কলকাতা: ক্রিকেট খেলার সময়ও মেদিনীপুরের বন্যা দুর্গতদের পাশে তাঁকে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে তিনি এখন পুরো সময়ের রাজনীতিক। বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। আর নতুন স্পেল শুরু করেই অশোক দিন্দাকে সামলাতে হচ্ছে প্রকৃতির রুদ্ররোষ।


ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও ভরা কটালে বিপর্যস্ত ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একাধিক গ্রাম। দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হাজির হয়ে গিয়েছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, রেনকোট পরে হাত লাগিয়েছেন উদ্ধারকাজে। জলের তোড়ে অনেকের ঘর ভেসে গিয়েছে। সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়েছিলেন দিন্দা। এবিপি লাইভকে মোবাইল ফোনে দিন্দা বললেন, 'ঘূর্ণিঝড়ে ময়না বিধানসভা এলাকায় ব্যাপক কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ভরা কটালে নদীর জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়। ঢেউভাঙ্গা ও চাঁদবেনিয়া, এই দুটো এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে এমনিতেই নদী ও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস ছিল। তার ওপর ভরা কটালে জলস্তর আচমকা তিন মিটার বেড়ে গিয়েছিল। কেউই প্রস্তুত ছিল না। সকলে ইয়াস নিয়ে আশঙ্কায় ছিল। বিপদ যে অন্য দিক থেকেও হানা দিতে পারে আগাম কেউই বুঝতে পারেনি। দু'জায়গাতেই প্রচুর মাটির বাড়ি। সবই ভেঙে পড়ে গিয়েছে। রাস্তায় এক হাঁটু জল জমে গিয়েছিল।'



২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস ছিল। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে দু'দিন আগে, ২৪ মে সকালবেলা কলকাতা থেকে ময়নায় পৌঁছে গিয়েছিলেন দিন্দা। 'ঘূর্ণিঝড়ে কী কী ক্ষতি হতে পারে আর সেগুলো কীভাবে সামলানো হবে, সেসব নিয়ে একাধিক বৈঠক করি। এলাকার বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। কাঁচা বাড়ি। সেগুলি নিয়েই দুশ্চিন্তা ছিল। সকলকে আগে থেকেই ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। এলাকার ২১টি স্কুলে প্রায় ন'শো লোকজনকে রেখেছিলাম। পাশাপাশি জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছিলাম। শুকনো খাবার ও পানীয় জল আগে থেকেই মজুত করেছিলাম,' বলছিলেন দিন্দা। যোগ করলেন, 'যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, এই মুহূর্তে তাঁদের সকলকে ত্রিপল দিয়েছি। মহিলা ও শিশুদের আগে থেকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। পাশাপাশি গবাদি পশুদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যতটা সম্ভব করেছি। তিনদিন সকলে ত্রাণ শিবিরেই ছিল।'



ময়না বিধানসভা এলাকা এমনিতেই বন্যাপ্রবণ। ফি বছর বর্ষায় প্লাবিত হয়। বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করতে আগেও দেখা গিয়েছে দিন্দাকে। বিধায়ক হিসাবে এবার কি সেই দায়িত্ব আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে? দিন্দা রাজনীতির রং দেখছেন না। বলছেন, 'এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে দুর্গত সাধারণ মানুষের জন্য একসঙ্গে সকলকে কাজ করতে হবে। এলাকার সব বাড়ি পাকা করার ব্যাপারে জোর দেব। এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি মাটির হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। আমি চেষ্টা করব এলাকার সব মাটির বাড়ি পাকা করার। তার জন্য যেখানে দরবার করতে হয় করব। মানুষের আশীর্বাদে বিধায়ক হয়েছি। বিপদে তাঁদের পাশে থাকা আমার কর্তব্য।'



প্রত্যেক সপ্তাহে চারদিন-তিনরাত করে ময়না এলাকায় থাকছেন দিন্দা। ইয়াসের জন্য ছ'দিন ছিলেন। স্ত্রী শ্রেয়সী ও মেয়ে তিয়ারা কলকাতার বাড়িতে। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার বাড়িতে ফিরেছেন দিন্দা। তবু তাঁর মুখে ময়না নিয়ে উদ্বেগ। বলছেন, 'যাঁদের টালির চালের বাড়ি, তাঁদের কাছে গিয়ে ত্রিপল দিয়ে এসেছি। প্রাথমিক প্রয়োজন সেটাই। এলাকার হাসপাতালগুলোর সংস্কার করতে হবে দ্রুত। অসুস্থ হলে রোগীকে কলকাতায় আনতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারান। সমস্তরকম চিকিৎসা যাতে গ্রামেই হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।'