কলকাতা: কলকাতায় আসা ইস্তক ফুটবল নিয়ে উত্তেজনার পারদ কেমন ওঠা-নামা করে তা তিনি টের পেতে শুরু করে দিয়েছেন। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার চাপ যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে আনন্দও। দুটোই উপভোগ করছেন, জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) এফসি-র নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেখর (Nandhakumar Sekar)। লাল-হলুদ সমর্থকের প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ উপভোগ করছেন বলে জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর এই তারকা ফুটবলার। 


আইএসএলের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নন্দকুমার বলেছেন, “দেশের অন্যান্য শহরের চেয়ে কলকাতার ফুটবল সংস্কৃতি একেবারে আলাদা। এখানে লোকে ফুটবলের জন্য পাগল। সবাই খেলা দেখে। তাই এখানকার ক্লাবের ফুটবলারদের ওপর চাপও স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। আমার কাছে এটা একটা বড় সুযোগ। ইস্টবেঙ্গল এক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। এই ক্লাবের অঙ্গ হয়ে উঠতে পেরে আমি গর্বিত। কলকাতার এই ফুটবল সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত এবং খুব খুশিও। খেলোয়াড় হিসেবে সমর্থকদের আবেগ অনুভব করতে পারি। কারণ, সমর্থকেরা এখানে তাদের প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িত”। 


গত জুনে তিন বছরের জন্য নন্দকুমারের সঙ্গে চুক্তি করে লাল-হলুদ শিবির। গত মরশুমে ওড়িশা এফসি-র হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান তামিলনাড়ুর এই ফুটবলার। আইএসএলে ছ’টি গোল করেন ও একটিতে অ্যাসিস্ট করেন তিনি। সুপার কাপেও পাঁচটি ম্যাচে চারটি গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেন তিনি। একটিতে জোড়া গোল ছিল তাঁর। মূলত উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরিয়ে গোল করার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ফুটবলারকে বেছে নেন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত নিজেই, এবং মরশুমের প্রথম ডার্বিতেই তিনি বুঝতে পারেন, ঠিক লোককেই বেছেছেন।


মরশুমের শুরুতেই রাতারাতি নায়কে পরিণত হওয়ার সেই অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে রাখতে চান নন্দকুমার। বলেন, “ওই গোলটা করে দারুন অনুভূতি হয়েছিল। কারণ, গোলটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমাদের তিন পয়েন্ট এনে দেয়। আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল সেটা। ডার্বি ম্যাচটা অসাধারণ হয়েছিল। সে দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পরিবেশ একেবারে অন্যরকম ছিল। সারা গ্যালারি হাজার হাজার সমর্থকে ঠাসা ছিল। চার বছর পর ডার্বি জেতায় সমর্থকেরা সবাই খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সে দিন যা ভালবাসা পেয়েছিলাম, সারা জীবন মনে থাকবে”। 


চেন্নাইয়ে অটোচালকের পুত্র নন্দকুমারের এখনও মনে আছে ফুটবলার হয়ে ওঠার কঠিন লড়াইয়ের কথা। তাঁর সংগ্রামে বাবারও সাহায্য পেয়েছিলেন বলে স্বীকার করে নেন। বলেন, “সংসারে অভাব সত্ত্বেও (বাবা) কখনও বাধা দেননি। বাবা আমার ইচ্ছেই মেনে নিয়েছিলেন। সময় পেলেই খেলার দেখতে চলে আসতেন, উৎসাহ দিতেন। বাবার এই লড়াইটাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করে”।      


২৭ বছর বয়সী এই উইঙ্গার গত মরশুমে ওডিশার ৯৫ শতাংশ ম্যাচেই খেলেন এবং ১৪টি গোলে অবদান রাখেন। নিজে ১১টি গোল করেন তিনি। গত বছর ইন্ডিয়ান সুপার লিগে তিনি ভারতীয় স্কোরারদের তালিকায় ছিলেন তিন নম্বরে। সুপার কাপে ছিলেন এক নম্বর ভারতীয় গোলদাতা। এই টুর্নামেন্টে দলের খেতাব জয়ে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গত আইএসএলে তাঁর দল প্রথমবারের জন্য প্লে অফে ওঠে। তবে প্লে অফের প্রথম ম্যাচে তারা এটিকে মোহনবাগানের কাছে হেরে যায়। নন্দকুমারের এই পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে ভারতীয় দলেও ডাকেন কোচ ইগর স্টিমাচ।


