আবীর দত্ত, কলকাতা: "তাড়াতাড়ি শেষ কর, কাস্টমার দাঁড়িয়ে আছে।"
যাঁর উদ্দেশে বলা, তিনি মাথা তুলে দেখলেন ৭-৮ জন দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে। সবার পরনে বেল বটম প্যান্ট। চোখে চশমা। আর চুলের ছাঁট ঠিক দিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona) মতো।
সাংঘাতিক চাপ দোকানে। সাদা জার্সিতে নীল আর সাদা রং মিক্স করে লম্বা লম্বা ডাগ টানা। আর পিছনে ১০ নম্বর লেখা। একের পর এক জার্সি বাজারেই তৈরি হচ্ছে। সময়ে ডেলিভারি না দিতে পারলে অগ্নিশর্মা হবেন মালিক। কিন্তু এত চাপ আগে তো ছিল না? তাহলে হঠাৎ কিসের এত চাহিদা?
চাহিদা হবে না কেন! ফুটবলের মাঝ আকাশে তখন জ্বলজ্বল করছেন দিয়েগো মারাদোনা। আর্জেন্তিনার জার্সি কিনতে হাজির প্রচুর মানুষ। সকলের একটাই চাহিদা। আর্জেন্তিনার জার্সি চাই! বহু বছর আগের সেই অভিজ্ঞতা শনিবার কলকাতার ময়দান মার্কেটে যিনি শোনাচ্ছিলেন, তিনি সেই সময় একটি দোকানে কর্মচারী ছিলেন। আজ তিনি নিজেই দোকানের মালিক। শনিবার বিকেলে তখন ময়দান মার্কেট ভিড়ে ভিড়াক্কার। বিভিন্ন রংয়ের মেলা। দেদার বিকোচ্ছে মেসি-নেমারদের জার্সি। এত রঙের সমাহারে বিধান চন্দ্র মার্কেট যেন এক টুকরো কাতার।
সালটা ১৯৮৬। যেবার বিশ্ব দেখলো বাঁ পায়ের দাপটে কীভাবে ফুটবলের ইতিহাস বদলে যেতে পারে। ফুটবল সাম্রাজ্যে নতুন যুবরাজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল। দিয়েগো মারাদোনা। ফুটবলপ্রেমী মানুষ সেবারই জানল যে, লাতিন আমেরিকায় উরুগুয়ে, ব্রাজিলের পর আরও একটা দেশ আছে যারা বিশ্বকাপ জিতেছে।
সেই বিশ্বকাপ দেখিয়েছিল, কলকাতার বিধান চন্দ্র রায় মার্কেটে ফুটবল উন্মাদনার ঝড়। যেন রাতারাতি বদলাতে থাকে মার্কেট। সেই উন্মাদনা আজও বহাল। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। রবিবার বোধন। তার আগে ফুটবলপ্রেমী মানুষের ভিড় ময়দান মার্কেটে। শুধু ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনা নয়, দেড়শো টাকায় পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য দলের পতাকাও। মাফলারে লেখা নেমার। টুপিতে হ্যারি কেন। স্পাইক জুতোয় মেসি। ধর্মতলায় যেন এক টুকরো কাতার।
যেদিকে তাকানো যায়, শুধু জার্সি আর পতাকা। কোথাও স্পেন, ফ্রান্সের পতাকা, তো কোথাও ঝুলছে ব্রাজিল, আর্জেন্তিনার। মেসি-নেমারের বড় বড় পোস্টারের ছড়াছড়ি। বিশ্বজিৎ চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী বললেন, "মারাদোনার সেই ৮৬ বিশ্বকাপ থেকে জার্সি কেনার চাহিদা বাড়তে শুরু করে। তার আগে এরকম ছিল না। তখন ২৫-৩০ টাকায় মারাদোনার জার্সি বিক্রি হত। খুব ভালো মানের হলে ৫০ টাকা। এখন তো সব ইম্পোর্টেড। আর্জেন্তিনা বা ব্রাজিলের মোটামুটি মানের জার্সির দাম ৬৫০ টাকা। বাকি দেশগুলোর জার্সির দাম ৩০০ বা ৪০০ টাকা। তবে এখনও জার্সি কেনার নিরিখে আর্জেন্তিনা এগিয়ে আছে ব্রাজিলের তুলনায়।"
আরেক ব্যবসায়ী বললেন, "আর্জেন্তিনা একটু এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিলের তুলনায়। বেশিরভাগই মেসির জার্সি খুঁজছে। ব্রাজিলের জার্সির চাহিদা দ্বিতীয় স্থানে। জার্মানি আর পর্তুগাল পিছনে থাকলেও ভালই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের বাজারও ভাল।" পাশ থেকে মজা করে এক ক্রেতা বলে উঠলেন, "সবই মারাদোনার এফেক্ট।"
জার্সিতে ১০ নম্বর আর মেসির নাম লেখাতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি চলছে। মেসি-ম্যাজিক দেখতে আবারও তৈরি শহরের ফুটবলপ্রেমীরা। সকলের প্রার্থনা, ৮৬-র মারাদোনা ম্যাজিক ফেরাতে পারবেন মেসি?
আরও পড়ুন: আজুরিরা নেই, তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দায়িত্বে ইতালির ডানিলে