মুম্বই: ২০০৭ সাল। ক্য়ারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেই বিশ্বকাপের (World Cup 2007) গ্রুপ পর্ব থেকে হেরে দেশে ফিরেছিল ভারত। সেই দলটার অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এখনও টিভিতে ভারতের খেলা সম্প্রচারকারী বিভিন্ন চ্যানেলের প্যাকেজে সেই বছরের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হারের পর দ্রাবিড়, সচিন, কার্তিকদের হতাশাগ্রস্ত মুখগুলো দেখানো হয়। কাট টু ২০২৪। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। হার্দিক পাণ্ড্যর শেষ বলটা আনরিচ নোকিয়া হালকা তুলে মারলেন মিড অনের দিকে। বেশ ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে। এবারও দলটার সঙ্গে রয়েছেন তিনি। কিন্তু ভূমিকা অন্য। ক্রিকেটার হিসেবে পারেননি। অধিনায়ক হিসেবে পারেননি। তবে ভারতের হেডকোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলেন রাহুল দ্রাবিড়। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে, আর ২০২৪ সালে সিনিয়র দলের কোচ হিসেব। ড্রেসিংরুমের দিকে ক্যামেরা তাক করতেই দেখা গেল দ্রাবিড়ের আগ্রাসী ছবি। এমনটা তো বিরল। এই মানুষটা আবেগকে বরাবরই আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। কিন্তু সেদিন পারেননি। এতগুলো বছরের যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে চলছিলেন। একটা বহিঃস্ফুরণ তো হবেই। 


টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বিরাট তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ট্রফি। যা হাতে নিয়ে বাচ্চাদের মত চিৎকার করে উঠেছিলেন। ক্রিকেটের প্রতি কতটা প্যাশন এর থেকেই বোঝায় যায়। অধিনায়ক, ক্রিকেটার হিসেবে না পারলেও দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন কোচ হিসেবে। পরে রোহিত ও বিরাটরা মিলে তাঁকে কোলে তুলে শূন্যে ছুড়ে সেলিব্রেশনও করেছিলেন বিশ্বজয়। আসলে দুই সিনিয়র ক্রিকেটারই বুঝতে পারছিলেন যে দ্রাবিড়ের কাছেও এই বিশ্বজয়ের মাহাত্ম্য কতটা। ওয়াংখেড়েতে বোর্ডের মঞ্চে যখন ক্রিকেটারদের হাতে ১২৫ কোটি টাকা আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হল, তখন তাঁকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দূর থেকেই এগিয়ে দেন রোহিতদের। সত্যি এতটাই মহানুভব তিনি। এই মঞ্চের আলোর ছটা আজ পুরোটাই চেয়েছিলেন ক্রিকেটাররাই পাক। তিনি নেপথ্য কারিগর হয়েই থেকে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও সমর্থকদের উদ্দেশে পর বলেন, "এত মানুষের ভালবাসা। সত্যিই এই মুহূর্তগুলো মিস করব আমি। আজ যা দেখলাম আমরা, তা এক কথায় অসাধারণ। মানুষের ভালবাসা, সমর্থকদের এত ভালবাসা, এটাই তো ক্রিকেটকে দেশের সর্বসেরা খেলায় পরিণত করেছে।''


ভারতের কোচ হিসেবে স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে অনেকগুলো। তার মধ্য়েই সেরাটা ছিল নিজের সরে যাওয়ার আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়। দ্রাবিড় বলছেন, ''ভারতের কোচ হওয়া। ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা, সত্য়িই গর্বের ব্যাপার। এরকম পরিবেশ আর পাব না। সবাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।''