কলকাতা: পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয়ের রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এর মধ্যেই ফের পরবর্তী ম্যাচের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে হল ইস্টবেঙ্গলকে। শনিবারই ফের ঘরের মাঠে তাদের লড়াই জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে (East Bengal vs Jamshepur FC), দু’মাস আগে যাদের ঘরের মাঠে নেমে হেরে আসতে হয়েছে লাল-হলুদ বাহিনীকে। ছন্দে থাকা ইস্টবেঙ্গল সেই হারের বদলা নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নামবে শনিবার।

মঙ্গলবারই সেরা ছয়ে থাকা পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে গিয়েও ৪-২-এ জিতেছে ইস্টবেঙ্গল। ক্লাবের একশো বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে হয়তো এমন জয় অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু তাদের এমন জয় আইএসএলের আসরে এই প্রথম। ২১ মিনিটে চার গোল এই লিগে এর আগে কখনও দেয়নি লাল-হলুদ বাহিনী। এমন পারফরম্যান্সের পর আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে তাদের শিবির। এই অভূতপূর্ব জয়ের রেশ থাকতে থাকতেই জামশেদপুরের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ম্যাচ, তাও আবার ঘরের মাঠে। একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে।

কিন্তু দল নিয়ে সমস্যা এখনও কাটেনি ইস্টবেঙ্গলের। বৃহস্পতিবারই ক্লাব জানিয়ে দিয়েছে ওড়িশা ম্যাচে হাঁটুতে চোট পাওয়া ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল পুরো মরশুমেই আর খেলতে পারবে না। আর এক মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো কবে ফিরবেন, এখনই বলতে পারছেন না কোচ-ফিজিওরা। কার্ড সমস্যায় গত ম্যাচে খেলতে পারেননি জিকসন সিংও। এই ম্যাচে জিকসনকে পাওয়া গেলেও দুই বিদেশিকে পাবেন না কোচ অস্কার ব্রুজোন। তার ওপর মহেশ সিং গত ম্যাচে মাথায় চোট পাওয়ায় এই ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত। এতগুলো খারাপ খবরের মাঝে একটা ভাল খবর গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স চোট সারিয়ে এই ম্যাচে মাঠে ফিরছেন।

গত ম্যাচে অবশ্য এঁদের ছাড়াই দুর্দান্ত জয় পায় ইস্টবেঙ্গল। প্রথম দলের চার খেলোয়াড়কে ছাড়া খেলতে নামা মশাল-বাহিনীর এমন নাটকীয় জয় চলতি লিগের সেরা অঘটনগুলির তালিকায় অবশ্যই থাকবে। মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচের প্রথমার্ধে ৪০ মিনিটের মধ্যে দু’গোল হজম করে নেয় তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে মহেশের জায়গায় পিভি বিষ্ণু রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামার পরেই ইস্টবেঙ্গলের মেজাজ পুরো বদলে যায় এবং মাত্র ২১ মিনিটের মধ্যে চার-চারটি গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলে তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই সেটপিস গোল করে প্রথমে ব্যবধান কমান হিজাজি মাহের। এই গোলের আট মিনিট পরেই সমতা আনেন বিষ্ণু। ৬০ মিনিটের মাথায় পাঞ্জাবের ডিফেন্ডার সুরেশ মিতেইয়ের নিজ গোলে এগিয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী, যে ব্যবধান ৬৭ মিনিটের মাথায় বাড়িয়ে নেন ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা। এই জয়ের পর যদি শনিবার এই দলই শুরু থেকে নামান ব্রুজোন, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দিয়ামান্তাকস পরের দিকে নামতে পারেন।

তবে গত ম্যাচে ঝুঁকি নিয়ে আনোয়ার আলিকে যে ভাবে মাঝমাঠে খেলিয়েছিলেন স্প্যানিশ কোচ, এই ম্যাচে হয়তো তাঁকে সেই ভূমিকায় নাও দেখা যেতে পারে। তার ওপর মহেশের অনিশ্চয়তা জিকসনের প্রয়োজনিয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁকে নামিয়ে ফের আনোয়ারকে নিজের জায়গায় ফেরানো হতে পারে।

