কলকাতা: তাঁর সামনে পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।
বাংলার জার্সিতে দু'বছর পর প্রত্যাবর্তন। সেই বাংলা, যেখানে বছর তিনেক আগে তিনি কার্যত ব্রাত্য হয়ে পড়ছিলেন। সব ম্যাচে খেলানো হচ্ছিল না। হতাশায়, নতুন সুযোগের খোঁজে বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ফেরার পর প্রথম ম্যাচেই সামনে এমন এক চ্যালেঞ্জ, যার মুখোমুখি আগে কখনও হননি। বরাবর মিডল অর্ডারে ব্যাট করে আসা তরুণকে বলা হয়, ইনিংস ওপেন করতে হবে।
পরীক্ষায় পিছপা হননি সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (Sudip Chatterjee)। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। যার ফল?
রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) প্রথম ম্যাচে উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে বাংলা (Bengal vs UP) ইনিংসের উজ্জ্বলতম মুখ হয়ে রইলেন বারাসতের বাঁহাতি ব্যাটার। লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করলেন সুদীপ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কেরিয়ারের ত্রয়োদশ শতরান।
আনলাকি থার্টিন যে আপনার কাছে লাকি থার্টিন হয়ে দাঁড়াল? শুক্রবার বাংলা বনাম উত্তর প্রদেশ ম্যাচের প্রথম দিনের খেলার শেষে লখনউ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে সুদীপ হেসে বললেন, 'সত্যিই তাই। বেশ আলাদা অনুভূতি হচ্ছে।'
বাংলায় প্রত্যাবর্তনের মঞ্চে এই সেঞ্চুরিকে কেরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করছেন সুদীপ। বলছেন, 'ম্যাচের পরিস্থিতির নিরিখে হয়তো এই সেঞ্চুরি আমার সেরা নয়, তবে কেরিয়ারের কথা বললে অবশ্যই এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার হয়ে এর আগে ১০টি সেঞ্চুরি করেছি। তারপর ২ বছর ত্রিপুরার হয়ে খেলি। সেখানে দু'টি সেঞ্চুরি করি। তবে ত্রয়োদশ সেঞ্চুরিটা স্পেশ্যাল।'
কাকে উৎসর্গ করবেন এই ইনিংস? 'মা-বাবা ও স্ত্রীকে। আর বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাংলায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ওঁরা সকলেই আমার পাশে ছিলেন। সাহস জুগিয়েছেন।' যোগ করলেন, 'প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলা হোক বা ত্রিপুরা - কোনও দলের হয়েই আগে কখনও ইনিংস ওপেন করিনি। এবার যখন ইনিংস ওপেন করতে বলা হল, চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম। আমি জানতাম ফিরে আসার জন্য এই পরীক্ষা দিতেই হবে।'
নিজেকে নতুন করে প্রমাণের তাগিদ বা চাপ রয়েছে? সুদীপ অকপট। বলছেন, 'অস্বীকার করব না যে, আলাদা একটা চাপ তো ছিলই। তবে একটা ম্যাচে নয়, সব ম্যাচে ভাল খেলতে হবে। রঞ্জি ট্রফি লম্বা টুর্নামেন্ট। বাংলা দীর্ঘদিন রঞ্জি জেতেনি। সকলে মিলে এবার ট্রফিটা জেতার জন্য ঝাঁপাব।'
সুদীপ ২২৭ বলে ১১৬ রান করেছেন। বড় রান পেয়েছেন আর এক সুদীপ - সুদীপ ঘরামিও। দলীপ ট্রফি ও ইরানি কাপে দুরন্ত ব্যাটিং করে আসা অভিমন্যু ঈশ্বরণ মাত্র ৫ রান করে আউট হয়ে যান। ১৪/১ স্কোর থেকে দুই সুদীপ মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ১৯৮ রান যোগ করেন। ৯০ রান করে ফেরেন সুদীপ ঘরামি।
তবে এরপরই আচমকা ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে বাংলা। মাত্র ৫৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়েছে বাংলা। ২১২/১ থেকে দিনের শেষে বাংলার স্কোর ২৬৯/৭। ব্যাট হাতে ব্যর্থ অনুষ্টুপ মজুমদার (১), অভিষেক পোড়েল (২), ঋদ্ধিমান সাহা (০), ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় (১২)। ক্রিজে রয়েছেন শাহবাজ আমেদ (২৬ ব্যাটিং) ও সূরয সিন্ধু জয়সওয়াল (০ ব্যাটিং)।
আরও পড়ুন: প্রথম বলেই ছক্কা মারার আব্দার, রোহিতের জবাব ঝড় তুলল সোশ্যাল মিডিয়ায়
ব্যাটিং ধসের পুরনো রোগেই ফের আক্রান্ত বাংলা। সুদীপও মানছেন, যে ভিত তৈরি হয়েছিল, তার ওপর আরও মজবুত রানের ইমারত গড়া যেত। তবু আশাবাদী সুদীপ। বলছেন, 'শাহবাজ ভাল খেলছে। সূরযের ব্যাটের হাত ভাল। এখান থেকে আর ৬০-৭০ রান যোগ করতে পারলে ভাল জায়গায় থাকব। পিচে বল ঘুরছে, লাফাচ্ছে। আমাদের যা বোলিং আক্রমণ, তাতে উত্তর প্রদেশেকে দ্রুত অল আউট করে দেওয়ার জন্য ঝাঁপাব।'
আরও পড়ুন: ইডেন থেকে সরে গেল রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ! কোথায় খেলতে হবে বাংলা দলকে?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।