কলকাতা: বুধবারের সকালটা তাঁর কাছে ছিল বেশ অন্যরকম। পেশাদার ক্রিকেটে শেষবারের মতো ম্যাচের আগে প্র্যাক্টিস সারলেন। ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) আর কখনও ম্যাচের আগে ট্রেনিং করতে হবে না তাঁকে। কারণ, বৃহস্পতিবার থেকে কেরিয়ারের শেষ রঞ্জি ম্যাচ (?) খেলতে নামছেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে (প্রশ্নচিহ্ন রাখা হচ্ছে কারণ, খাতায়-কলমে এখনও বেঁচে বাংলার স্বপ্ন। তবে তার জন্য অলৌকিক কাণ্ড ঘটতে হবে।)
তিনি, ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। ভারতের কিংবদন্তি উইকেটকিপার। মরশুম শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন, এবারের রঞ্জি ট্রফিই তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে আলাদা কোনও অনুভূতি? পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ইডেনে প্র্যাক্টিস সেরে উঠে বললেন, 'এতদিন খেলেছি। এই সিদ্ধান্ত সকলকে নিতেই হয়। আমি ছোট থেকেই আবেগপ্রবণ নই। সে জন্য আলাদা কিছু মনেই হচ্ছে না। ২৮ বছর ধরে অনেক ওয়ার্ম আপ করেছি। আর করতে হবে না। একটা জায়গার পর বোঝা যায় সামনে যাওয়ার পথ বন্ধ। নতুন ক্রিকেটার উঠে আসার জায়গা আটকে রাখব কেন?'
ইডেনের ম্যাচে ঋদ্ধিমানের বাবা-মা, দুজনেরই শিলিগুড়ি থেকে আসার কথা ছিল। তবে তাঁর মা আসতে পারছেন না। কেন? ঋদ্ধিমান বললেন, 'পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে মা। তাই আসা হচ্ছে না ইডেনে। বাবা সম্ভবত থাকবে মাঠে।' হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ২০০৬-০৭ মরশুমে অভিষেক ম্যাচেও ছিলেন না বাবা-মা। সেই ম্যাচের কথা মনে আছে? ঋদ্ধিমান বলছেন, 'ভি ভি এস লক্ষ্মণের ক্যাচ ধরেছিলাম।' সেই ম্যাচে সেঞ্চুরিও করেছিলেন ঋদ্ধিমান। যদিও ব্যক্তিগত মাইলফলক আর কবে মনে রাখতে চেয়েছেন শিলিগুড়ির উইকেটকিপার!
জীবন কতটা পাল্টাবে? ময়দানের প্রিয় পাপালি বলছেন, 'ব্যস্ততা কমবে কোথায়, বেড়ে যাবে। খেলা থাকলে যে কোনও কাজ ছেড়ে আসতেই হবে। তবে খেলা ছাড়ার পর সময় কাটানোর জন্য, উপার্জনের জন্য কিছু করতে হবে।'
শেষ ম্যাচে কী লক্ষ্য রাখছেন? ঋদ্ধিমানের কথায়, 'দল জিতুক চাইব। আর দলের হয়ে ব্যাট হাতেও অবদান রাখতে চাইব।' কেরিয়ারে কোনও আক্ষেপ? 'আক্ষেপ নেই, সবটাই পাওনা। ক্রিকেট খেলেই প্রতিষ্ঠা, পরিচিতি। ১৭ বছর আইপিএল খেলেছি। ক্রিকেটের প্রতি, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ,' বললেন ঋদ্ধি। যোগ করলেন, 'ট্রফি জিতলে ভাল লাগে। ওয়ান ডে ও টি-২০ জিতেছিল, ইরানি কাপ, আইপিএল, দলীপ জিতেছি। রঞ্জি ট্রফিটা জিততে পারলাম না।'
এরপর কি বাংলার কোচ হিসাবে দেখা যাবে? উড়িয়ে দিচ্ছেন না ঋদ্ধিমান। বলছেন, 'বাংলার কোচিং করাব বলে খবর নেই। তবে কোচিং আমি এমনিতেই করাই। বাংলা চাইলে কোচিং করাতেই পারি। আমি ত্রিপুরা যাওয়ার সময়ই বলে গিয়েছিলাম, অন্য কোনও ভূমিকায় প্রয়োজন হলে আছি।'
