নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেই সুখবর। পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তবে পরিবারের সঙ্গে একদিন কাটিয়েই রাজকোটে উড়ে গিয়েছেন। জীবনের প্রথম রঞ্জি ফাইনাল খেলতে। রবিবার সন্ধ্যায় টিম মিটিং শেষ হওয়ার পর মোবাইল ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা


প্রশ্ন: বাংলা শেষবার রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলেছে ২০০৬-০৭ মরসুমে। তার পরের বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আপনার অভিষেক। কেরিয়ারের প্রথম রঞ্জি ফাইনাল খেলতে নামার আগে কতটা রোমাঞ্চিত?

ঋদ্ধিমান সাহা: ভেতর ভেতর বেশ উত্তেজনা অনুভব করছি। অনেক ক্রিকেটার আছে যারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেও রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলার সুযোগ পায় না। আমি পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে ও দল হিসাবে এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাই।

প্রশ্ন: সদ্য নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরলেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে বেরিয়ে সোজা ঘরোয়া ক্রিকেটের আসরে নেমে পড়া। মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না?

ঋদ্ধিমান: কোনও সমস্যা হয় না। এটা নিয়ে কারও অসুবিধা হওয়ার কথাও নয়। কারণ আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল হলেই জাতীয় দলে সুযোগ পাই। তাই আলাদা করে কখনওই মানিয়ে নিতে হয়নি।

প্রশ্ন: সৌরাষ্ট্র এই ম্যাচে পেয়ে গিয়েছে চেতেশ্বর পূজারাকে। জাতীয় দলের সতীর্থ আপনার রাজ্য দলের বোলারদের কাছে কত বড় কাঁটা হতে পারে?

ঋদ্ধিমান: চেতেশ্বর পূজারা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাটসম্যান। তবে আমাদের বোলাররা ছন্দে রয়েছে। গোটা টুর্নামেন্টে যেভাবে বোলিং করেছে, ফাইনালেও সেটা করতে পারলে শুধু পূজারা কেন, ওদের কোনও ব্যাটসম্যানের জন্যই কাজটা সহজ হবে না। কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে পূজারাকে।

প্রশ্ন: জয়দেব উনাদকাট চলতি রঞ্জিতে ৬৫ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকার শীর্ষে। সেমিফাইনালে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন। বাংলার বোলারদের কাছে উনাদকাটকে সামলানো কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?

ঋদ্ধিমান: উনাদকাট গোটা টুর্নামেন্টেই ভাল বল করেছে। দারুণ বোলার। তবে ক্রিজে গিয়ে ব্যাটসম্যানেরা বলই খেলে, বোলারের নামের বিরুদ্ধে খেলে না। আমিও সেভাবেই দেখছি। জয়দেবের জায়গায় অন্য কোনও  বোলার হলেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করব। বল দেখে খেলা উচিত। বোলারের নাম দেখে নয়।

প্রশ্ন: ৭ ম্যাচে ৬৪১ রান। চলতি টুর্নামেন্টে বাংলার ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন অনুষ্টুপ মজুমদার। কতটা স্বস্তি দিচ্ছে অনুষ্টুপের ফর্ম?

ঋদ্ধিমান: রুকু (অনুষ্টুপের ডাকনাম) ভাল ব্যাটসম্যান। আগেও ভাল খেলেছে। মাঝে কয়েকটা মরসুম ব্যাটে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি। তবে শেষ দুটো মরসুম ভালই গিয়েছে ওর। বেশ কিছু ভাল ইনিংস খেলেছিল। অভিজ্ঞতার দাম পাচ্ছে। সেই কারণেই চাপের মুখে সাবলীলভাবে ব্যাট করছে। টেল এন্ডার বা লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ইনিংসকে টানছে। ওকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।

প্রশ্ন: চাপের মুখে আপনি নিজে বাংলার ইনিংসকে অনেকবার রক্ষা করেছেন। এবার সঙ্গী ছন্দে থাকা অনুষ্টুপ। নিজেদের সামনে কী লক্ষ্য থাকবে?

