কলকাতা: মরশুম আসে। মরশুম যায়। ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টায়। রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy) বাংলার হতাশার ছবিটা বদলায় না। শেষ ট্রফি জয়ের স্মৃতিও যেন উবে যেতে বসেছে। দীর্ঘ ৩৪ বছর কেটে গিয়েছে রঞ্জি-হীন বঙ্গ ক্রিকেট। রাত পোহালেই ফের এক রঞ্জি অভিযান শুরু করতে চলেছে বাংলা। লখনউয়ের একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে বাংলার প্রতিপক্ষ উত্তর প্রদেশ (Bengal vs UP)। গত মরশুমে যাদের সঙ্গে ম্যাচে খারাপ আবহাওয়ার জন্য পয়েন্ট নষ্ট হওয়ার হাহুতাশ এখনও রয়েছে বাংলা শিবিরে। শুক্রবার প্রথম ম্যাচ। তার আগে লখনউ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে একান্ত, দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল।


প্রশ্ন: রঞ্জি অভিযান শুরু হচ্ছে। প্রথম ম্যাচের আগে প্রস্তুতি কেমন হল?


লক্ষ্মীরতন শুক্ল: নতুন মরশুম। সকলের প্রস্তুতি, সকলের পরিশ্রম, বাংলার ক্রিকেটের ভাল ফলের জন্য সকলের যে সংকল্প থাকে, সেটা এবার মাঠে প্রয়োগ করার সময় এসেছে। রঞ্জি ট্রফি শুরু হতে চলেছে। সকলেই খুব রোমাঞ্চিত। গত কয়েক মাস ধরে যতটা সম্ভব প্রস্তুতি সেরে নিয়েছি। বৃষ্টি বাধা ছিল। তবে আউটডোর, ইন্ডোর মিলিয়ে আমাদের প্র্যাক্টিস ভাল হয়েছে। প্রত্যেকটা ম্যাচই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আজ ভাল প্র্যাক্টিস হয়েছে। ম্যাচের আগেও সবরকম ঘষামাজা করে রঞ্জি অভিযান শুরু করে দেব।


প্রশ্ন: এবারের দলে একদিকে ঋদ্ধিমান সাহা, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞরা ফিরেছেন, অন্যদিকে যুধাজিৎ গুহ, শুভম দে-র মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা ডাক পেয়েছেন। সব মিলিয়ে দলের ভারসাম্য কেমন দেখছেন?


লক্ষ্মীরতন: দলে এমন কিছু নতুন ও প্রতিভাবান ছেলে এসেছে যারা যে কোনও সময়ে প্রথম একাদশে সুযোগ পাবে। অনুষ্টুপ নতুন অধিনায়ক। গোটা দল মাঠে নামার জন্য ছটফট করছে। ঋদ্ধিমান সাহা অনেক দিন পর বাংলার হয়ে খেলবে। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ও ফিরেছে। দারুণ ব্যাপার এটা। দলে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুণ মিশেল রয়েছে।


প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচ বাইরের মাঠে হওয়ায় কি দল কিছুটা চাপমুক্ত? নাকি বাইরের মাঠে খেললে স্নায়ুর যুদ্ধ আরও প্রবল হয়?


লক্ষ্মীরতন: প্রথম ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলছি না বাইরের মাঠে, সেগুলো কোনও বিষয়ই নয়। খেলার সঙ্গে ঘরে খেলছি না বাইরে সেই সম্পর্ক নেই। দুই দলই একই মাঠে, একই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে খেলবে। নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে আমাদের। খেলাধুলোর জগৎ এই জন্যই কঠিন। উত্তেজকও বটে। খেলোয়াড়েরা কেউ ভাবেই না কোন ম্যাচ ঘরের মাঠে আর কোন ম্যাচ বাইরে খেলতে হবে।


প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ উত্তর প্রদেশ দলে রয়েছেন নীতীশ রানা, যশ দয়ালদের মতো ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলের নামীরা। বিপক্ষকে কতটা শক্তিশালী মনে হচ্ছে?


লক্ষ্মীরতন: রঞ্জি ট্রফি ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা টুর্নামেন্ট। এখানে কোনও সহজ প্রতিপক্ষ, কঠিন প্রতিপক্ষ হয় না। সব দলই শক্তিশালী। আমি সব সময় প্রতিপক্ষকে সম্মান করে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলায় বিশ্বাস করি। এবারও সেই কৌশলের বদল হবে না।


প্রশ্ন: অভিযান শুরুর আগে ছেলেদের জন্য গুরু লক্ষ্মীর পরামর্শ কী?


