কলকাতা: বিশ্বকাপ (ODI World Cup) আর অস্ট্রেলিয়া (Australian Cricket Team)! এক সময় এই দুইটি শব্দ যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল। একমাত্র দল হিসাবে অজ়িরা ১৯৯৯ থেকে টানা তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছে। সর্বাধিক পাঁচবার ৫০ ওভারের বিশ্বজয়ের রেকর্ডও অজ়িদের দখলেই। সেই অস্ট্রেলিয়া এবার ভারতের মাটিতে নিজেদের ষষ্ঠ খেতাব জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামতে চলেছে।


দল, ফর্ম, পরিবেশ, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, অস্ট্রেলিয়া দল কিন্তু প্রতিটি বিশ্বকাপেই অন্যতম ফেভারিট হিসাবে মাঠে নামে এবং ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে। এই বারের বিশ্বকাপেও অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। 


সাম্প্রতিক ফর্ম


বিশ্বকাপের প্রাক্কালে অস্ট্রেলিয়ার ফর্মের বিষয়ে যতটা কম বলা যায় ততই ভাল। মেগা টুর্নামেন্টের আগের মাসের শুরুটা কিন্তু অজ়িরা খারাপ করেননি। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাদেরই ঘরের মাঠে পাঁচ ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ়ের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে শুরুটা দারুণভাবে করেছিলেন অজ়িরা। তবে তারপরেই নাগাড়ে পাঁচ হার। প্রোটিয়া এবং ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ় হারেন অজ়িরা। ভারতকে তিন ম্যাচের সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে হারালেও, প্যাট কামিন্সদের সাম্প্রতিক ফর্ম যে ভাল নয়, তা বলাই বাহুল্য।


শক্তি


অস্ট্রেলিয়ার দলের সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট হল তাঁদের দলের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা। মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc), প্যাট কামিন্স (Pat Cummins), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা (Glenn Maxwell) ভারতের এই পরিবেশে অতীতে বহুবার খেলেছেন এবং বহু সাফল্য অর্জন করেছেন। তাই বাকি দলগুলির মতো তাঁদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার তেমন কোনওরকম সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ওয়ার্নার কিন্তু গোটা বছর ধরেই দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন। অজ়ি ওপেনার এই বছর ইতিমধ্যেই নয় ম্যাচে ১১৯.২৬ স্ট্রাইক রেটে ৩৯০ রান করে ফেলেছেন। ইনিংসের শুরুতে তাঁর ফর্ম দলের অন্যতম শক্তিশালী পক্ষ। আর মিচেল স্টার্ক তো রয়েছেনই। এই বছর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার ২-১ ভারতীয় দলকে ওয়ান ডে সিরিজ়ে পরাজিত করে। স্টার্ক সেই সিরিজ়ে আট উইকেট নেন। তিনি চোট সারিয়ে সদ্য ফিরলেও, বিশ্বকাপের পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক ভারতের পিচে বিশেষ করে বল রিভার্স সুইং করিয়ে প্রতিপক্ষদের উইকেট ছিটকে দিতে পারেন। 


দুর্বলতা


ভারতের পিচ প্রথাগতভাবে স্পিন সহায়ক। সেখানেই অস্ট্রেলিয়ার খানিক সমস্যা রয়েছে। দলে তিন তিনটি বিশ্বমানের ফাস্ট বোলার থাকলেও, প্রথম সারির স্পিনার বলতে কেবল একজনই। তিনি অ্যাডাম জাম্পা। অজ়ি লেগ স্পিনার সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বেশ ভাল পারফর্ম করেছেন এবং তাঁর ভারতে খেলার যথেষ্ট অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে অ্যাস্টন অ্যাগার চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় তিনি ছাড়া আর কোনও প্রথম সারির স্পিনারই দলে নেই। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ট্র্যাভিস হেডরা পার্ট টাইম স্পিনার মাত্র। এছাড়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিনদের নিয়ে তৈরি অস্ট্রেলিয়ান মিডল অর্ডারও খুব একটা ভাল ফর্মে, যা টুুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়াকে ভোগাতে পারে।


