সন্দীপ সরকার, কলকাতা: পূর্ব মেদিনীপুরে জামিট্যা গ্রাম থেকে টিম ইন্ডিয়ার সংসার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী (T20 World Cup 2024) ভারতীয় দলের একমাত্র বাঙালি সদস্য। রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma) বিশ্বজয়ের নেপথ্যে রয়েছে তাঁরও অবদান। 


সেই দয়ানন্দ গড়ানিকে (Dayananda Garani) নিয়ে উৎসবমুখর গোটা গ্রাম। দেশে ফেরা ইস্তক সংবর্ধনা সামলাতেই কেটে যাচ্ছে অর্ধেক সময়। দু'দণ্ড বিশ্রাম নেওয়ার জো নেই। তারই মাঝে নিজের সোনালি স্মৃতির ঝুলি উপুড় করলেন এবিপি আনন্দের সঙ্গে আড্ডায়।


কে এই দয়ানন্দ গড়ানি? পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক। ভারতীয় দলের ম্যাসাজ থেরাপিস্ট কাম থ্রো ডাউন স্পেশ্যালিস্ট মেদিনীপুরের তরুণ। ২০২০ সালের নভেম্বরে যাঁর ভারতীয় দলে যোগ দেওয়ার খবর প্রথম লিখেছিল এবিপি আনন্দ।


আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জিতে ফেরার অনুভূতি কী? দয়ানন্দ বলছেন, 'গোটা ভারতবাসীর কাছে এটা একটা বিরাট উপহার। আমার একার কাছে নয়। গড অফ ইলেভেন যেভাবে খেলছে, তাতে সকলেই মুগ্ধ। আমি সেই মন্দিরের একজন পূজারি মাত্র। সর্বোত্তম একটা জায়গায় যে এতদিন পরে পৌঁছতে পেরেছি, তাতে গোটা দেশ খুশি।'


জাতীয় পর্যায়ে দয়ানন্দের প্রথম বড় কাজ পাঞ্জাব কিংসে। অনিল কুম্বলে তখন প্রীতি জ়িন্টার দলের কোচ। তারপর ভারতীয় দলে ডাক। টি-২০ বিশ্বজয়ের নেপথ্যে যিনি কৃতিত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। 'সব কৃতিত্ব প্রাপ্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। সঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের কাকে কখন দরকার, কোচ থেকে শুরু করে অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফ, সব একদম প্রয়োজন মতো সাজিয়ে দিয়েছে। বেছে নিয়েছে। বিসিসিআইকে সে জন্য ধন্যবাদ,' বলছিলেন দয়ানন্দ।


বিশ্বজয়ী টিম ইন্ডিয়ার বিশেষত্ব কী? দয়ানন্দ বলছেন, 'প্রত্যেকের নিজস্ব দায়িত্ব ছিল। আর সেই দায়িত্ব সকলে পালন করেছে। মহাযুদ্ধে মানুষের ভালবাসাও আমাদের দারুণ প্রেরণা দিয়েছে।'


ভারতীয় ড্রেসিংরুমে প্রায় চার বছর কাটিয়ে ফেলেছেন দয়ানন্দ। একমাত্র এশিয়া কাপ ছাড়া সব টুর্নামেন্টে বারবার ট্রফির সামনে থেকে ফিরতে হয়েছে। মনের ভেতর কতটা যন্ত্রণা কাজ করত? দয়ানন্দের কথায়, 'সাত মাসের মধ্যে দুটি ফাইনাল খেলেছি আমরা ঠিক কথা। আমি অবশ্য সেভাবে দেখছি না। আমার চার বছরের সফরে অনেক ভাল পারফরম্যান্স দেখেছি। গাব্বায় অস্ট্রেলিয়ার দর্পচূর্ণ করা সেই ঐতিহাসিক জয়। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ফের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিের ফাইনাল। এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা। তারপর টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। গোটাটা একটা প্রক্রিয়া। প্রত্যেকের কাছে নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ ছিল। জাতীয় পতাকার গরিমা কখনও ক্ষুণ্ণ হতে দেয়নি। এই ভারতীয় দলের সকলেই বিশ্বাস করে, আমরা পারব।'


গত বছর দেশের মাটিতে ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর কি এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে বাড়তি তাগিদ কাজ করছিল দলের মধ্যে? দয়ানন্দ বলছেন, '২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বরে আমদাবাদের ফাইনালে পরাজয়ের পর এবার আলাদা কোনও তাগিদ ছিল না। আমরা আসলে এভাবে ভাবিই না। ধারাবাহিকভাবে ভাল ক্রিকেট খেলাই এই ভারতীয় দলের মন্ত্র। ট্রফি কখনও আসবে, কখনও আসবে না। কখনও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে, কখনও মুখ ফিরিয়ে নেবে। তবে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার প্রক্রিয়াই আমাদের কাছে শেষ কথা।' যোগ করলেন, 'স্কুলের পরীক্ষা দিতে গেলেও সব সময় সকলে ভাবে, ভালভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দেব। আমরাও সেভাবেই মাঠে নামি। তবে ভাগ্য সঙ্গ না দেওয়ায় ট্রফির সামনে থেকে ফিরতে হয়েছে বারবার।'


টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের সেরা স্মারক হিসাবে কী রেখে দিলেন নিজের কাছে? দয়ানন্দ দিলেন তাঁর কোহিনূরের সন্ধান। বললেন, 'এরকম একটা মুহূর্তকে কীভাবে ধরে রাখব, বুঝতে পারিনি শুরুতে। তারপর ঠিক করি, টি-২০ বিশ্বকাপে আমার ভারতীয় দলের জার্সিতে সকলের সই নিয়ে রাখব। তারপর সকলের অটোগ্রাফ নিই সেই জার্সিতে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা থেকে শুরু করে বিরাট কোহলি, দলের ১৫ জন ক্রিকেটার, কোচ রাহুল দ্রাবিড়, সাপোর্ট স্টাফদের সকলের সই নিয়েছি। সেই জার্সিটা বাঁধিয়ে ঘরের দেওয়ালে সাজিয়ে রাখব।' আরও বললেন, 'পাশাপাশি কোচ রাহুল স্যর, রোহিত ভাইরা ফাইনাল জেতার পর আমাকে যা বলেছিলেন, ভিডিও করা আছে। সেটা আমার সারাজীবনের সম্পদ।'


দেশে ফিরে ভারতীয় দলের সঙ্গে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। নরেন্দ্র মোদি কী বলেছিলেন? দয়ানন্দ বলছেন, 'প্রধানমন্ত্রীক সঙ্গে সকলেই দেখা করেছিলাম। উনি ভীষণ খুশি। অনেক অভিনন্দন জানিয়েছেন।'


টুর্নামেন্টের শুরু থেকে বিরাট কোহলি ছন্দ হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন। ৭ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৭৫ রান। ফাইনালে সেই কোহলিই নায়ক। ফাইনালের আগে কি আলাদা সাধনা করেছিলেন কিংগ কোহলি? দয়ানন্দ বলছেন, 'বাড়তি প্রস্তুতি তো ছিলই। তবে আমাদের যেটা বলা হতো, সেটাই করতাম। লোকটা এত রান করেছে, এত ক্রিকেট খেলেছে। আর কী নতুন করে প্রমাণ দেবে!'


আরও পড়ুন: কীভাবে টসের সময় পন্টিংকে বোকা বানিয়েছিলেন সৌরভ? জন্মদিনে অজানা গল্প





আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।