর উইকেটটা যেন পোপের উইকেটের একেবারে কার্বন কপি। উভয় ব্যাটারই সিরাজের ইনস্যুইংয়ে এলবিডব্লু হন।

আট ওভারের এক স্মরণীয় স্পেলে এরপর সিরাজের পরবর্তী শিকার ছিলেন জেকব বেথেল। তিনিও এলবিডব্লুই হন। দু'শোর গণ্ডি পার করার আগে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। তবে সাত নম্বরে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাটে নামেন আরেক আগ্রাসী ইনফর্ম ব্যাটার জেমি স্মিথ। তিনি আগ্রাসী মেজাজেই ব্যাট করার প্রচেষ্টায় ছিলেন। তবে লম্বা স্পেলের পর ক্লান্ত সিরাজকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। তাঁর এন্ড থেকেই বল হাতে পান প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। অনেকেই শঙ্কায় ছিলেন কৃষ্ণ ইংল্যান্ডের ওপর চাপ বজায় রাখতে পারবেন তো? বলা বাহুল্য কৃষ্ণ শুধু চাপ বজায় রাখলেন না, চা বিরতির আগে শেষ ওভারে জোড়া সাফল্যও পেলেন তিনিই।

কাট মারতে গিয়ে স্লিপে রাহুলের হাতে ধরা দেন স্মিথ। এরপর আরেক জেমিকেও ফেরান তিনি। ওভারটন খাতা খোলার আগেই আউট হন। এই উইকেটের সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় সেশন সমাপ্ত হয়। চা পানের বিরতির পর ইংল্যান্ড ইনিংস গুটিয়ে ফেলতে কিন্তু বেশি সময় নেয়নি ভারতীয় দল। তৃতীয় সেশনে ইংল্যান্ডের শেষ ভরসা ছিলেন হ্যারি ব্রুক। তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য ক্রিজে উপস্থিত ছিলেন গাস অ্যাটকিনসন। তাঁরা মিলে ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে লিড নিতেও সাহায্য করেন। নিজের ব্যাটিং দক্ষতায় ব্রুককে ভরসা জোগাচ্ছিলেন অ্যাটকিনসন। তবে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের শর্ট লংথের বলে বড় শট মারতে গিয়েই মিড অনে ধরা দেন অ্যাটকিনসন।

জশ টাঙ ব্যাটে হাতে ব্রুককে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন। বেশ জমাটি কয়েকটি রক্ষণাত্মক শটও খেলেন তিনি। তাঁর সহায়তা পেয়ে ব্রুকও বেশ নজরকাড়া এক হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন। তবে তারপর আর বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। ৫৩ রানে সিরাজের বলে বোল্ড হন। ম্যাচে চতুর্থ সাফল্য পান ভারতীয় ফাস্ট বোলার। চোটের কবলে পড়া ক্রিস ওকস এই ম্যাচে আর খেলতে পারবেন না বলে ইংল্যান্ড বোর্ডের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল। তাই ব্রুক আউট হতেই ইংল্যান্ডের ইনিংসও শেষ হয়ে যায়। 

দুরন্ত বোলিংয়ের পর ভারতীয় দল ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভাল করার প্রয়োজন ছিল। টিম ইন্ডিয়ার ওপেনাররা ঠিক সেটাই করলেন। শুরুতে প্রথম দুই ওভার মেডেন দিলেও, তারপরই ব্যাট চালাতে শুরু করেন যশস্বী। প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হয়ে পরবর্তীতে গৌতম গম্ভীর কাছে হালকা বকাঝকাও খেয়েছিলেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছিল। তবে এদিন যশস্বীই ভারতের হয়ে সিংহভাগ রানটা করেন। অপরপ্রান্তে কেএল রাহুল নিজের ছন্দে ব্যাট করছিলেন। 

প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ওপেনারদের মতো দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণ না হলেও, প্রায় ছয় রান প্রতি ওভারেই এগোচ্ছিল ভারত। তবে হঠাৎই রাহুল স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ৪৬ রানে ভাঙে ওপেনিং পার্টনারশিপ। সাই সুদর্শন এরপর ব্যাটে নেমে যশস্বীর সঙ্গে জুটি বেঁধে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। দুই বাঁ-হাতি ওপেনারই এই সময় মোট তিনবার জীবনদান পান। সুদর্শন সেই জীবনদান কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি শেষবেলায়  রানে আউট হলেও যশস্বী অর্ধশতরান পূরণ করে ক্রিজে উপস্থিত রয়েছেন। ম্যাচ কিন্তু আপাতত ৫০-৫০। কালকের দিনের খেলা ওপরই ম্যাচের ভাগ্য নির্ভরশীল। এক টানটান তৃতীয় দিনের পটভূমি কিন্তু তৈরি।