দোহা: ২০১৪ সালের জার্মানির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে আর্জেন্তিনার (Argentina football Team) বিশ্বজয়ের (FIFA WC 2022) স্বপ্নপূরণ হয়নি। তবে নিজের শেষ বিশ্বকাপে অধরা খেতাব জয়ের হাতছানি রয়েছে লিওনেল মেসির (Lionel Messi) সামনে। রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে লা আলবিসেলেস্তে। অথচ একসময় আর্জেন্তিনা কার্যত বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যেতে বসেছিল।
গ্রুপ পর্ব
ব়্যাঙ্কিং অনুযায়ী এই বিশ্বকাপের সবথেকে পিছিয়ে থাকা দল সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল আর্জেন্তিনা। লিওনেল মেসি যখন পেনাল্টি থেকে ম্যাচে দলকে এগিয়ে দেন, তখন খুব কম সৌদি সমর্থকই হয়তো জয়ের আশা রেখেছিলেন। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে সালেহ আলশেরি ও সালেম আল ডসারি অল্প সময়ের ব্যবধানেই দুই গোল করে ম্যাচের রঙ সম্পূর্ণ বদলে দেন। শেষমেশ ২-১ গোলে জয় পায় সৌদি। বিশেষজ্ঞরা এটিকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম বড় অঘটনই মনে করছেন।
এই হারের পর মেক্সিকোর বিরুদ্ধে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামেন মেসিরা। প্রথমার্ধে মেক্সিকোই তুলনামূলক গোলের বড় সুযোগগুলি তৈরি করে। এই ম্যাচে হারলেই মেসিদের বিশ্বকাপর অভিযান শেষ হয়ে যেত। ঠিক এমন সময়েই জ্বলে উঠেন দলের অধিনায়ক মেসি। ৬৪ মিনিটের মাথায় এক বিশ্বমানের গোলে আর্জেন্তিনাকে ম্যাচে এগিয়ে দেন তিনি। ৮৭ মিনিটে আরেকটি চোখধাঁধানো গোল করেন এনজো ফার্নান্ডেজ। ২-০ ম্যাচ জেতে আর্জেন্তিনা।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে মেসি পেনাল্টি মিস করেন বটে, তবে অ্যালেক্সিস ম্যাকালিস্টার ও জুলিয়ান আলভারেজের গোলে আবারও ২-০ স্কোরলাইনে ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষে থেকেই পরের রাউন্ডে পৌঁছয় আর্জেন্তিনা।
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মেসিরা সকারুজের মুখোমুখি হন। খাতায় কলমে অস্ট্রেলিয়া ও আর্জেন্তিনার মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকলেও, ম্যাচে কিন্তু স্রেফ নিজেদের হার না মানা মানসিকতা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে অজিরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালান। এই ম্যাচেও মেসির পাশাপাশি গোল পান আলভারেজ। অজিরা এক গোল করে ম্যাচে ফিরে আসেন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এমি মার্তিনেজ গারাঙ কুয়লের শট দারুণ তৎপরতা দেখিয়ে গোল থেকে খানিকটা এগিয়ে এসেই বাঁচিয়ে দেন। ২-১ ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছয় আর্জেন্তিনা।
কোয়ার্টার ফাইনাল
আর্জেন্তিনা ও নেদারল্যান্ডসের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ সম্ভবত এই বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ। ম্যাচে আকর্ষণীয় ফুটবল, খেলোয়াড়ের মধ্যে মতবিরোধ, শেষ মুহূর্তে নাটকীয় গোল, কোনওকিছুরই অভাব ছিল না। মোলিনা ও মেসি নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে দলকে ২-০ এগিয়ে দেন। যখন মনে হচ্ছিল আর্জেন্তিনার সেমিফাইনালে পৌঁছনো কার্যত নিশ্চিত, ঠিক তখনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নামা ডাচ স্ট্রাইকার ওয়েগহোর্স্ট জোড়া গোল করেন। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ের পর পেনাল্টিতে গড়ায়। এমি মার্তিনেজ পেনাল্টিতে নায়কোচিত পারফরম্যান্সে দুইটি শট বাঁচিয়ে দলকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেন।
সেমিফাইনাল
সেমিতে গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্তিনা। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই লুকা মদ্রিচের ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্দান্ত ক্ষমতা ও জমাট রক্ষণে ভর করে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল ক্রোয়েশিয়া। বিগত দুই ম্যাচে পেনাল্টি শ্যুট আউটে একাধিক শট রুখে দিয়ে রাতারাতি ক্রোয়শিয়ার জাতীয় নায়ক হয়ে যাওয়া লিভাকোভিচের বিরুদ্ধে গোল দেওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। তবে এই ম্যাচে চোখধাঁধানো ফুটবলে মদ্রিচদের কার্যত দাঁড়াতেই দেয়নি আর্জেন্তিনা। ৩-০ গোলে ম্যাচ জেতে লাতিন আমেরিকার দল। লিওনেল মেসি পেনাল্টি থেকে প্রথমে আর্জেন্তিনাকে এগিয়ে দেন। এরপর মেসির এক বিশ্বমানের পাস থেকে দ্বিতীয় গোলটি করেন আলভারেজ। তৃতীয় গোলটিও আর্জেন্তিনার নয় নম্বর জার্সিধারীর বুট থেকেই আসে।
এবার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি আর্জেন্তিনা। ফাইনালেও মেসি ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় আর্জেন্তাইন সমর্থকরা।
আরও পড়ুন: ফাইনালে মেসির আর্জেন্তিনার মুখোমুখি ফ্রান্স, সতীর্থদের আগাম সতর্কবার্তা দিলেন গ্রিজম্যান