লক্ষ্মীরতন: দলের সকলে খুব পরিণত। আমার কাজ প্র্যাক্টিস করানো, উৎসাহ দেওয়া। যেটা করে থাকি, কোচ হিসাবে নিজের সেরাটা দিচ্ছি। মাঠে নেমে ছেলেদের পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে হবে। লম্বা মরশুম। প্রচুর ম্যাচ। দলকে এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে।


প্রশ্ন: উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে নির্বাচিত দলের সকলকে কি পাওয়া যাচ্ছে?


লক্ষ্মীরতন: প্রথম ম্যাচে আকাশ দীপকে সম্ভবত পাব না। বাকি সকলেই রয়েছে। মুকেশ কুমার খেলছে। অভিমন্যু খেলছে। ওর সঙ্গে সুদীপ ওপেন করবে। সুদীপ ঘরামি তিনে, চারে রুকু (অনুষ্টুপ মজুমদার), পাঁচে অভিষেক পোড়েল, ছয়ে ঋদ্ধি, সাতে শাহবাজ আমেদ। বোলিং বিভাগটা একটু ভেবে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।


প্রশ্ন: উইকেট কেমন দেখলেন?


লক্ষ্মীরতন: একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ থেকে পেসাররা সাহায্য পাবে বলে মনে হচ্ছে। তবে ম্যাচের মূল পিচ এখনও দেখিনি। ম্যাচের আগে বুঝতে পারব। সেই মতো চূড়ান্ত দল ঠিক করব।


প্রশ্ন: ক্রিকেটার হিসাবে সব সময় মাঠে জেতার মন্ত্র নিয়ে ঝাঁপাতেন। কিন্তু রঞ্জি জিততে পারেননি কখনও। কোচ হিসাবে সেই আক্ষেপ মেটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন? বারবার লাস্ট ল্যাপে এসে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে...


লক্ষ্মীরতন: আমরা যখন খেলতাম তখনও কখনও ফল ভাল হয়েছে, কখনও খারাপ হয়েছে। সব রকম মিলিয়ে এগোতে হয়। গত বছরের আগের মরশুমে ফাইনালে অল্পের জন্য হারতে হয়েছিল। গতবার পাঁচ বছর পর বিজয় হাজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছিলাম, টি-২০-তে ভাল খেলেছিলাম। গতবার রঞ্জিতে উত্তর প্রদেশ ম্যাচটা পুরো খেলা হলে কে বলতে পারে আমরা কোথায় শেষ করতাম। ট্রফি জেতাই মূল লক্ষ্য। প্রাক্তন ক্রিকেটার ও কোচ হিসাবে চাইব ছেলেরা মাঠে নেমে বাংলার হয়ে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিক।


প্রশ্ন: গোটা টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা কি একত্রে করে নিয়ে এগোচ্ছেন, না অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা?


লক্ষ্মীরতন: আমি সব সময়ই ম্যাচ ধরে ধরে, এমনকী, দিন ধরে, সেশন ধরে এগনোয় বিশ্বাসী। প্রত্যেক দিন খেলা পরিবর্তন হতে থাকে।


প্রশ্ন: কোচ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ফিটনেসে এত জোর দেন কেন?


লক্ষ্মীরতন: কোচ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রাক মরশুম ট্রেনিংয়ে জোর দিই। ফিটনেস ট্রেনিং ভাল হলে সেটার সুফল মাঠে পাওয়া যায়। ফিটনেস ছাড়া খেলা হয় না। ছেলেরা উন্নতি করছে। আইপিএলে আবার বাংলার ছেলেরা ভাল খেলছে। আগের চার-পাঁচ বছরের ছবিটা পাল্টাচ্ছে।


প্রশ্ন: টুর্নামেন্টের আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কী বললেন?


লক্ষ্মীরতন: দাদা ফোন করেছিল। কথা হয়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছেলেদের উৎসাহ দিয়ে কিছু বলছে, তরুণদের জন্য এর চেয়ে বড় কিছু মোটিভেশন হতে পারে না।







আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।