মরশুমের শুরুটা দারুন শুরু করলেও চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কিন্তু সেই সাফল্য বজায় রাখতে পারেননি নন্দকুমার। এ পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচে দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করলেও তিনি নিজে একটিও গোল পাননি। গত মরশুমে ছ’ট গোল করা এই উইঙ্গার যদিও ১৭টি সুযোগ তৈরি করেছেন এবং ১৪টি শট লক্ষ্যে রাখতে পেরেছেন। 


গোল করার জন্য ইস্টবেঙ্গলের সহায়তা দরকার, যে দায়িত্ব পালন করা উচিত মূলত দুই উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিং ও নন্দকুমার শেখরের। কারণ, দুই উইং থেকে মাপা ক্রস যত বেশি হয়, ততই গোলের সম্ভাবনা বাড়ে।  এটা ফুটবলের চিরকালীন নিয়ম। কিন্তু মহেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছেন না নন্দ। এই দু’জনকেই লাল-হলুদ শিবিরের উইঙ্গারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহেশের দিক দিয়ে আক্রমণ হয়েছে। নন্দকুমারের দিক থেকে তুলনায় কম আক্রমণ হয়েছে। 


নন্দকুমার অবশ্য জানিয়েছেন, মহেশের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব বেশ ভাল। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত কয়েক মাসে আমাদের মধ্যে বেশ ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মহেশ খুবই প্রতিভাবান। জুনে জাতীয় শিবিরে মহেশের সঙ্গে যখন আমার প্রথম কথা হয়, তখন বুঝতে পারি, ও কতটা নম্র-ভদ্র স্বভাবের। আমরা ইস্টবেঙ্গল নিয়ে কথা বলা শুরু করি। আমাদের আক্রমণের প্রবণতা এবং অন্যান্য সাধারণ ফুটবলের বিষয় নিয়েও কথাবার্তা হয়। এ ভাবেই ক্রমশ দুজনে ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছি। এখন আমার আর ওর মধ্যে খুব ভাল একটা বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে”। যদিও এই বোঝাপড়ার প্রতিফলন তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে  না। 


দলের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের ওপর আগাধ অস্থা রয়েছে তাঁর। কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতকে নিয়ে নন্দ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কোচ কার্লসের ভক্ত আমি। উনি খুবই নমনীয় এবং মাঠে আমাদের অবাধ স্বাধীনতা দেন। দলের খেলোয়াড়দের স্পষ্ট জানিয়ে দেন উনি কী চাইছেন। ওঁর প্রশিক্ষণে খেলে আমি মুগ্ধ। আমরা এখন আগামী ম্যাচে মনোনিবেশ করেছি এবং এই ম্যাচের জন্য খুবই পরিশ্রম করছি”। 


ছোটবেলায় তামিলনাড়ুর দুই ফুটবলারকে দেখে প্রেরণা পান নন্দ। তাঁদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “চেন্নাই থেকে অতীতে অনেক ফুটবলারই ইস্টবেঙ্গলে খেলতে এসেছেন। ছোটবেলায় কালিয়া কুলোথুঙ্গন ও রামন বিজয়নের ভক্ত ছিলাম আমি। ওদের ম্যাচ দেখেই আমি ফুটবলে আসি”। এই দুই প্রবাদপ্রতীম ফুটবলারের জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার। তবে নন্দর সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। 


আরও পড়ুন: ABP Exclusive: ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাতিল বিমান-ট্রেন, বিজয়ওয়াড়ায় উদ্বেগে বাংলার টিটি খেলোয়াড়েরা


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।