চমক দিতে তৈরি


ক্যামেরন গ্রিনের (Cameron Green) জন্য সদ্য সমাপ্ত ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে সিরিজ়ে ভাল পারফর্ম করতে পারেননি। স্পিনারদের সামলাতে তাঁকে নাজেহাল হতে হয়েছে। তবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট মহলে তাঁকেই পরবর্তী প্রজন্মের সবথেকে বড় তারকা বলে মনে করা হয়। সেই দক্ষতার উপর আস্থা রেখেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বিরাট দামে তাঁকে আইপিএলে দলে নিয়েছিল। নিজের প্রথম মরশুমেই তিনি ৫০-র অধিক গড়ে রান করেছেন, হাঁকিয়েছিলেন শতরানও। তাই ভারতীয় পিচ তাঁর কাছে অচেনা নয়। ১৪০-র অধিক গতিতে বল করে তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদেরও চাপে ফেলতে পারেন। তুলনামূলক অভিজ্ঞ, তারকাখচিত অস্ট্রেলিয়ান দলে, ২৪ বছর বয়সি গ্রিনের মধ্যে কিন্তু লাইমলাইট কেড়ে নেওয়ার যথেষ্ট মালমশলা রয়েছে। 


গেমচেঞ্জার


অস্ট্রেলিয়ান দলে একাধিক গেমচেঞ্জার রয়েছেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো ব্যাটার নিজের দিনে প্রতিপক্ষের সব পরিকল্পনা লন্ডভন্ড করে দিতে পারেন। ভারতের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডেতে চার উইকেটে নিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে তাঁর বোলিং হাতটাও মন্দ নয়। তবে একজনকে বেছে নিতে হলে, তিনি হবেন মিচেল স্টার্ক । বিশ্বকাপের মঞ্চে ইতিমধ্যে ১৮ ম্যাচ খেলে ৪৯টি উইকেট নিয়ে ফেলেছেন তিনি। বিশ্বমঞ্চে স্টার্ক বরাবরই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। গত দুই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক হয়েছিলন তিনি। নতুন বল হোক বা পুরনো, স্টার্ক নিজের গতি, সুইং এবং নিখুঁত ইয়র্কারে এক ওভারেই ম্যাচের রং বদলে দিতে সক্ষম। তিনিই অজ়ি দলের সবথেকে বড় গেমচেঞ্জার।


বিশ্বকাপের দল: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, অ্যাডাম জাম্পা, জস ইংলিশ (উইকেটরক্ষক), ট্র্যাভিস হেড, মার্কাস স্টইনিস, মার্নাস লাবুশেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ডেভিড ওয়ার্নার, জস হ্যাজেলউড, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), মিচেল স্টার্ক, ক্যামেরন গ্রিন, সন অ্যাবাট


বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সূচি: 



  • বনাম ভারত, চেন্নাই, ৮ অক্টোবর, রবিবার, দুপুর ২

  • বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, লখনউ, ১২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২

  • বনাম শ্রীলঙ্কা, লখনউ, ১৬ অক্টোবর, সোমবার, দুপুর ২

  • বনাম পাকিস্তান, বেঙ্গালুরু, ২০ অক্টোবর, শুক্রবার, দুপুর ২

  • বনাম নেদারল্যান্ডস, নয়াদিল্লি, ২৫ অক্টোবর, বুধবার, দুপুর ২

  • বনাম নিউজ়িল্যান্ড, ধর্মশালা, ২৮ অক্টোবর, শনিবার, সকাল ১০.৩০

  • বনাম ইংল্যান্ড, আমদাবাদ, ৪ নভেম্বর, শনিবার, দুপুর ২

  • বনাম আফগানিস্তান, মুম্বই, ৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার, দুপুর ২

  • বনাম বাংলাদেশ, পুণে, ১১ নভেম্বর, শনিবার, সকাল ১০.৩০


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial


আরও পড়ুন: স্পিনারদের হাতে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ ভাগ্য, তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে পারবেন রশিদরা?