• দীপ দাশগুপ্ত
    রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস: ১৬৩-৫ (২০ ওভারে)
    গুজরাত লায়ন্স: ১৬৪-৩ (১৮ ওভারে)
    মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পুণেকে এ দিন হেরে যেতে দেখে কয়েকটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। নিলামের দিন যা আমার মনে হয়েছিল।
    প্রথমেই বলে রাখি, ধোনিদের সমালোচনা করছি না। আইপিএলের মতো লম্বা টুর্নামেন্টে দু’একটা ম্যাচ দেখে দুমদাম বলে দেওয়া মূর্খামি। সবচেয়ে বড় কথা, পুণে নতুন টিম। সব নতুন টিমেরই একটু সময় লাগে নিজেদের প্যাটার্নটা বুঝতে। তারা কোন স্টাইলে খেলবে, কোন প্যাটার্ন বেছে নেবে— সে সব। হাতে যখন দু’প্লেসি-কেপি-রাহানে-ধোনি, টিমটা কি তা হলে রান তাড়ায় চলে যাবে? নাকি ডিফেন্ড করবে? বোলিংয়ে রান আটকানোর চেষ্টা করবে? না উইকেট নেওয়ার জন্য ঝাঁপাবে?
    আসলে ধোনির টিমটা ব্যাটিং-হেভি। টিমে এতজন ম্যাচ উইনার যে, দু’টো টিমের ব্যাটিং লাইন আপ করে ফেলা যায়। কিন্তু সমস্যা হল, টিমটাকে প্রত্যেক ম্যাচে পার স্কোরের চেয়ে কুড়ি রান বেশি করে রাখতে হবে। কারণ, মাঝের ওভারে ভরসা করার মতো বোলার এখনও ওদের নেই।
    চেন্নাই সুপার কিংগসের ধোনি জানত, ডেথে ও একটা ব্র্যাভো পাবে। একটা নেহরা হাতে থাকবে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দিয়ে মাঝের ওভারগুলো বার করে দিত ধোনি। কখনও কখনও শুরুতে আনত। একটা ওভার করিয়ে রেখে দিত পরের জন্য। পুণেতে সেটা করা কঠিন। টি-টোয়েন্টির অলিখিত নিয়ম হল, পাওয়ার প্লে-র জন্য তিন জন ভাল বোলার রাখতে হবে। ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে করে ছ’টা ওভার যাতে বার করা যায়।
    কিন্তু পুণের সেরা বোলার কারা? আরপি সিংহ। ইশান্ত শর্মা। আর অশ্বিন। পাওয়ার প্লে সামলাতে অশ্বিনকে আনতেই হচ্ছে ছ’ওভারের মধ্যে। তাই পরের দিকে কখন ওকে ব্যবহার করা ঠিক হবে, সেটা বার করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তার উপর আরপি বহু দিন জাতীয় দলে নেই। গত বছর আইপিএলও খেলেনি। ইশান্ত দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলে না। তাই নতুন বলে ওরা উইকেট না পেলে পুরো চাপ চলে যাচ্ছে অশ্বিনের উপর। আর ও ধন্ধে পড়ছে এটা ভেবে যে, আমি কী করব? রান বাঁচাব? না উইকেট তোলার দিকে যাব?
    মাঝের ওভারগুলোয় নির্ভরযোগ্য কাউকে প্রয়োজন ধোনিদের। মুরুগান অশ্বিন ভাল। কিন্তু ওর উপর নিঃশর্ত ভরসা করতে হবে। কারণ ওর বয়স কম। ওকে নিয়মিত ভরসা দিলে, এম অশ্বিন একবার ভাল করতে শুরু করলে, আর অশ্বিনও খোলামেলা থাকতে পারবে। আজ দেখছিলাম, অশ্বিন পাওয়ার প্লে-তে ইয়র্কার লেংথে ফেলছে। রান আটকানোর চেষ্টা করছে। সেটা ও করবে কেন?
    তবে আজ কুড়ি-পঁচিশ রান কমও হয়েছে। পুণে যে ভাবে শুরু করেছিল, তাতে অন্তত ১৮০-১৯০ করা উচিত ছিল। ১৬৩ ওদের বিচারে সাধারণ। বললাম না, কোনও মাঠে যদি ১৬০ পার স্কোর হয়, তা হলে ওদের ১৮০ তুলে রাখতে হবে। আসলে মাঝের ওভারগুলোয় জাডেজাকে সে ভাবে মারতেই পারল না পুণে। মনে হয়, স্টিভ স্মিথের জায়গায় ধোনি আরও আগে এলে, নিজেকে তুলে আনলে লাভ হত। পুণের মিডল অর্ডারে দুঁদে ভারতীয় ব্যাটসম্যান বলতে শুধু ধোনি। স্মিথ যতই অস্ট্রেলিয়া ক্যাপ্টেন হোক, টি-টোয়েন্টিতে ধোনির তুলনা নেই। তা ছাড়া ও সবচেয়ে ভাল জানত, জাডেজাদের কী ভাবে খেলতে হবে। ব্র্যাভোর স্লোয়ারগুলো কী ভাবে ম্যানেজ করতে হবে। চেন্নাইয়ে তো সবাই একসঙ্গে ছিল। আর করলও তো। যে ব্র্যাভোকে পিটারসেনরা খেলতে ঝামেলায় পড়ল, ধোনি ওর শেষ ওভার থেকে কুড়ি নিল! তাই মনে হয়, ধোনির আর একটু উপরে ওঠা উচিত। বিশেষ করে পাঁচ-ছ’ওভার বাকি থাকলে।
    পুণে বোলিংটাও ভাল করেনি। ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে শর্ট করা বা অ্যারন ফিঞ্চকে অফস্টাম্পের বাইরে জায়গা দেওয়া— ভাবাও ভুল। ইশান্তরা সেগুলোই করে গেল। যা-ই হোক, আজ হয়েছে, হয়েছে। পরের দিনও হবে তার কোনও মানে নেই। ওই শুধু ব্যাটিং অর্ডারটা একটু দেখে নেওয়া আর মাঝের ওভার করানোর মতো কাউকে বার করে ফেলতে পারলেই পুণেকে অন্য রকম দেখাবে। বড়জোর আর একটা বা দু’টো ম্যাচ। আমি নিশ্চিত, তার পর ম্যাচ জেতার কোনও না কোনও স্টাইল বার করে ফেলবে টিমটা। আর সেটা পারলে, নতুন জার্সির এমএস ধোনিকে থামানো কঠিন নয়, খুব কঠিন হবে।
    সংক্ষিপ্ত স্কোর
    রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস ১৬৩-৫ (২০ ওভার)। দু প্লেসি ৬৯, জাডেজা ২-১৮।
    গুজরাত লায়ন্স ১৬৪-৩ (১৮ ওভার) ফিঞ্চ ৫০, ম্যাকালাম ৪৯। মুরুগন অশ্বিন ২-৩১।