ঋদ্ধিমান: টপ অর্ডার শুরুটা ভাল করলে সব দলেরই সুবিধা হয়। মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারের দায়িত্ব সেই শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বড় রানের ইমারত বানানো। ফাইনালে আমার আর রুকুর ওপরও সেই দায়িত্বই থাকবে। এতদিন যেভাবে খেলে এসেছি, ফাইনালেও সেভাবেই খেলতে হবে। নিজেদের দক্ষতায় আস্থা রাখতে হবে।

প্রশ্ন: কিন্তু উপরের দিকের ব্যাটসম্যানেরা রান পাচ্ছেন না। এটা কত বড় দুশ্চিন্তা?

ঋদ্ধিমান: টপ অর্ডারে যারা খেলছে, তারা প্রত্যেকেই ভাল ব্যাটসম্যান। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ভাল খেললেও মাঝখানে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি। তবে এই ম্য়াচে ছবিটা পাল্টাতেই পারে। আমার বিশ্বাস ফাইনালে টপ অর্ডার ঘুরে দাঁড়াবে।

প্রশ্ন: শাহবাজ আমেদ এই মরসুমের সেরা আবিষ্কার। সঙ্গে ঈশান পোড়েল, আকাশ দীপ-সহ এক ঝাঁক নতুন ছেলে...

ঋদ্ধিমান: যে দলে অলরাউন্ডারের সংখ্যা বেশি, সেই দল ভালই খেলে। শাহবাজ প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই সাত বা আটে ব্যাট করতে নেমে মূল্যবান ৩০-৪০ বা ৫০ রানের ইনিংস খেলেছে। ম্যাচের রং পাল্টে গিয়েছে। বল হাতে উইকেটও পেয়েছে। অর্ণব নন্দীও প্রয়োজনের সময় রান করেছে কয়েকটা ইনিংসে। উইকেট তুলেছে। নতুন ছেলেরা সকলে পারফর্ম করছে। সব মিলিয়ে দলের ভালই হচ্ছে।

প্রশ্ন: কোচ অরুণ লালের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ঋদ্ধিমান: লালজি (অরুণ লাল) সবসময় ইতিবাচক কথাই বলেন। ওঁর প্রশিক্ষণে বাংলা দলটা অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তবে সকলেই নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছে। পরিশ্রম করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলছে। এর নেপথ্যে লালজির অবদান অনস্বীকার্য।

প্রশ্ন: উইকেট কেমন দেখলেন?

ঋদ্ধিমান: প্র্যাক্টিস পিচ একটু মন্থর লেগেছে। শুনেছি ম্যাচের উইকেট তুলনায়  হার্ড হবে। প্রথমে ব্যাটিং করে বড় রান তুলে প্রতিপক্ষকে চাপের মুখে ফেলাটাই আমার মতে সেরা কৌশল।

প্রশ্ন: রঞ্জি ফাইনালের মতো বড় ম্যাচের আগে সিনিয়র হিসাবে সতীর্থদের কী বললেন?

ঋদ্ধিমান: সতীর্থদের বলেছি, ফাইনাল হিসাবে নয়, আর পাঁচটা ম্যাচের মতো করে খেলো। ক্রিকেট উপভোগ করো। সকলেই সেটা জানে। তাও মনে করিয়ে দিয়েছি।

প্রশ্ন: এত বড় ম্যাচ। আর ভুল বোঝাবুঝি না মেটায় অশোক ডিন্ডা দলের বাইরে...

ঋদ্ধিমান: অবশ্যই ডিন্ডার অভাব টের পাব। ও থাকলে দারুণ হত। ওর পরিবর্তে যারা দলে এসেছে, ভাল খেলেছে। তবু ডিন্ডা থাকলে দল মানসিকভাবে আরও  চাঙ্গা থাকত। মনে হত, একদিক থেকে ও আছে। আর এক দিক থেকে অন্যরা চাপটা ধরে রাখলেই হবে। তবে যারা আছে, তারা নিশ্চয়ই ভাল খেলবে। আমি আশাবাদী।