ভারতের হয়ে ৪০টির বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলা হল না। ঋদ্ধিমান বলছেন, 'ভারতের হয়ে সুযোগ পেলে আরও অবদান রাখতে পারতাম। আরও ভাল ক্যাচ ধরতে পারতাম। ভাল ইনিংস খেলতে পারতাম। এবার স্লিপে ফিল্ডিং করছি। কোনও ক্যাচ মিস করিনি। উপভোগ করছি।'
ভারতীয় দলে কি অবিচারের শিকার? ঋদ্ধির কথায়, 'আমাকে বাদ দেওয়া হবে, সেটা সকলের মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল। আমি হয়তো যথেষ্ট দক্ষ নই বলে আর ভাবেনি। অবিচার বলব না। আরও ভাল খেললে হয়তো বাদ পড়তে হতো না।'
কোন ইনিংস সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়? ঋদ্ধিমান বলছেন, 'সব রানই ভাল। সেঞ্চুরি হলে ভাল আর ৭০ করলে খারাপ তা নয়। দলের হয়ে ৩০ রান করার পরেও যদি তাতে ম্যাচে লিড নেওয়া বা জেতা সম্ভব হয়, তাহলে সেই ইনিংসও আমার কাছে খুব প্রিয়।'
কার বলে উইকেটকিপিং করা সবচেয়ে কঠিন? ঋদ্ধির কথায়, 'পেসারদের মধ্যে শামি, ইশান্ত শর্মা, যশপ্রীত বুমরাদের কিপ করা কঠিন। স্পিনারদের মধ্যে অশ্বিন ও রশিদ খানকে কিপ করা কঠিন। ব্যাটারদের যে বল ধোঁকা দেয়, সেই বলও আমাকে অনুমান করে ধরে নিতে হতো।'
সেভারে অধিনায়ক হিসাবে দেখা গেল না বলে আক্ষেপ? ঋদ্ধি বলছেন, 'নেতৃত্বের দায়িত্বে না থাকলেও আমি আমার মতামত দিই। টস করা মানেই কি সে একমাত্র অধিনায়ক নাকি!' কখনওই ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের দিকে ছোটেননি। ঋদ্ধিমান বলছেন, 'পরিসংখ্যানের জন্য জন্য খেললে টেস্টে আমার ব্যাটিং গড় আরও ভাল হতো। সব সময় দলের জন্য খেলতাম। সেই কারণেই হয়তো কোচ বা অধিনায়ক আমাকে ৪০টি টেস্ট ম্যাচ খেলিয়েছে। ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য খেলিনি।'
তাঁর দেখা সেরা অধিনায়ক? 'দাদির নেতৃত্ব দারুণ ছিল। মাহি ভাই, বিরাটও খুব ভাল। জর্জ বেইলি, কেন উইলিয়ামসনও ভাল অধিনায়ক,' বলছেন ঋদ্ধিমান। আর সেরা কোচ? ঋদ্ধিমান বলছেন, 'অনিল কুম্বলের প্রশিক্ষণে বেশিরভাগ সিরিজ জিতেছি, ম্যাচ জিতেছি।'
বাংলার ভবিষ্যৎ উইকেটকিপার হিসাবে কাকে চোখে পড়ল? ঋদ্ধিমান বলছেন, 'অভিষেক পোড়েলের পাশাপাশি অনূর্ধ্ব ২৩ বা ১৯ দলেও কয়েকজন ভাল খেলছে।' আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন? ঋদ্ধিমান বরং উল্টোটা বলছেন। তাঁর কথায়, 'গত মরশুমেই অবসর নিতে পারতাম। দাদি আর আমার স্ত্রী রোমির কথাতে এই মরশুম খেললাম।'
কিন্তু এত জৌলুসহীন ম্যাচে খেলে অবসর? ঋদ্ধির কথায়, 'ছোট থেকেই দেখানোর ব্যাপার ছিল না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত থাকে। আমি ৪০ টেস্ট ম্যাচ খেলেছি বলার কী আছে। কখনও আমাকে প্রচারের আলোয় থাকতেই হবে মনে হয়নি।' যোগ করলেন, 'আমি যখন অনূর্ধ্ব ১৯ থেকে অনূর্ধ্ব ২২-এ গেলাম, তখন মনে হয়েছিল, পরিশ্রম করলে আরও বড় জায়গায় যাওয়া যেতে পারে। কিছু স্বপ্নপূরণ হয়েছে। কিছু হয়নি। ভারতীয় দলের অনেকেই জানে যে অবসর নিচ্ছি।'
আরও পড়ুন: চড়া দামে টিকিট কেটেও এমন হয়রানি! ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের পরই বিস্ফোরক তারকা ক্রিকেটারের দিদি