অক্টোবরে প্রথম লেগের ম্যাচে এক ঝাঁক গোলের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে না পারার খেসারত দিতে হয় ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে। সে দিন মোট ২৪টি গোলের সুযোগ তৈরি করেও একবারও বিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি লাল-হলুদ ব্রিগেড। বিপক্ষের বক্সে ৩৩ বার বলে পা ছুঁয়েও কিছু করতে পারেনি তারা। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় পেনাল্টি পেয়েও সেই সুযোগও হাতছাড়া করেন সল ক্রেসপো। তুলনায় জামশেদপুর ১১টি সুযোগ পেয়ে তার মধ্যে দু’টি কাজে লাগিয়ে নেয়।

তবে সেই ইস্টবেঙ্গল আর এখনকার ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে তফাৎ অনেক। অস্কার ব্রুজোন দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা অনেক উন্নতি করেছে। টানা সাতটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর চারটির মধ্যে তিনটিতেই জিতেছে। গোলের সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারেও তারা এখন অনেক ভাল জায়গায় রয়েছে। সেরা ছয়ে থাকা পাঞ্জাবকে যখন ঘুরে দাঁড়িয়ে হারাতে পেরেছে, তখন জামশেদপুরের বিরুদ্ধেও তাদের জয়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে।

প্রথম পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয় পাওয়ার পরে টানা তিন ম্যাচে ১৩ গোল খেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জামশেদপুর এফসি। যে কলকাতায় দাপুটে ফুটবল খেলে ইস্পাতনগরীর দল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কার্যত কোণঠাসা হয়ে হারে, সেই কলকাতা থেকেই ফের উত্থান শুরু হয়েছে খালিদ জামিলের দলের। মহমেডানকে ৩-১-এ ও পাঞ্জাব এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে ফের সেরা ছয়ে ফিরে আসে ইস্পাতনগরীর দল। গত দুই ম্যাচে জয়ই তাদের ফের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তাই শনিবার দুই আত্মবিশ্বাসী দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার আশা নিয়ে গ্যালারিতে ভীড় জমাবেন সমর্থকেরা।

মহমেডানের বিরুদ্ধে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে দু-দু’টি গোল করে জামশেদপুর এফসি-কে জয়ের দিকে এগিয়ে দেন যথাক্রমে তরুণ ফরোয়ার্ড মহম্মদ সনন (৫৩ মিনিট) ও হাভিয়ে সিভেরিও (৬১)। ৭৯ মিনিটের মাথায় ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন তাদের নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে দলকে জেতান হাভিয়ে সিভেরিও। প্রথম পাঁচ ম্যাচে যে রকম ফর্মে ছিল তারা, এখন সেই ফর্মে ফিরে এসেছে।

চার গোল করে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন সিভেরিও। তিনটি করে গোল করেছেন ডেভিড মারে ও হাভিয়ে হার্নান্দেজ। জাপানি ফরোয়ার্ড রেই তাচিকাওয়াও দু’টি গোল করেছেন। ক্ষিপ্র, তরুণ উইঙ্গার মহম্মদ সনন একটির বেশি গোল করতে না পারলেও আক্রমণ তৈরি ও গোলের পাস বাড়ানোয় তিনি যথেষ্ট সাহায্য করছেন দলকে।

বেশি গোল দিতে করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী খালিদ জামিলের দল। দশটি ম্যাচে ১৬টি গোল করেছে তারা। সেরা ছয়ে থাকা দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম গোল দিয়েছে তারাই। অথচ ২১ গোল খেয়েছে। গোল হজম করার দিক থেকে কেরল ব্লাস্টার্সের (২৪) পরেই তারা। ইস্টবেঙ্গল কোচ নিশ্চয়ই তাদের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে দল নামাবেন।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: ঘরের মাঠে গোয়ার দাপট অব্যাহত, আট ম্যাচ পরে হার মোহনবাগানের