সন্দীপ সরকার, কলকাতা: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মল, অডিটোরিয়াম বা মাল্টিপ্লেক্স-সিনেমা হল এখন কার্যত রোজনামচার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তাই বলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আস্ত একটা ফুটবল স্টেডিয়াম?


এরকমই চমক দিচ্ছে কাতার (Qatar 2022)। গোটা একটা স্টেডিয়ামকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছে।


২০২২ বিশ্বকাপ সব দিক থেকেই অভিনব। এই প্রথম পশ্চিম এশিয়ায় হচ্ছে ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ। আর কাতারের তাপমাত্রার কথা মাথায় রেখেই এই প্রথম বিশ্বকাপ হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। যাতে দাবদাহ থেকে ফুটবলারদের রক্ষা করা যায়। কিন্তু তার পরেও উদ্যোক্তাদের দুশ্চিন্তায় রেখেছিল তাপমাত্রা। নভেম্বরের সন্ধ্যায় তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে তিরিশের আশেপাশে। ফুটবলারদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই কারণে গোটা স্টেডিয়ামকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছে কাতার।


শুক্রবার ভারতীয় সময় মধ্যরাত পেরিয়ে দোহার লুসেইল স্টেডিয়ামে ব্রাজিল মুখোমুখি হয়েছিল ক্যামেরুনের। সেই ম্যাচ দেখেন গড়িয়াহাটের ফুটবলপ্রেমী প্রকাশ দাস। কাতার থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে তিনি বলছিলেন, 'লুসেইল স্টেডিয়ামে অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল। স্টেডিয়ামটা নতুন তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপের জন্যই। অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থাপনা। পুরো স্টেডিয়ামটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যা আগে কখনও ভাবতেই পারতাম না। বাইরে দাবদাহ। ভেতরে শীতলতা। খেলোয়াড়দের সুবিধা তো হচ্ছেই, অনেক আরামদায়ক পরিস্থিতিতে খেলা দেখছেন দর্শকরাও। প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ ব্রাজিল-ক্যামেরুন ম্যাচ দেখেছেন। গরমে কারও কোনও কষ্টই হয়নি।'


ব্রাজিল ম্যাচ ঘিরে উৎসবের আবহ দেখে মুগ্ধ বাঙালি ফুটবলপ্রেমী। প্রকাশ বলছেন, 'ক্যামেরুনের সঙ্গে ম্যাচ গুরুত্বহীন ছিল। কারণ আগেই নক আউটের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছিল ব্রাজিল। কিন্তু তার পরেও যা উন্মাদনা দেখলাম, অভূতপূর্ব। যে দিকে চোখ যায়, শুধু হলুদ আর হলুদ। গোটা শহর যেন হলুদ এক সমুদ্র। ক্যামেরুনের সমর্থক তো চোখেই পড়ছিল না। প্রায় ৯০ শতাংশ ছিলেন ব্রাজিল ভক্ত। পুরো স্টেডিয়ামই হলুদ হয়ে গিয়েছিল। সবাই ফুটবল উপভোগ করেছেন। আর ব্রাজিলের ম্যাচ মানেই মাঠে বা মাঠের বাইরে কার্নিভাল। মেট্রোয়, বাসে করে হাজার হাজার মানুষ মাঠে আসছেন। রংবেরংয়ের সাজ। পতাকা। উন্মাদনায় সকলে যেন কাঁপছিলেন।'


প্রকাশ যোগ করলেন, 'ব্রাজিলীয়দের মধ্যে একটা অদ্ভূত প্রাণশক্তি রয়েছে। সারাক্ষণ উপভোগ করছেন, ড্রাম বাজাতে বাজাতে আসছেন, স্টেডিয়ামের বাইরে উৎসবের পরিবেশ। সকলে নাচছেন, গান করছেন। ঝলমলে পোশাক। রঙিন মানুষ। ম্যাচ হারার পরেও কেউ মুষড়ে পড়েননি।'


কর্মসূত্রে নাইজিরিয়ায় থাকেন প্রকাশ। সেখান থেকে ফুটবলের টানে দোহায়। বলছিলেন, 'ব্রাজিলীয়দের সকলের ভাষা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু প্রাণবন্ত ছিলেন সকলে। ক্যামেরুন গোল করার পরে ব্রাজিলের সমর্থকেরাও হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এ এক বিরল দৃশ্য। সকলে ফুটবল উপভোগ করেছেন।'


আরও পড়ুন: নক আউটের আগেই ফিট নেমার! প্র্যাক্টিস করতে দেখেই গর্জন গ্যালারিতে