সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কাতারে ইতিহাস স্পর্শ করেছেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। আর্জেন্তিনার (Argentina) জার্সিতে জিতেছেন বিশ্বকাপ (Fifa World Cup 2022)। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়েছে বিশ্বফুটবলের মহানায়কের। সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তাঁর পায়ের জাদুতে মোহিত বিশ্ব।


যে জাদুর মায়াজাল ১১ বছর আগে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছিল বাংলার ফুটবলপ্রেমীদেরও। ২ সেপ্টেম্বর, ২০১১। কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলেছিলেন মেসি। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তিনি নিজে গোল না করলেও, প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন। তাঁরই বাঁক খাওয়ানো কর্নার থেকে গোল করে আর্জেন্তিনাকে জিতিয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের রক্ষণের স্তম্ভ নিকোলাস ওতামেন্দি।


কেমন ছিল কলকাতায় মেসির সেই সফর? প্র্যাক্টিসের মাঠ হোক বা হোটেলের লবি, আধুনিক ফুটবলের শ্রেষ্ঠ তারকার রোজনামচা কেমন ছিল?


'মেসির যে ব্যাপারটা সবচেয়ে নজর কেড়েছিল, তা হল ওঁকে কোনও বিষয়ে অভিযোগ করতে দেখিনি। ততদিনে জোড়া বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন মেসি। ২০০৬ ও ২০১০। দিয়েগো মারাদোনার মতো কিংবদন্তির প্রশিক্ষণেও খেলেছেন। জেতা হয়ে গিয়েছে অলিম্পিক্সের সোনা। কিন্তু ভীষণ সাদামাটা মানুষ। কলকাতায় যে দুদিন ছিলেন, কখনও বিরক্ত হতে দেখিনি। সইশিকারিদের আব্দার, ছবি তোলার বায়না, শান্ত-সংযতভাবে সামলেছিলেন সব কিছু,' বলছিলেন সন্দীপ সাহা। যিনি আর্জেন্তিনার কলকাতা সফরের সমস্ত মুহূর্ত অ্যালবাম-বন্দি করে রাখার দায়িত্ব সামলেছেন। অ্যালবামের গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবে কাজ করেছেন। মেসিকে দেখেছেন সামনে থেকে। পাশাপাশি কলকাতা ফুটবলের অন্যতম পরিচিত নাম ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন সন্দীপ।


তিনি বলছিলেন, 'মেসি যখন কলকাতায় এসেছিলেন, তখন হয়তো বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকা জেতেননি। কিন্তু তিনি যে অন্য গ্রহের ফুটবলার, তা ততদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্তিনা। যে দলের কোচ ছিলেন আলেহান্দ্রো সাবেয়া। ২০১১ সালের সফরেও সাবেয়া-ই আর্জেন্তিনা দল নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপের দলগঠন সেই থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।'


ফুটবলার মেসির পরিচিতি জগৎজোড়া। মানুষ মেসি কেমন? নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সন্দীপ বলছেন, 'ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে কোস্তা রিকার বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্দেজ খেলে গিয়েছেন। ওঁর সঙ্গেও প্রচুর সময় কাটিয়েছি। বিশ্বকাপারের খেলার ধরন, আচরণ নিয়ে একটা ধারণা হার্নান্দেজকে দেখে তৈরি হয়েছিল। তবে মেসি কেন আলাদা, তা প্রতি পদক্ষেপে ফুটে ওঠে।' যোগ করছেন, 'বিদেশিদের দেখেছি, বাংলার জল, খাওয়াদাওয়া নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেন। মেসিকে সেসব করতে দেখিনি। তবে আর্জেন্তিনা দলের সঙ্গে নিজস্ব রাঁধুনি ছিলেন। গোটা দলের রান্না তিনিই করতেন।'


সন্দীপ আরও বললেন, 'যুবভারতী স্টেডিয়ামে তখন অ্যাস্ট্রো টার্ফ ছিল। পরে ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময় স্টেডিয়ামের চেহারা পাল্টে যায়। অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরি হয়। কিন্তু মেসি যখন কলকাতায় খেলেছেন, পুরনো যুবভারতী। তখনও সিমেন্টের বেঞ্চে বসে খেলা দেখতে হতো। অ্যাস্ট্রো টার্ফে খেলেছেন মেসি। কিন্তু কোনও বিরক্তি দেখিনি। ওঁরা স্টেডিয়াম সংলগ্ন হোটেলে ছিলেন। তার পাশের মাঠেই প্র্যাক্টিস করেছিলেন। সব জায়গাতেই শান্ত, সংযত মেসি। প্রদর্শনী ম্যাচ খেলছেন মনেই হয়নি। ভীষণ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।'


কলকাতায় মেসি, সঙ্গে পুরো আর্জেন্তিনা দল, আর ভক্তরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, তা আবার হয় নাকি! সন্দীপ বলছেন, 'মেসির অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য বা ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি ছিলই। মেসি প্রায় সকলের আব্দার মিটিয়েছেন হাসিমুখে। এক কিশোরী ছবি তুলতে চেয়েছিল। হোটেলে মেসি তাকে ডেকে নিয়ে ছবি তুলেছিলেন। আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে একটি কার্ডও দিয়েছিলেন। অ্যালবামটি তৈরি হওয়ার পর আমরা সেটি আর্জেন্তিনা ফুটবল সংস্থায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।'


ফুটবলের মহানায়কের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ১১ বছর আগেই দেখেছিল মহানগর। আর্জেন্তিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যে মুহূর্তগুলো ভাসছে বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের মনে।


আরও পড়ুন: কেরিয়ারের সেরা ব়্যাঙ্কিং অক্ষরের, ১৯ ধাপ এগােলেন কুলদীপ