কলকাতা: সদ্যই আইপিএলের মহারণ শেষ হয়েছে। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ২ জুন থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (T20 World Cup 2024) আসর। এবারের বিশ্বকাপে ২০টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। ২০ দলকে পাঁচটি দলের চারটি গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আজ আমরা এই পাঁচ গ্রুপের মধ্যে প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ গ্রুপ 'এ' নিয়ে আলোচনা করব।
এই গ্রুপ 'এ'তেই রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দল (Indian Cricket Team)। আবার টিম ইন্ডিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানও (Pakistan Cricket Team) রয়েছে এই গ্রপেই। ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও কানাডা, আয়ারল্যান্ড এবং অন্যতম আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এই গ্রুপ তৈরি। দেখা যাক এই গ্রুপের দলগুলি কেমন।
ভারত
এক দশকেরও অধিক সময় ধরে কোনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি ভারতীয় দল। এক দশকের এই ট্রফির খরা কাটাতেই এবার মাঠে নামবে টিম ইন্ডিয়া। গত বছর ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছেও খালি হাতেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ভারতকে। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের কান্নার সাক্ষী ছিল আমদাবাদ। সেই ছবি বদলাতে বদ্ধপরিকর ভারত রোহিতের নেতৃত্বে টুর্নামেন্টে নামবে।
এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই টিম ইন্ডিয়ার দলে প্রত্যাবর্তন ঘটাচ্ছেন ঋষভ পন্থ। রোহিত, কেহলি, যশস্বী জয়সওয়ালদের নিয়ে তৈরি ভারতের টপ অর্ডার বেশ শক্তিশালী। মিডল অর্ডারে শিবম দুবে, হার্দিক পাণ্ড্য, পন্থরা বৈচিত্র প্রদান করবেন। ফাস্ট বোলিং বিভাগে রয়েছেন মহম্মদ সিরাজ, যশপ্রীত বুমরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পিচগুলির কথা মাথায় রেখেই হয়তো চারজন স্পিনার নিয়ে টিম ইন্ডিয়া বিশ্বকাপের লড়াইয়ে নামবে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের এই পরিকল্পনা কতটা সফল হয়, সেটা সময়ই বলবে।
তবে দুঃশ্চিন্তা হয়তো নয়, কিন্তু অনেকেই আইপিএল ফাইনালে টিম ইন্ডিয়ার প্রাথমিক দলের কোনও সদস্যর না থাকাটায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই উদ্বেগ কাটিয়ে টিম ইন্ডিয়া দ্বিতীয়বার বিশের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় কি না, সেটা দেখার। ৫ জুন আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে ভারতীয় দল বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে। ৯ জুন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মেগাডুয়েল।
পাকিস্তান
ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, পাকিস্তানেরও কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তীরে এসে তরী ডুবেছে। ২০২১ সালে পাকিস্তান বিশের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। ২০২২ সালে একধাপ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আয়োজিত মেগা টুর্নামেন্টে ফাইনালে পৌঁছয় তাঁরা। তবে উভয়ক্ষেত্রেই জয় অধরাই রয়ে গিয়েছে। ফের একবার বাবর আজম অ্যান্ড কো বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে। তবে গত বারের বিশ্বকাপ এবং এই বিশ্বকাপের মধ্যে কিন্তু অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। বাবর আজমের পাকিস্তান অধিনায়কের পদ থেকে বিদায়ের পর প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। এবার তাই ক্যাপ্টেন বাবরের দিকেও কিন্তু সকলের নজর থাকবে।
শাহিন আফ্রিদি, হ্যারিস রউফ, নাসিম শাহদের নিয়ে তৈরি পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিং আক্রমণ বিশ্বের যে কোনও দলের ব্যাটারদের ঘুম উড়াতে পারে। মহম্মদ আমিরের প্রত্যাবর্তনে এই আক্রমণের শক্তি আরও বেড়েছে। আমিরের মতো ফিরেছেন ইমাদ ওয়াসিমও। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তবে আপাতদিক থেকে তাকিয়ে পাকিস্তানের স্পিন বোলিং আক্রমণটা খানিক দুর্বল বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে মহম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম, ফখর জামানদের নিয়ে তৈরি পাকিস্তান ব্যাটিং কিন্তু বেশ শক্তিশালী। তাঁরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারে কি না, সেইদিকে নজর থাকবে। পাকিস্তান দল ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে নামার আগে আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৬ তারিখ ম্যাচ দিয়ে নিজেদের অভিযান শুরু করবে।
আয়ারল্যান্ড
অতীতে আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডের মতো দলকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে হারিয়েছে। কোনওমতেই তাঁরা আর হেলাফেলার পাত্র নয়। এইবার মিলিয়ে নাগাড়ে অষ্টমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা পাকা করেছে আইরিশরা। দলের ব্যাটিং যথেষ্ট শক্তিশালী। টপ অর্ডারে অ্যান্ডি বালবার্নির সঙ্গে ওপেন করতে দেখা যাবে পল স্টার্লিংকে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের অন্যতম তিনি। জশ লিটলের আইপিএলের মঞ্চেও নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিশ্বকাপে তিনি আইরিশদের বোলিংয়ের বড় ভরসা হতে চলেছে। এছাড়া, ক্যাম্ফার, বেন ম্যাকার্থিরা আয়ারল্যান্ড দলকে ভারসাম্য প্রদান করেন। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়েই স্টার্লিংদের অভিযান শুরু হবে।
যুক্তরাষ্ট্র
এই টুর্নামেন্টটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঐতিহাসিক এক টুর্নামেন্ট হতে চলেছে। এই প্রথম তাঁরা কোনও আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে। যুগ্মআয়োজক হিসাবে সরাসরি টুর্নামেন্টের ছাড়পত্র পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার দুই দশক পর আইসিসির কোনও মেগা টুর্নামেন্টে আবারও নামছে তাঁরা। মোনাঙ্ক পটেলের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু সদ্যই বাংলাদেশকে হারিয়েছে। তাই তাঁদের একেবারে হেলাফেলা করার কোনও কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র দলে আলি খানও রয়েছে। তিনিআইপিএলে একদা কেকেআরের অংশ ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে, আবু ধাবির টি-টোয়েন্টি লিগে নাইটদের হয়ে খেলেন তিনি। আলি কেমন পারফর্ম করেন, সেইদিকেও কিন্তু নজর থাকবে বটে।
কানাডা
সবার শেষে যেই দলটির কথা আলোচনা করব, সেটা হল কানাডা। পড়শি যুক্তরাষ্ট্রের মতো এটা কানাডারও প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অবশ্য কানাডা এর আগে একাধিক বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে। তবে ১৯৭৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, কানাডার অংশ নেওয়া সবকয়টি বিশ্বকাপই ছিল ৫০ ওভার ফর্ম্যাটের। কানাডা দলে কিন্তু আর যাই হোক অভিজ্ঞতার কমতি নেই। সাদ বিন জাফারের নেতৃত্বাধীন দলে মাত্র চারজন এমন ক্রিকেটার রয়েছেন যাদের বয়স ৩০-র কম। জুনেইদ সিদ্দিকি, জেরেমি গর্ডনরা এই দলকে ভারসাম্য প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামবে কানাডা। দেখা যাক তাঁরা এই বিশ্বকাপে কতটা নজর কাড়তে পারে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় দলের কোচ হতে আগ্রহী সচিন, ধোনি? আবেদনপত্র জমা দিলেন নরেন্দ্র মোদিও!