লন্ডন: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল (WTC Final 2025) বলে কথা। টেস্টের সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামা দুই দলের মধ্যে খেতাবি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল। এখনও পর্যন্ত টেস্টের প্রথম দুই দিন যে ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করেনি, তা কিন্তু বলাই বাহুল্য। দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়ার (South Africa vs Australia) ম্য়াচের দ্বিতীয় দিনেই তো বারংবার ম্যাচ কোনওসময় অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঝোঁকে, তো পরের মুহূর্তেই আবার অস্ট্রেলিয়া কামব্যাক করে।

Continues below advertisement

এক ঘটনাবহুল দিনে দুই দলের মোট ১৪টি উইকেট পড়ে। দিনশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর আট উইকেটের বিনিময়ে ১৪৪ রান। অজ়িরা আপাতত ২১৮ রানে এগিয়ে। ম্যাচ কিন্তু বর্তমানে একেবারে ৫০-৫০। তৃতীয় দিনের সকালে স্টার্করা আরও ৩০ বা ৪০ রান যোগ করলে ম্যাচে অজ়িরা বেশ ভাল জায়গায় পৌঁছে যাবে। তবে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আউট করতে পারলে প্রোটিয়া শিবিরও কিন্তু প্রথম আইসিসি ট্রফি জয়ের থেকে খুব একটা দূরে থাকবে না।

দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে বেশ লড়াই করল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম সেশনে ৭৮ রান যোগ করেন তাঁরা। তবে দুর্ভাগ্যবশত ছন্দে থাকা অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা লাঞ্চের আগেই সাজঘরে ফেরেন। প্রথম সেশন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঁচ উইকেটের বিনিময়ে ১২১ রান তুলে ফেলেছিল। এদিন শুরুতে বেডিংহ্যাম ও বাভুমার লড়াইয়ে বেশ ভাল জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাভুমাকে বেশ ভাল ছন্দে দেখায়। স্টার্ক, হ্যাজেলউডের বিরুদ্ধে কভার ড্রাইভ, প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) বিরুদ্ধে দুরন্ত পুল শটে ছক্কা হাঁকান তিনি। দুইজনে মিলে অর্ধশতরানের পার্টনারশিপও গড়ে ফেলেন। শতরানের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় প্রোটিয়া দল। তবে ঠিক তখনই প্রোটিয়া অধিনায়ককে সাজঘরে ফেরান অজ়ি অধিনায়ক কামিন্স। 

Continues below advertisement

লাঞ্চে পাঁচ উইকেট হারিয়েই সাজঘরে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। আশা ছিল সেট বেডিংহ্যাম দলকে বড় রানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে কামিন্স এদিন নিজের লম্বা স্পেলে দুরন্ত বোলিং করেন। তাঁর বোলিংয়েই ছিন্নভিন্ন হয় প্রোটিয়ার দলের লোয়ার অর্ডার। বেডিংহ্যাম ৪৫ রান করেন। তবে লাঞ্চের পরে প্রোটিয়া ব্যাটাররা কার্যত কেবল এলেন আর সাজঘরে ফিরলেন। ১৭ রানে পাঁচ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। ১৩৮ রানেই শেষ হয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। ৭৪ রানের লিড পায় অজ়িরা।

ইনিংসে মোট ছয় উইকেট নেন অজ়ি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তিনিই প্রথম অধিনায়ক হিসাবে কোনও আইসিসি ফাইনালে নিজের দলের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে ফেলেন। তিনি এই ইনিংসেই ৩০০টি টেস্ট উইকেটের গণ্ডিও পার করে ফেললেন। এহেন বোলিংয়ের পর অজ়িরা ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো ম্যাচে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন। তবে বাধ সাধেন কাগিসো রাবাডা (Kagiso Rabada)। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও উসমান খাওয়াজা ও ক্যামেরন গ্রিনকে ফেরান রাবাডা। ৩২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে যায় অজ়িরা।

অজ়িরা দুই উইকেট হারালেও সম্ভবত দলের সেরা দুই টেস্ট ব্য়াটার মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথ তাদের হয়ে মাঠে উপস্থিত ছিলেন। স্মিথ প্রথম ইনিংসে অর্ধশতরান করেছিলেন। আশা ছিল ফের একবার এক নজরকাড়া ইনিংস খেলবেন। কিন্তু তা আর হল কই। লুঙ্গি এনগিদির (Lungi Ngidi) বলে ১৩ রানে ফেরেন তিনি। লাবুশেনকে ২২ রানে ফেরান মার্কো জানসেন। দেখতে দেখতেই ৭৩ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে কার্যত আগুন ঝরাচ্ছিলেন এনগিদি। দেখে মনে হচ্ছিল প্রথম বলেই কার্যত উইকেট পড়বে। 

এমন পরিস্থিতিতেই ঘুরে পাল্টা লড়াই চালান অ্যালেক্স ক্যারি ও মিচেল স্টার্ক। দুইজনে ইতিবাচক ব্যাটিং করেন, ভাগ্যের সহায়তাও পান। ক্যাচ ড্রপ হয়, একাধিক ক্যাচ ফিল্ডারের আগে পড়ে। তবে অবশেষে সেই রাবাডার বলেই ৪৩ রানে এলবিডব্লু হন ক্যারি। ভাঙে ৬১ রানের পার্টনারশিপ। এই ম্য়াচের নিরিখে কিন্তু এই পার্টনারশিপ মোড় ঘোরানোর জন্য যথেষ্ট। এবার দেখার শেষমেশ কী হয়। দিনশেষে আপাতত স্টার্ক ১৬ ও ন্যাথান লায়ন এক রানে ক্রিজে অপরাজিত রয়েছেন।