কলকাতা: এই প্রথমবার ভারতের মাটিতে গোটা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় এই বছরই। ১০ দল খেতাব জয়ের লক্ষ্যে ৪৮টি ম্যাচে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। শেষমেশ রেকর্ড ষষ্ঠবারের জন্য় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ভারতে আয়োজিত এই বিশ্বকাপ ঘিরে বহুদিন ধরেই সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা ছিল। মেগা টুর্নামেন্ট যে তাঁদের হতাশ করেনি, তা বলাই বাহুল্য। দর্শকরা গ্য়ালারি ভরিয়ে রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন।


বছরের শেষ লগ্নে এই স্মরণীয় বিশ্বকাপের ১০ এমন মুহূর্ত ফিরে দেখে নেওয়া যাক, যা এই বিশ্বকাপকে সকলের মনে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।


ঈশ্বরকে পিছনে ফেললেন কিং


২০১৯ সালে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে হেরেই ভারতের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়েছিল। এই বছরের বিশ্বকাপে ফের একবার শেষ চারে কিউয়িদের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। টিম ইন্ডিয়া এই ম্যাচ তো জেতেই, পাশাপাশি এই ম্যাচেই তৈরি হয় বিশ্বরেকর্ড। ওয়াংখেড়ের ময়দানে সচিন তেন্ডুলকরের উপস্থিতিতে তাঁকে পিছনে ফেলে ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকালের সর্বাধিক ৫০তম সেঞ্চুরিটি হাঁকিয়ে ফেলেন ভারতীয় দলের মহাতারকা বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ঈশ্বরকে পিছনে ফেলে নতজানু হয়ে তাঁকে 'কিং কোহলি'র সম্মান জানানো কিন্তু দর্শকদের হৃদয়ে থাকবে।


ভবিষ্যতের তারকা রচিন


শোনা যায় তাঁর বাবা সচিন তেন্ডুলকর ও রাহুল দ্রাবিড়ের নাম মিলিয়ে তাঁর নাম রেখেছিলেন রচিন। সেই ক্রিকেটারের মধ্যে প্রতিভা থাকাটাও তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়। ভারতীয় মূলের নিউজ়িল্যান্ড ক্রিকেটার রচিন রবীন্দ্র এই বিশ্বকাপে প্রমাণ করে দেন তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের তারকা। ২৪ বছর বয়সি রচিন টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই শতরান হাঁকান। তিনি টুর্নামেন্ট শেষ করেন মোট ৫৭৮ রান করে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলা কোনও ব্যাটারের জন্য এটা সর্বকালের সর্বাধিক। 


ম্যাড ম্যাক্স শো


সম্ভবত বিশ্বকাপের সবথেকে স্মরণীয় মুহূর্ত বা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবথেকে সেরা ইনিংস আসে আফগানিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্য়াচে। টানা চার ম্যাচ জিতে অজ়িদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রশিদ খানরা। ২৯১ রানের লক্ষ্য বোর্ডে খাড়া করেছিলেন তাঁরা। ৯১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আফগানদের বিরাট অঘটন ঘটানো যখন কার্যত পাকা, ঠিক তখনই ম্যাড ম্যাক্স শোয়ে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে তিন উইকেটে ম্য়াচ জেতান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell)।


আফগানদের উত্থান


তবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারতে হলেও, আফগানরা প্রমাণ করে দেন, তাঁরা এখন চাইলে যে কোনও তথাকথিত বড় দলকে হারাতে  পারেন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে প্রথমে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেন রশিদ খানরা। তাঁদের পারফরম্যান্স যে ফ্লুক ছিল না, তার প্রমাণ মেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। উপমহাদেশীয় পরিস্থিতিতে পাকিস্তান বরাবরই শক্তিশালী  প্রতিপক্ষ। তাঁদের বিরুদ্ধে নিজেদের ওয়ান ডে ইতিহাসে প্রথম জয় পায় আফগানরা।  


গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিস্ময়কর পতন


গত বারের বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড দলে এবারে তেমন কোনও বড় বদল হয়নি। তাঁরা আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়নও বটে। বিশেষজ্ঞদের বিচারে অন্যতম ফেভারিট দল হিসাবে এবারেও মাঠে নেমেছিল জস বাটলারের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দল। তবে ২০১৯ সালের দলের ছায়া যেন এবারের ইংল্যান্ড। নয়টির মধ্যে মাত্র তিন ম্যাচ জিতে লিগ তালিকায় সাত নম্বরে শেষ করে ইংল্য়ান্ড।


অঘটনের বিশ্বকাপ


আফগানিস্তান যেখানে একদিকে ইংল্যান্ড, পাকিস্তানকে হারিয়ে বড় চমক দেয়, সেখানে নেদারল্যান্ডসও কিন্তু নিজেদের পারফরম্যান্সে সকলকে মুগ্ধ করে। ধর্মশালা সুদৃশ্য মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিধর দেশকে ৩৮ রানে হারিয়ে সকলকে চমকে দেন তাঁরা।


'টাইমড আউট'


ক্রিকেটের ইতিহাসে এর আগে যা কোনওদিনও ঘটেনি, এবারের বিশ্বকাপে ঠিক এমনই এক ঘটনা ঘটে। প্রথম ব্যাটার হিসাবে 'টাইমড আউট' হন অ্যাঞ্জেলো ম্য়াথিউজ়। নিয়ম অনুযায়ী এক ব্যাটার আউট হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে পরবর্তী ব্যাটারকে অন্তত এক বল খেলতে হয়। কিন্তু ভুল হেলমেট পরে মাঠে নামার ম্যাথিউজ় আবার হেলমেট বদলানোয় তা সম্ভব হয়নি। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বাংলাদেশের শাকিব আল হাসান আপিল করায় নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়ার শ্রীলঙ্কান ব্যাটারকে আউট দেন। এই নিয়ে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়।


ভারতের রেকর্ড


ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিলেন রোহিত শর্মারা। রোহিতের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল (Indian Cricket Team)। গ্রুপ পর্বে একের পর এক ম্যাচ জিততে টানা নয় ম্যাচ জিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলকে স্পর্শ করেন রোহিতরা। আর সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়েই রচিত হয় ইতিহাস। প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে রোহিতের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া বিশ্বকাপে নাগাড়ে ১০ ম্যাচ জিতে খেতাবি লড়াইয়ে মাঠে নামে।


'সেনসেশনাল' শামি


ভারতের এই জয়ের ধারার মূল কারিগরদের নাম বললেই যার নাম একেবারে শুরুর দিকে থাকবে, তিনি মহম্মদ শামি। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দলে জায়গাই পাননি শামি। টানা চার ম্যাচ তাঁকে বাইরে বসতে হয়। তবে হার্দিকের চোটের জেরে শামি দলে সুযোগ পান। আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত। নিউজ়িল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। মাত্র সাত ম্যাচ খেলেই ২৪ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসাবে টুর্নামেন্ট শেষ করেন লালা। এই মেগা টুর্নামেন্টেই প্রথম ভারতীয় বোলার হিসাবে বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট নেওয়ার গণ্ডিও পার করেন তিনি।


চ্যাম্পিয়ন


তবে ভারতের দৌরাত্ম্য, শামির ফর্ম সবকিছু থাকা সত্ত্বেও, ফাইনালে খেতাবটা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার হাতেই উঠে। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতীয় দল নিজেদের সেরাটা দিতেই পারেনি। মাত্র ২৪০ রানে অল আউট হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। জবাবে ট্র্যাভিস হেডের অনবদ্য শতরানে ভর করে রেকর্ড ষষ্ঠবার ৫০ ওভারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া (Australia Cricket Team)। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচেই হারের পর টানা নয় ম্য়াচ জিতে খেতাব জেতায় অজ়িদের এই বিজয়কে কিন্তু আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


https://whatsapp.com/channel/0029VaCBCh6545uwkeNBg11y


আরও পড়ুন: চাহাল-তেওয়াটিয়াদের বিরুদ্ধে ওপেনিং নিয়ে নতুন অঙ্ক বাংলার, ফিরতে পারেন রণজ্যোৎ